ইতিহাস ঐতিহ্য পূরাকীর্তির গৌরব গাঁথায় আধুনিক সোনাইমুড়ী ;ভুলুয়ার রাজধানী থেকে বঙ্গবন্ধু ভিলেজ

0
405

ফারুক আল ফয়সাল : প্রাচীন বাংলার সাগর নদী বিধৌত জনপদ ইতিহাস ঐতিহ্যে গৌরবগাঁথা ভাষা কাব্য সাহিত্য সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ প্রাণবন্ত এক আধুনিক উপজেলা সোনাইমুড়ী।উত্তরে কমলাঙ্ক (কুমিল্লা), পূর্বে ত্রিপুর চন্দ্রনাথ পাহাড় (বর্তমান শীতাকুন্ড) দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর মধ্যে প্রাচীন গঙ্গা অববাহিকা নদী বোলবোলা, পশ্চিমে মেঘনার মিলন মেলায় জাগা চরাচর বকদ্বীপ (বর্তমান বগাদিয়া)-ভানুয়াই -আমিশাপাড়ায় দ্বাদশ খ্রীষ্টাব্দের প্রারম্বে ভারত বর্ষে রাষ্ট্র বিপ্লবকালে রাজ্যহারা রাজকুমার বিশ্বম্বর শূর কর্তৃক এখানে ভুলুয়া রাজ্যের গোড়া পত্তন করেন প্রথম এই তখনকার জনমানবহীন চরাভূমিতে। বর্তমান সোনাইমুড়ীর আমিশাপাড়া ছিল ভুলুয়া রাজ্যের রাজধানী আর শিমুলিয়ায় ছিল রাজার রাজ বাড়ি। যার ভগ্নাবশেষ আজ শিমুলিয়ার চৌধুরী বাড়িতে মাটি চাপা পড়ে আছে। সোনাইমুড়ির আমিশাপাড়া বারাহী দেবীর বাড়িতে আজও কালের স্বাক্ষী দেয় বিশ্বম্বর শুরের দেবী বারাহীর প্রস্তরময় মূর্তি।যাহার সাথে ভূলুয়া রাজ্য থেকে ভুলুয়া জেলার ইতিহাস জড়িত।বর্তমানে আমিশাপাড়াতে দেবী বারাহীর নামে বারাহীর দ্বিঘি বারাহীর বাড়ি এই উপজেলার পূরাকীর্তির স্বাক্ষ বহন করে।এই আমিশাপাড়াতে ছিল এ অঞ্চলের প্রথম এবং প্রধান ডাক বিভাগ। বাংলার নবাবী আমলে হিজরী ৯৩৩, বাংলা ৯১৯ সাল, আর ইংরেজী ১৫১২ খ্রীষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত নবাবগঞ্জ মসজিদ, যাহা আজ থেকে ৫১১ বচর পূর্বে সোনাইমুড়ির বজরা ইউনিয়নের মোটবী গ্রামে প্রতিষ্ঠিত। সনাতন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রাচীন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান কালী বাড়ির দেবালয় এবং সোনাইমুড়ী উচ্চবিদ্যালয়ের পাশে প্রাচীন গদাধর কুন্ড এবং গদাধর দ্বিঘি, সোনাইমুড়ী পৌরসভাধীন কৌশল্যর বাগ গ্রামে ১৯৩৬ খ্রীষ্টাব্দে স্থানীয় তালুকদার নন্দকুমার চৌধুরী কর্তৃক নির্মিত বৌদ্ধ ধর্মীয় উপাসনালয় যাহা কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেওয়া নাম বুদ্ধ,ধর্ম,সংঘ সংযোগে ত্রি-রত্ন শরণ বিহার নামাকরণে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১১৫৪ হিজরী,১১৩৯ বাংলা, ১৭৪১ খ্রষ্টাব্দের বজরা শাহী জামে মসজিদটি এই উপজেলায় মোঘল স্থাপত্য শিল্পের নিদর্শন বহন করে চলেছে। দিল্লীর বিখ্যাত শাহী জামে মসজিদের আদলে জমিদার আমান উল্যাহ- ছামান উল্যাহ ভ্রাতৃদ্বয় তাদের শিক্ষাগুরু বাগদাদ থে্কে আগত অম্বরশাহের নামানুসারে শাহী মসজিদটি নির্মান করেন। উপজেলার ৯নং দেওটি ইউনিয়নের পালপাড়া চৌধুরী বাড়িতে রয়েছে পূরাকীর্তির নিদর্শন পালপাড়া চৌধুরী বাড়ি জামে মসজিদ এবং চৌধুরী বাড়ির ঐতিহাসিক আন্ধার মাণিক। উপজেলার বজরা ইউনিয়নে রয়েছে ঐতিহাসিক ছনুয়া হযরত মাওলানা কেরামত আলী জৈনপুরী পীর বাড়ি। উপজেলার জয়াগ বাজারে রয়েছে ঐতিহাসিক গান্ধী আশ্রম ট্রাষ্ট।