শামসুল আরেফিন খান
পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। মানুষে মানুষে অনেক খুনাখুনি হয়েছে। ধর্ম নিয়ে মারামারিতে মানুষ মরেছে সবচেয়ে বেশি। দুটো মহা যুদ্ধে এতো লোক মরেনি যত মানুষ মরেছে ধর্ম যুদ্ধে। রাজনীতিতে ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করতে ব্যক্তি নিধন হয়েছে অত্যন্ত মর্মান্তিকভাবে। রোম সম্রাটকে ঈশ্বর মানতে নারাজ হওয়ায় মান্যবর যীশুকে নির্মমভাবে ক্রুশবিদ্ধ করে জনলোকে টাঙিয়ে রাখা হয় যাতে মানুষ আতঙ্কে শিউরে ওঠে।
ইসলামের প্রথম খলিফাদের অনেকেই আতোতায়ির হতে নির্মমভাবে নিহত হন শুধু ক্ষমতারই জন্যে। ধর্মোন্মাদ শেষ মোগল সম্রাট আলমগীর তার দুই অগ্রজকে হত্যা করেন দিল্লীর সিংহাসনে নির্বিঘ্নে বসার জন্যে। নবাব সিরজুদ্দৌলাকে হত্যা করে তার মরদেহ হাতির পিঠে চাপিয়ে সারা মুর্শিদাবাদ ঘুরানো হয়। রুশ বিপ্লবের অন্যতম অনুঘটক ও রেড আর্মির সংগঠক কমরেড লিওঁ ট্রটস্কিকে ঘাতক পাঠিয়ে মেক্সিকোর পাঠাগারে অধ্যায়নরত অবস্থায় পিছন দিক থেকে মাথায় হাতুড়ি পেটা করে হত্যা করা হয় স্তালিন যুগে। সবচেয়ে নিষ্ঠুরভাবে নির্মম নিরযাতন করে কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের নির্বাচিত প্রথম প্রধানমন্ত্রী , বয়স ৩৫, কবি প্যাট্রিস লুমুম্বাকে , ১৭ জানয়ারি ১৯৬১, ফায়ারিং স্কোয়াডে হাত পা বেঁধে দাড় করিয়ে হত্যা করা হয় সেনাপতি মবুতুর হুকুমে। স্নায়ু যুদ্ধকালীন এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে পরবর্তীকালে অবমুক্ত সি আই এ ডকুমেন্টে বলা হয় যে তদানীন্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং বেলজিয়ামের রাজা লুমুম্বার মৃত্যু দণ্ডাদেশে অনুস্বাক্ষর করেন। ইন্দোনেশিয়ার মুক্তিসংগ্রামের হিরো ডক্টর সুকার্ণোকে নির্জন অন্ধকার কারা প্রকোষ্ঠে আটক রেখে নির্মম মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়্। জেনারেল সুহার্তা কম্যুনিস্ট বিদ্রোহের নাটক সাজিয়ে সমাজতন্ত্র ঘেঁষা দশ লক্ষ মানুষ খুন করেন এবং জাতির জনক ও নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে এভাবে হত্যা করে দুই যুগের বেশি ক্ষমতায় টিকে অবাধ লুটপাট করার সুযোগ লাভ করেন। ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩ , চিলির নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডা. সালভেদার আলেন্দেকে তাঁর প্রাসাদে বিমান হামলা চালিয়ে ঠান্ডা মাথfয় খুন করেন ১৮ দিন আগে নিয়োগপ্রাপ্ত সেনা প্রধান জেনারেল আগস্টো পিনোশে উগগার্টে। বিগত ১৯ শতকে যত গুলো রাজনৈতিক খুন হয়েছে সবই হয়েছে ঠাণ্ডা মাথায়। গড ফাদার স্বয়ং মৃত্যুদণ্ডে স্বাক্ষর বা প্রতি স্বাক্ষর করেছে। জল্লাদ সেটা কারযকর করেছে মাত্র। অধিকাংশ সময় হুকুমের আসামী দৃশ্যমান হয়নি।। খোদ যুক্তরাষ্ট্রে , সেই ১৮৬৫ সালের ৫ এপ্রিল, ক্রীত দাশ মুক্তির হিরো প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন থিয়েটার হলে আতোতায়ির গুলিতে খুন হলেন । কালো মানুষের সমান অধিকারের দাবিদার মার্টিন লুথার কিং জুনিয়ার ৪জুলাই ১৯৬৮, খুন হলেন আতোতায়ির গুলিতে। কোন ঘাতকই ধরা পড়লো না। কিন্তু তিনি এফবি আই’র সন্দেহভাজন ছিলেন সেটা সবাই জানে।
