কোরবানির গোস্ত

কলাম

0
996

সাইফুল ইসলাম তানভীর

ছোটবেলা থেকেই কোরবানীর পূর্বের জুমার আলোচনায় মসজিদের ইমাম খতিবদের মুখ থেকে মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ:) এর নাম এবং তার পুত্রের হজরত ইসমাইল ( আ:) এর নাম শুনে আসছি। কোরবানি কিভাবে এসেছে। কোরবানির সংস্কৃতি। কোরবানির হক। ইত্যাদি নিয়ে বেশ আলোচনা হয়। কোরবানি হল ওয়াজিব। আমরা এশার ওয়াক্তে যে বিজোড় রাকাতের সালাত করি সেটাও ওয়াজিব। ওয়াজিব আরো অনেক রকমের আছে।  যেমন নিজের মায়ের কক্ষে প্রবেশ করতে হলেও পুত্রের মায়ের কাছ থেকে অনুমতি নেয়া ওয়াজিব। আমাদের সমাজে তো একজন পুরুষ আর একজন পরনারীর কক্ষে অনুমতি ছাড়াই প্রবেশ করছে ! সেটার ব্যাপারে অনেকেরই আপত্তি থাকছে না !কোরবানীর সময় হলে বাংলাদেশে প্রায় ৫০ লাখের বেশি গরু জবাই হয়। ছাগল, ভেড়া, মহিষের সংখ্যাও কম থাকেনা। কিন্তু যে উদ্দেশ্য আল্লাহ পশু কোরবানী করতে বলেছেন। সেটা কি মানা হচ্ছে ? আমাদের সমাজে আমরা ক জনে ওয়াজিব মনে করে কোরবানি করছি ? মানুষজনতো খোদ বহু রকমের ফরজই মানেনা। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ সেটাই তো আদায় করছে না। দেশের অধিকাংশ মানুষ। সুদ, ঘুষ, মদ, ব্যাভিচার, যৌতুক, মর্তিপূজা, জুয়া ইত্যাদি আমাদের সমাজে চালু রয়েছে। উল্লেখ্য যে মূর্তিপূজা মুসলিম নামের অনেকেই করছে। আমাদের সমাজে আমরা ক জন এই নিষিদ্ধ কর্ম করছি না ? অভিজাত  অনেকপার্টিতে মদ না খেলে তিরস্কৃত হতে হয় ! জুয়ার নাম ক্যাসিনো, কার্ড ইত্যাদি। সুদকে সুদ সহজে কেউ বলতে চাচ্ছে না। সুদ কি জিনিস তা বোঝার চেষ্টা করছে না। ব্যাভিচারকে ব্যাভিচার বলতে চাচ্ছে না। পদে পদে কোরআনের আইনকে অমান্য করা হয়। অথচ কোরআনের বিধান আমাদের জন্য ফরজ।   পুরুষ দ্বিতীয়, তৃতীয় বিয়ে করলে সমাজ তাদেরকে  চরম ঘৃণা করে। অথচ জেনা, ব্যাভিচারের অফুরন্ত সুযোগ। এইসকল হক ও বাতিলের পার্থক্য যারা বুঝে না তারা কিসের কোরবানি করছে ? !! যার কারনেই তো কোরবানির নামে  একধরনের গোস্ত উৎসব হয় ! আমরা ক জনে হালাল ইনকামের অর্থ দিয়ে পশু কোরবানী করছি ? যারা কোরবানির দিন পশু জবাই করছি তারা কি গরিবকে সঠিক ভাবে গোস্ত দিচ্ছি ? এক্ষেত্রে অধিকাংশজনই অনিয়ম করছি। গরিবকে, প্রতিবেশীকে, আত্মীয়কে গোস্ত সঠিকভাবে দিচ্ছি না। যাও দিচ্ছি তাচ্ছিল্যতার সাথে দিচ্ছি। অসম্মান জানিয়ে দিচ্ছি।  শুধু ফর্মালিটি। পশু জবাই করতে হুজুর খুঁজে ! কেন হুজুর খুঁজবে। নিজেই তো পশু জবাই করা অতি উত্তম। ফ্রিজে কোরবানীর গোস্ত বছর জুড়ে কেন থাকে ? তিন ভাগের এক ভাগ রাখা লাগবে- সেই মসলায় ? !! কেন ? অল্প রাখলে কি গুনাহ হবে ?কোরবানীর দিনেও এখনো দেশের লাখ পরিবারে গোস্ত রান্না হয় না। লাখ লাখ শিশুরা, বয়স্করা গোস্ত খেতে পারেনা। তাদের কে কেউ গোস্ত দেয় না। আমরা অনেকেই লোক দেখানো। ইগো প্রবলেম সমাধানের জন্য পশু জবাই করি ! আত্মীয়রা কি বলবে! মেয়ে বিয়ে দিয়েছি- বেয়াই বাড়ির লোকজন কি বলবে। প্রতিবেশীরা কি বলবে ! ইত্যাদি কারনে আমরা পশু জবাই করছি। তাছাড়া গোস্তও ঘটা করে খাওয়া দরকার ! এসব নিছক গোস্ত উৎসব। এবং সৃষ্টকর্তার সাথে বেয়াদবী।এসব থেকে আমাদের সরে আসা দরকার। দরকার প্রকৃত কোরবানী। যাতে সকল শিশু, বয়স্কদের, এবং সকল মানুষের মুখে হাসি ফুটে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here