যাহা ১৯৪৬ সালে ভারত পাকিস্তান জুড়ে সৃষ্ট ধর্মীয় সাম্প্রদায়ীক দাঙ্গা সহিংসতা নিরসনে ” অহিংসা পরম ধর্ম,” “হিন্দু মুসলিম ভাইভাই একহৃদয়ে এক ঠাঁই ” এই শ্লোগানকে ধারণ করে নোয়াখালীতে শান্তি মিশন নিয়ে আসেন মহাত্মাগান্ধী। শান্তি মিশন সফর শেষে সোনাইমুড়ীর জয়াগ নামক স্থানে ব্যারিষ্টার হেমন্ত কুমার ঘোষের বাড়িতে মহাত্মা কয়েক দিন অস্থান করেন। এর পর তিনি ভারত ফিরে গেলে তাঁর একান্ত অনুসারী জমিদার হেমন্ত ঘোষের গান্ধীবাদের অহিংস নীতির প্রতি তাঁর উৎসর্গকৃত জমিদার বাড়ির সমস্ত সম্পত্তির উপর গান্ধীবাদের আরেক একান্ত অনুসারী চারুচন্দ্র চৌধুরী (চারুবাবু) সহ সকল গান্ধী ভক্তকুল এখানে গড়ে তোলেন দলমত ও ধর্মমতের ঊর্ধ্বে একাধারে অহিংসা পরম ধর্মের নীতিতে সামাজিক সেবামূলক সংস্থা গান্ধী আশ্রম ট্রাষ্ট। যে গান্ধী আশ্রম ট্রাষ্টের আমৃত্যু সচিবের দায়ীত্বে ছিলেন আজীবন সংসার ধর্ম বিরাগী মহিয়সী নারী ঝর্ণাধারা চৌধুরাণী। এই উপজেলার পূর্বাঞ্চল দিয়ে ছাতারপাইয়া- কাশিপুর-নাটেশ্বর দিঘির জান হয়ে উত্তরে-দক্ষিণে প্রবাহিত হয়েছে ঐতিহাসিক নোয়াখালী খাল। যে খালের সাথে রয়েছে নোয়াখালী জেলার নামাকরণের সম্পর্ক। উপজেলার অম্বরনগরে রয়েছে জেলার পূরাকীতির নিদর্শন ঐতিাসিক বোলবোলা নদীর ক্ষতচিহ্ন বোলবোলা খাল যাহা অম্বরনগর ইউপি ভবনের পূর্ব পাশ দিয়ে উত্তরে দক্ষিণে প্রবাহিত। এবং ঐতিহাসিক শকুনের বাজার ও বটগাছ( প্রচলীত নাম হোক্কুইন্না বাজার)। ওয়াসেকপুরে রয়েছে প্রাচীন মৃৎ ও কর্মকার শিল্পজীবীদের বসতি ও তাদের প্রতিষ্ঠিত কর্মকার হাট। সোনাইমুড়ীর ৪নং বারগাঁও ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর কল্লাপোড়া বাজারে রয়েছে এক ঐতিহাসিক অশ্বথ ও বটবৃক্ষের একই সাথে মিলিত দ্বি কান্ড ডাল পালা বিশিষ্ট প্রাচীন বৃক্ষ। যার রয়েছে এক পূরাকীর্তির ইতিহাস। এই উপজেলায় রয়েছে একাধীক সমাজ সেবামূলক মানবিক সংগঠন-যার মধ্যে অন্ধকল্যাণ সমিতি অন্যতম। যাহা ১৯৭৮ সালে স্থানীয় সোনাইমুড়ী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইউনুছ মিঞার উদ্যোগে জেলার আলোর ফেরিওয়ালা বীরমুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা ভূইয়া সহ এই অঞ্চলের কিছুসংখ্যক সমাজ হিতৈষী অন্ধজনে আলো দানে গড়ে তোলেন সোনাইমুড়ী অব্ধকল্যাণ সমিতি। যাহা ২০১৬ সালে পরিপূর্ণতা অর্জন করে আজ সোনাইমুড়ী অন্ধকল্যাণ আই হাসপাতাল নামে উপজেলার পাপুয়া গ্রামে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এছাড়া উপজেলার প্রাচীন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি