শরীয়তপুর প্রতিনিধি: শরীয়তপুরের নড়িয়ার এক মুক্তিযোদ্ধার বিধবা স্ত্রীকে বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করতে তার উপর অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা যায়, শরীয়তপুর নড়িয়া উপজেলাধীন বিঝারী ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক মোল্লা দীর্ঘদিন ধরে তার শশুরবাড়িতে বসবাস করে আসছিলেন। তার শশুর-শাশুড়ির একমাত্র পুত্র সন্তান ইব্রাহিম সরদার মা-বাবার ভরণ পোষণ দিতেন না। এমন কি তাদের খোঁজখবর পর্যন্ত নিতেন না। তাই অসহায় বৃদ্ধ শশুর-শাশুড়ির পাশে থেকে আব্দুল খালেক ও তার স্ত্রী মাকসুদাই তাদের দেখাশুনার ও ভরন পোষণসহ সমস্ত দায়িত্ব পালন করে। উপার্জনের পুরো অর্থই তখন শশুরের পরিবারের পেছনে ব্যয় করেন এই মুক্তিযোদ্ধা। মৃত্যুর আগে ওই মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী মাকসুদার নামে তার মা-বাবা বসতভিটাসহ কিছু সম্পত্তি লিখে দেয়। তারা নিজেরাও কিছু জায়গা-জমি খরিদ করেন। গত বছরের ১৩ এপ্রিল বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক ইন্তেকাল করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে মুক্তিযোদ্ধার অসহায় বিধবা পত্নী মাকসুদা বেগমকে তার নিজ নামের ও পৈত্রিক ওয়ারিশসুত্রে পাওয়া সম্পতি থেকে উচ্ছেদ করতে ইব্রাহিম ও তার স্ত্রী নানা রকম ফন্দি-ফিকির ও জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নেয়। তারা মাকসুদাকে ভিটা ছাড়া করতে জাল দলিল সম্পাদন করে এবং তার দখলীয় সম্পত্তি থেকে তাকে উচ্ছেদ করতে নানাভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী মাকসুদা বেগম তার বাবা মায়ের সম্পদ রক্ষার্থে, ইব্রাহিমের জাল দলিলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে নিম্ন আদালতে নিজের স্বপক্ষে রায় লাভ করেন। ইব্রাহীম নিম্ন আদালতে হেরে হাইকোর্টে আপীল করে এবং হেরে যাওয়ার আশংকায় মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে নির্যাতন করে ও মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগে জানা যায়। ইব্রাহিম সরদার মাকসুদাকে বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করতে তার দখলি জমির বিভিন্ন দিক দিয়ে দখল করতে থাকে। এর প্রতিবাদ করতে গেলে মাকসুদার উপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন। এভাবেই একটু একটু করে তার বসতভিটা দখলের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দিকে অগ্রসর হতে থাকে ইব্রাহিম সরদার। সে মাকসুদাকে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে নাহলে তাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। নির্যাতনের ধারাবাহিকতায় বিগত ২৬ জুলাই সন্ধ্যা ৬টায় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ইব্রাহিম ও তার স্ত্রী মাকসুদার পরিবারের উপর তাকে প্রাণে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় এবং তাকে কুপিয়ে পিটিয়ে জখম করে। এই হামলায় গুরুতর আহত মাকসুদাকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হামলার ঘটনায় মাকসুদা নিজে বাদী হয়ে নড়িয়া থানায় পরদিন ২৭ জুলাই অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনার প্রায় দেড় মাস অতিবাহিত হলেও থানা পুলিশ এ পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। উপরন্ত ইব্রাহিম এখনো মুক্তিযোদ্ধার বিধবা পত্নীকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি ধমকি দিয়ে বেড়াচ্ছেন। এই ঘটনাটি নিয়ে এলাকার মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের উপর নির্যাতনকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানিয়েছেন।