ধনিয়ালাপাড়ার বায়তুশ শরফ

স্মৃতিকথা

0
1043

সাইফুল ইসলাম তানভীর

চট্টগ্রামের অধিকাংশ মানুষজন ধার্মিক। আবার অনেকে ধর্মের নামে প্রচন্ড রকমের পীর পূজা, মাজার পূজাও করে। যেগুলোর সাথে ধর্মের অর্থাৎ আমাদের ইসলামের ন্যুনতম সম্পর্ক নেই। যাইহোক। চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানার ধনিয়ালাপাড়ায় যখন আমাদের বাসা ছিল। তখন অধিকাংশ জুমার নামাজ আদায় করতাম বায়তুশ শরফ মসজিদে। বায়তুশ শরফ যে এত বড় প্রতিষ্ঠান তা ছোটবেলা জানতাম না। বায়তুশ শরফ নামে দেশে বিভিন্ন জায়গায় মসজিদ মাদ্রাসা এবং অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেমন ঢাকার ফার্মগেটে বিশাল একটা বায়তুশ শরফ মসজিদ আছে। এই বায়তুশ শরফ এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মরহুম আব্দুর জব্বার সাহেব। যিনি একজন পীর সাহেব। তবে তিনি কোন ভণ্ডামিতে ছিলেন না।  মানুষের দানের টাকা দিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান করেছেন। যে যুগ যুগ ধরে মানব কল্যানের কাজ করবে। ধনিয়ালাপাড়ার বায়তুশ শরফ এ বিশাল কামিল মাদ্রাসা রয়েছে। আরো কয়েকটি কল্যাণমুলক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। শৈশবে সেখানে সাহিত্য চর্চারও পরিবেশ দেখেছি।  ১৯৯২-৯৩ সাল তখন আমি ওখানের কদমতলীর এক স্কুলে পড়তাম। বায়তুশ শরফ দেখে দেখে আমার সেখানের প্রতি দুর্বলতা তৈরি হয়। আমি বাবাকে বললাম আমাকে বায়তুশ শরফ মাদ্রাসায় ভর্তি করে দিন। কিন্তু বাবা সেখানে আমাকে ভর্তি করান নি। বায়তুশ শরফ মাদ্রাসার একজন  সিনিয়র ছাত্র আমাদের দুই ভাইকে বিকেলে আরবী পড়াতে আসতেন। তিনি আমাদের দুই ভাইয়ের সাথে বন্ধুত্বপূর্ন আচরন করতেন। সকালে একজন স্যার আসতেন। বিকেলে সেই হুজুর। রাতে আরেকজন স্যার আসতেন।  বাসায় বাবা পড়া লেখার জন্য খুব চাপ দিতেন। বায়তুশ শরফ  থেকে আসা সেই শিক্ষক আমাকে তখন একটি ফার্সি বাক্য, একটি উর্দু বাক্য শিখিয়েছিলেন যা আজও মুখস্ত আছে ! একদিন তিনি সকাল সময়ে আমাদের বাসায় এসে আমাদের দুই ভাইয়ের সাথে বিদায় দেখা করে যান। তিনি জাপান চলে গিয়েছেন। ধনিয়ালাপাড়ার সেই বাসার অতি নিকটেই ছোট একটা মসজিদ ছিল। সেখানে মাঝে মাঝে যেতাম। বায়তুশ শরফ এর প্রতি আগ্রহ বেশি ছিল। বিকেলে বায়তুশ শরফ ঘুরতে যেতাম। মসজিদের মিনারটি যেন এখনো চোখের সামনে ভাসে। সিরাতুন্নবীতে সেখানে ইসলামী বিশেষ  এক্সিবিশন হত। সম্প্রতি বায়তুশ শরফ এর বর্তমান পীর সাহেব ইন্তেকাল করেছেন। বায়তুশ শরফ  মসজিদের ইমাম সাহেবও ইন্তেকাল করেন। যা প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে দেখতে পাই। এজন্য সেই বায়তুশ শরফ এর কথা বেশ মনে পড়ছে। আমার বাবা একজন ইসলামী স্কলার। মা সকালে ঘন্টার পর ঘন্টা কোরআন তেলোয়াত করতেন। ধর্মীয় সংস্কৃতি ছোট বেলা থেকেই পরিবার থেকে পেয়েছি। বাবা বাসায় ধর্মীয় বিভিন্ন বই রাখতেন । বিভিন্ন মুসলিম দেশের দূতাবাস থেকে বাবার নিকট বই আসত। ইসলামী বিশ্বকোষও ছিল। পাঠ্য বইয়ের বাইরে সেই বইও উল্টাতাম। ভণ্ডামি করতেন না এমন পীরদের বাবা সম্মান করতেন। ১৯৯২ সালে আমাদের বাসায় বাবা ভারত উপমহাদেশের নামকরা এক পীর সাহেবকে আনলেন। অনুষ্ঠান করলেন। ফুরফুরার তৎকালীন পীর সাহেব হযরত আবু বকর আব্দুল কাহহার (র)। তিনি আমাদের ভাই বোনদের দেখলেন। ফু দিলেন। বাসায় সাংবাদিক আসলেন। বাবার ফটোগ্রাফারগণ এবং বাইরের সাংবাদিকগণ ফুরফুরা পির সাহেবের ছবি তুলতে চাইলে তার সাথের লোকজন বাধা দিয়েছিলেন। ছবি তোলা জায়েজ নয়। জানিয়েছিলেন। তার পরও ক্যামেরা সেদিন থেমে থাকেনি। শৈশবের ধর্মীয় সেসব স্মৃতি ভুলে যাবার নয়। 

লেখক: গল্পকার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here