বজরায় অবস্থিত। এখানে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে অনেকগুলো আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সোনাইমুড়ী কলেজ, আমিশাপাড়া খলিলুর রহমান ডিগ্রী কলেজ, জয়াগ কলেজ, বজরা বহুমূখী উচ্চবিদ্যালয়,সোনাইমুড়ী উচ্চ বিদ্যায়, সোনাইমুড়ী হামিদিয়া কামিল মাদ্রাসা, আমিশাপাড়া কৃষক বহুমূখী উচ্চবিদ্যালয়, মাণিক্যানগর মহিলা মাদ্রাসা, ছনগাঁও নাজমুল উলুম মাদ্রাসা । এছাড়াও আমাদের আছে সোনাইমুড়ী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, নবনির্মিত আধুনিক উপজেলা ভবন এবং উপজেলায় একটি মডেল মসজিদ। আছে সোনাইমুড়ী মডেল থানা। ইতিমধ্যে ধীরে ধীরে আধুনিক উন্নয়ন অগ্রযাত্রার দিকে এগিয়ে চলছে শান্তির নিবাস সোনাইমুড়ী উপজেলা ও পৌরসভা। এই উপজেলায় আছেন অনেক কবি সাহিত্যিক সমাজসেবী শিক্ষক শিক্ষানুরাগী মুক্তিযোদ্ধা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। মহান ভাষা আন্দোলন স্বাধীকার থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনে যাঁদের রয়েছে অনন্য অবদান। নোয়াখালী জেলার প্রথম ভাষা শহীদ মিনার (১৯৫৩ সালে) স্থাপন করেন এই উপজেলার অম্বরনগর গ্রামের কৃতি সন্তান ভাষা সৈনিক নূরুলহক চৌধুরী কমরেড মেহেদী, আর তাঁকে যিনি এ বিষয়ে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন তিনি তাঁরই শিক্ষক একই গ্রামের কৃতিসন্তান ভাষা সংগঠক লেখক গবেষক আবদুল করিম মাষ্টার।প্রথমজন ২০১৫ সালে এবং দ্বিতীয়জন ২০০৩ সালে মৃত্যুবরণ করন। ভাষা আন্দোলনের সংগঠক ছিলেন সোনাইমুড়ীর ৮নং সোনাপুরের কৃতি সন্তান কমরেড আবদুল হাদী সবার হাদী ভাই। যিনি ২০০০ সালে মৃত্যুবরণ করেন। একই গ্রামের প্রবীণমুখ ভাষা সংগঠক স্থানীয় দর্জী বাড়ির কৃতিসন্তান তনুমিঞা। যিনি শতবর্ষ বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। ভাষা আন্দোলন সংগঠক ছিলেন উপজেলার উত্তর কাশিপুরের কৃতি সন্তান নদীগর্ভে বিলীন নোয়াখালী পুরান শহরে অবস্থিত বঙ্গবিদ্যালয়ের শিক্ষক মনসুর আহম্মেদ পন্ডিত। যিনি ১৯৬১ সালে মৃত্যুবরণ করেন। ভাষা আন্দোলন কব্য সাহিত্য ক্ষেত্রে অবদান নিরবে রেখে গিয়েছেন প্রবীণ কবি সাহিত্যিক সাংবাদিক আবদুর রশিদ ওয়াসেকপুরী। সোনাইমুড়ী উপজেলার ওয়াসেকপুর গ্রামের কৃতি সন্তান ছিলেন তিনি।তাঁর রচিত রম্য রচনা-“অলিগলি শতপথ” উপন্যাস-প্রেম পরিণয়, কবিতার বই “হেরার পথের পথিক ” সহ একাধারে অনেকগুলো কবিতা প্রবন্ধ গল্প রম্য রচনার লেখক ছিলেন তিনি কবিতা গল্পগাঁথার জন্য তিনি একাধীক পুরস্কার সহ সর্বশেষ আবদুল হামিদ পুরস্কারে ভূষিত হন। এই লেখক ও কবি গত ২০০৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন। একাধারে একজন সাহিত্যিক গবেষক ও সাংবাদিক হিসেবে অবদান রেখেছেন শিল্পকলা একাডেমীর সাবেক মহাপরিচালক সাবেক এমপি সোনাইমুড়ীর বজরা ইউনিয়নের বারাইনগর গ্রামের কৃতি সন্তান “কালের যাত্রা” বইয়ের লেখক সাংবাদিক আহম্মেদ নজীর। সাহিত্যের মানুষ ছিলেন সাবেক এমপি রাজনীতিক মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সোনাইমুড়ীর কালিকাপুর গ্রামের কৃতি সন্তান “সংকলন বিচিত্রা ” বইয়ের লেখক অধ্যাপক মোহাম্মদ হানীফ।তিনি ২০২১ সালে মৃত্যুবরণ করেন। সাহিত্যানুরাগী সজ্জন ছিলেন এইজেলার আরেক কৃতি সন্তান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সোনাইমুড়ীর সাকিরপুরের কৃতি সন্তান সাবেক এমপি ত্যাগের অনন্য উদহারণ মোস্তাফিজুর রহমান। জেলা বিএলএফ এর গোয়েন্দা প্রধান পরবর্তীতে আইনজীবী অ্যড মোস্তাফিজুর রহমান লুতু। সোনাইমুড়ীর বজরা শাকিরপুরের এইকৃতি সন্তান যিনি ২০১৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন। জেলা বিএলএফ এর ডেপুটি কমান্ডার সোনাইমুড়ীর নাটেশ্বর ইউনিয়নের মীর্জানগর গ্রামের কৃতি সন্তান সাহিত্য সজ্জন প্রয়াত মোহাম্মদ উল্যাহ চৌধুরী,সোনাইমুড়ীর রামপুর ভূঁইয়া বাড়ির কৃতি সন্তান, নোয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের প্রথম সভাপতি (১৯৫৩ সাল) সাহিত্য সজ্জন প্রয়াত আলী আহম্মদ মিঞা। সাহিত্যানুরাগী এই মানুষটি ২০১৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন। ত্যাগের আরেক অনন্য চরিত্র ছিলেন সোনাইমুড়ীর বারগাঁও এর কৃতি সন্তান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক প্রয়াত নেতা গোলাম ছারওয়ার। মহান মুক্তিযুদ্ধে সোনাইমুড়ী উপজেলার রয়েছে অনন্য ইতিহাস। সেই ইতিহাস রচনায় যাঁদের মধ্যে অন্যতম তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কর্তৃক নোয়াখালীর বাঘ উপাধী খ্যাত মহান মুক্তিযুদ্ধে জেলা এফ এফ কোম্পানী কমান্ডার আমাদের সোনাইমুড়ীর আনন্দীপুরের গর্বিত কৃতি সন্তান সুবেদার লুৎফর রহমান। যাঁর অকৃত্তিম দেশপ্রেম রণাঙ্গনে সাহসী ভূমিকায় জেলায় হানাদার বাহীনী একাধীক যুদ্ধে পরাজিত হয় এবং ৭ডিসেম্বর নোয়াখালী বিজয়েতিনি এবং তাঁর সহযোদ্ধাদের ছিল অনন্য অবদান। মহান মুক্তিযুূদ্ধে আমাদের সোনাইমুড়ির আরেক কৃতি সন্তান হলো বীর শ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন। একাত্তরের ১০ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীর খুলনার নৌঘাঁটি আক্রমনে শত্রুর বিমানের গোলায় ক্ষতবিক্ষত শরীরে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে কিনারায় উঠতে গিয়ে হানাদার বাহিনীর দোসর স্থানীয় রাজাকারদের হাতে তিনি নির্মমভাবে শহীদ হন। এই মহান বীরের স্মরণে তাঁর গ্রাম সোনাইমুড়ীর বাগপাঁচড়া গ্রামের নাম আজ শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন নগর এবং বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন স্মৃতি জাদুঘর ও পাঠাগার এছাড়া একটি বিদ্যালয়ের নামাকরণ করা হয় এই বীরের নামে। সোনাইমুড়ী উপজেলা পরিষদে এই বীরের নামে একটি মিলনায়তনের নামাকরণ করা হয়। সোনাইমুড়ীর অম্বরনগরের আরেক কৃতি সন্তান শহীদ আমান উল্যাহ ফারুক। যিনি একাত্তরে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ রামপুর-মুছাপুরে শত্রুবাহিনীর হাতে নির্মমভাবে নিহত হন।বর্তমানে এই শহীদের নামে কাজিরহাটে শহীদ আমান উল্যাহ পাবলিক উচ্চবিদ্যালয় এবং রামপুর গ্রামের নাম শহীদ আমান উল্যাহ নগর করা হয়েছে। একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে এই উপজেলার ৫০ অধিক মুক্তিযোদ্ধা রণাঙ্গনে শহীদ হন। এছাড়া পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে গণহত্যায় প্রাণ দিয়েছেন অনেকে। যার মধ্যে সোনাইমুড়ীর আলোক পাড়া নাওতলা, বাট্টা, কাড়ার পাড়ায় এখানে মুক্তিযুদ্ধের স্থানীয় সংগঠক বাবু রাইমোহন সাহা, যোগেন্দ্র চক্রবর্তীসহ একই দিন ১২৬ জন নিরপরাধ মানুষকে গণহত্যা করে, জ্বালিয়ে দেয় ঘরবাড়ি, লুট করে মালামাল। আগ্নি সংযোগ করে সনাতন ধর্মীয়দের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে। সম্প্রতি সোনাইমুড়ীর কৃতি সন্তান সাহিত্য সজ্জন বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়ার উদ্যোগে, মুক্তিযুদ্ধের স্থানীয় সংগঠক শিক্ষক মণিন্দ্র কুমার মজুমদার, সাবেক ছাত্রনেতা ভিপি আবদুল আউয়াল এর সার্বিক সহযোগিতায় গণহত্যার সেসকল স্থান চিহ্নিত করে গণশহীদদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের সরকারীভাবে উদ্যোগ নিয়েছেন সোনাইমুড়ীর মাটি মানুষের নেতা বর্তমান এমপি এইচ এম ইব্রাহীম সাহেব। সোনাইমুড়ীতে সাহিত্য চর্চায় রয়েছে আরো অনেক কবি সাহিত্যিক গবেষক প্রাবন্ধিক উপন্যাসিক নতুন মুখ। বর্তমান সময়ে জাতীয় পর্যায়ের লেখক গবেষক এ এস এম ইউনুছ, কবি মাছুম বিল্যাহ যাদের মধ্যে অন্যতম। আছে সঙ্গীত শিক্ষক, চিত্র ও নৃত্য বাউল শিল্পি, বয়াতী, যাদের মধ্যে কাশিপুরের আবুলকালাম বয়াতীর নাম অন্যতম। এখানে সাহিত্য চর্চায় রয়েছে অনেকগুলো পাঠাগার, যেগুলোর মধ্যে নাটেশ্বর ইউনিয়নে ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ঘোষকামতা গণপাঠাগার, ২০১৩ সালে স্থানীয় মুসলীমগঞ্জ বাজারে প্রতিষ্ঠিত আবদুর রহমান স্মৃতি পাঠাগার এবং বীরমুক্তিযোদ্ধা এমএ হালীম স্মৃতি পাঠাগার, বজরায় প্রতিষ্ঠিত মোস্তাফিজ চেতনা মঞ্চ, সোনাইমুড়ীর অম্বরনগরে প্রতিষ্ঠিত কমরেড মেহেদী স্মৃতি সংসদ উল্লেখযোগ্য। সংগীত নৃত্য নাট্য এককথায় সংস্কৃতিতেও ছিল সোনাইমুড়ীর আগামী অভিমূখি জাগরণ।”তোমারে লেগেছে এতোযে ভালো চাঁদ বুঝি তা জানে” আয়নাতে এই মুখ দেখবে যখন ” স্মরণীয় এই সকল গানের রচয়িতা সোনাইমুড়ীর বজরা ছনুয়ার কৃতি সন্তান গায়ক সুরকার গীতিকার সাংবাদিক কাজী গোলাম মোস্তফা (কেজি মোস্তফা)। সমসাময়ীক কালে সোনাইমুড়ী উপজেলায় পেশাদারী শিল্পি ছাড়াও রয়েছেন অনেক অপেশাদার সংগীত শিল্পি বর্তমান জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্য সোনাইমুড়ী কলেজের সাবেক ভিপি উপজেলার পৌরসভার কৃতি সন্তান ভিপি মাহফুজুর রহমান বাহার যাঁদের মধ্যে অন্যতম। পেশাদারী শিল্পিদের মধ্যে সোনাইমুড়ী পৌরসভাধীন- হৃদয়হরণ বৈষ্ণব, বিজয় কৃষ্ণ সিংহ সাখাওয়াত হোসেন, রুবিনা ইয়াসমিন, ঋতু মজুমদার প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। শিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে সেনাইমুড়ীর নাটেশ্বর ইউনিয়নের কৃতিসন্তান দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি আবুল খায়ের গ্রুপের সত্বাধীকারী নাটেশ্বর আবুল খায়ের উচ্চবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা আবুল খায়ের কোম্পানী, যিনি ১৯৭৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন। দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান সাবেক এমপি সোনাইমুড়ীর ওয়াসেকপুরের কৃতিসন্তান এম এ হাসেম কলেজের প্রতিষ্ঠাতা এমএ হাসেম। যিনি ২০২০ সালে ইন্তেকাল করেন। দেশের কুরিয়ার সার্ভিসের প্রথম প্রতিষ্ঠাতা কন্টিনেন্টাল কুরিয়ার সার্ভিসের সত্বাধীকারী সোনাইমুড়ীর ওয়াসেকপুরের কৃতিসন্তান রুহুল আমিন চিশতি। যিনি ২০১১ সালে মৃত্যুবরণ করেন। সোনাইমুড়ীর কৃতি সন্তান উপজেলায় প্রথম ব্যারিষ্টার এম এ বাকী, যিনি উপজেলার নাটেশ্বর ইউনিয়নের পশ্চিম এনায়েতপুর ছনগাঁও স্বনামধন্য ক্বারী সাহেবের বাড়িতে জন্মগ্রন করেন। সেনাইমুড়ীর এই কৃতি সন্তান ২০১৫ সালে মৃত্যু বরণ করেন। সোনাইমুড়ীর বজরা বারাহিনগরের কৃতি সন্তান ডুয়েটের ভিসি প্রয়াত অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল আজিম, আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম এম এ পাস সেনাইমুড়ীর কৃতিসন্তান অধ্যাপক আবদুল জব্বার উপজেলার রথি গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তিনি ১৯৬৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন। চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ব বিভাগের শিক্ষক সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা ইউনিয়নের বদরপুর গ্রামের আরেক কৃতিসন্তান সাহিত্যের মানুষ অধ্যাপক ড, গাজী সালেহ উদ্দিন। যিনি ২০২১ সালে মৃত্যুবরণ করেন। সোনাইমুড়ী উপজেলার বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক বাবু নীলাময় মজুমদার যিনি সোনাইমুড়ী পৌরসভার সৌচিন্দ্রকুমার দাসের বাড়িতে জন্মগ্রহন করেন এবং তিনি ২০২১ সালে মৃত্যুবরণ করেন। প্রাকৃতিক সম্পদেরও সম্বাবনাময় উপজেলা এই সোনাইমুড়ী। সম্প্রতি এই উপজেলার অম্বরনগর ইউনিয়নের উত্তর অম্বরনগর এবং উত্তর ওয়াসেকপুর গ্রামে পাওয়া গিয়েছে দুটি উল্লেখযোগ্য গ্যাসকূপের সন্ধান। যে গ্যাসকূপ দুটিতে বর্তমানে দেশের তেলগ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানীর তত্বাবাবধানে খনন কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কথিত আছে একসময় এই সোনাইমুড়িতে কালী বাড়িকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে কালিরহাট মামক একটি বাজার। যে বাজারে নারিকেল সুপারি ধান চাষ এবং বিশেষ করে বাংলার সোনালী আঁশ পাটের বাজার বসতো।যেখানে দেশের পাটকল কারখানার মালিকগন এসে রীতিমতো এইবাজার থেকে পাট ক্রয় করতো তাতে লাভ হতো পাট চাষী কৃষকদের। সোনালী আঁশে গড়ে উঠতো সোনালী জীবন।সেসুত্র থেকে এক সময়ের স্থানীয় ইউনিয়নের নামকরণ হয় সোনাইমুড়ী যে ইউনিয়নের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন স্থানীয় সাহারপাড় গ্রামের কৃতি সন্তান ইউনুছ মিঞা । যাহা কালক্রমে ২০০১ সালের ২৬ জানুয়ারী প্রথম প্রশাসনিক থানায় রূপান্তর করার পর ২০০৫ সালে ২৯ জানুয়ারী থানাকে ১০টি ইউনিয়ন যথাক্রমে-১নং জয়াগ, ২নং নদনা, ৩নং চাষীরহাট,৪নং বারগাঁও, ৫ নং অম্বরনগর, ৬নং নাটেশ্বর, ৭নং বজরা, ৮নং সোনাপুর, ৯নং দেওটি, ১০ নং আমিশাপাড়া ও একটি পৌর সভা নিয়ে কার্যকর করা হয় সোনাইমুড়ী উপজেলা হিসেবে। বর্তমানে ১৭০.৪২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনে ২০৯০৮৪৬ জন জনসংখার ১৪১০২৯ জন পুরুষ এবং ১৪৯৮১৭ জন নারী অধিবাসীর আবাস ভূমি এই উপজেলায় শিক্ষার হার ৫৫.৭৭%। অনেকাংশে নিরাপদ রাজনৈতিক সামাজিক অবস্থায় উন্নত অর্থনৈতিক জীবন মানে শাসন প্রশাসনিক অবস্থায় বলা যায় এই উপজেলা একটি আদর্শ উপজেলার কাতারে। বর্তমানে সোনাইমুড়ী উপজেলায় এই আসনের এমপি এ এইচ এম ইব্রাহীম মহোদ্বয়, পৌর-মেয়র ভিপি নূরুল হক সাহেব এর আন্তরিক গণমূখি কর্মকাণ্ড এবং প্রাজ্ঞ নির্বাহী কর্মকর্তা ইছমাইল হোসেন সাহেবের বিচক্ষণ দৃষ্টিভঙ্গিতে এখানে এগিয়ে চলছে ভুলুয়ার রাজধানী থেকে সোনাইমুড়ীর প্রতিটি ইউনিয়নে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখহাসিনার অন্নহীনে অন্ন, বস্ত্রহীনে বস্ত্র, গৃহহীনে গৃহ, শিক্ষাহীনে শিক্ষা, আশ্রয়হীনে আশ্রয়ন প্রকল্প গড়ার উদ্যাগের অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু ভিলেজ প্রতিষ্ঠার কাজ। এলক্ষ্যে উপজেলার প্রতিটি উইনিয়নে গৃহহীনদের আশ্রয়ন প্রকল্প গড়েতোলার পরিকল্পনায় ইতি মধ্যে উপজেলার বাংলাবাজার ছোট কেগনায় সম্পন্ন হয়েছে বঙ্গবন্ধু ভিলেজ এক। উপজেলার বদরপুরে গড়ে তোলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু ভিলেজ দুই। চাষীর হাটে তিন এবং অম্বর নগরে বঙ্গবন্ধু ভিলেজ চার এর কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। তাই বলা যায় শিক্ষা সংস্কৃতি ইতিাস ঐতিহ্যের আবাস ভূমি প্রাচীন ভুলুয়ার রাজধানীথেকে বঙ্গবন্ধু ভিলেজ জেলার পূরাকীর্তির শহর সোনাইমুড়ী অচিরেই একটি আদর্শ উপজেলা হিসেবে স্বীকৃত হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here