৬৩ সালে টেক্সাস রাজ্যের ডালাস নগরের প্রকাশ্য রাজপথে দিনের আলোতে প্রেসিডেন্ট জনএফ কেনেডি,সস্ত্রীক খোলা গাড়িতে ভ্রমনকালে, আতোতায়ির গুলিতে একাই নিহত হলেন। সাথে সাথে ভাইস প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন বিমান ভ্রমনরত অবস্থায় শপথ নিয়ে প্রেসিডেন্ট হলেন। রশিয়ার সাথে কিউবায় পারমানবিক অস্ত্র মোতায়েন নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল। কিন্তু তিনি বর্ণবাদকে ‘না’ বলেছিলেন। এটাই ছিল দৃশ্যতঃ তার প্রধান অপরাধ। ২৪ বছর বয়সী তথাকথিত কম্যুনিস্ট চর তরুণ লী হার্ভে ওসওয়াল্ডকে কেনেডি হত্যার দায়ে বন্দী করা হ’ল। কিন্তু দুদিন পরে জেলে নেয়ার পথে জ্যাক রুবি নামে একজন স্থানীয় পাব মালিক তাকে পুলিশ হেফাজতে থাকতেই গুলিকরে হত্যা করলো । কেজিবির চক্রান্ত এবং সামরিক ষড়যন্ত্র প্রভৃতি নানা ধরণের বিভ্রান্তিকর গুজব ছড়িয়ে পড়লো। প্রধান বিচারপতি আর্ল ওয়ারেণকে প্রধান করে গঠিত প্রেসিডেনশিয়াল কমিশন কয়েকদিনের মধ্যে রায় দিল ,অসোয়াল্ড একাই দোষী ছিলেন। আর জ্যাক রুবি সম্পর্কে বলা হ’ল সে ছিল পাগল । সেও খালাস পেলো। কাজেই মামলা ঢিসমিশ। খোদ যুক্তারাষ্ট্রে এমন ড্রামা করে অলক্ষে বিধাতা আসল খুনিকে আড়াল করা হ’ল ।
এশিয়া ভূখণ্ডে রহস্য জনকভাবে খুন হলেন শ্রীলঙ্কার জন প্রিয় প্রধানমন্ত্রী জয় বর্ধন। প্রতি শনিবার প্রধানমন্ত্রীর গণ সাক্ষাতের দিন ছিল । এমনি এক শনিবারে একজন গন্যমান্য বৌদ্ধ ভিক্ষু আসলেন তার সাথে দেখা করতে। দুজনেই নমিত হলেন ভক্তি প্রনামে। কিন্তু ভিক্ষু মাথা তুললেন গেরুয়া বসনের ভিতর থেকে পিস্তল হাতে নিয়ে । ঘাতকের সাথে মুখোমুখি দাড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রাণ হারালেন। এতসব রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের কোনটাতেই বেদনা ও নিষ্ঠুরতার মাত্রা কিছু কম ছিল সে কথা বলা যাবে না।
কিন্তু ১৫ আগস্ট ৭৫ ভোর রাতে নিস্তব্ধ বাংলার নিদ্রাভঙ্গ করে পাখির কুজন থামিয়ে প্রথম আলো অরোরার গতিরোধ করে যে মর্মান্তিক ও বর্বরোচিত হত্যাকান্ড ঘটানো হলো ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর গোটা পরিবারকে নিধন করতে, তার কোন নজির মেলে না স্মরণকালের ইতিহাসে। যতগুলো রাজনৈতিক খুন আমার পর্যালোচনায় এসেছে তার কোনটাতেই ভিকটিমের স্ত্রী স্বজন ও সন্তানদের উপর প্রাণঘাতী হামলা চালানো হয়নি। খুনিদের বিবেচনায় ‘সমাজতন্ত্র ঘেঁষা ’ শেখ মুজিবের দোষ যাই হোক, বঙ্গমাতা ফজিলুতননেসা মুজিবেকে কেন হত্যা করা হ’ল? বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল , শেখ জামাল ও তাদের সদ্য বিবাহিতা পত্নীদের কী অপরাধ ছিল? তাদের কেন হত্যা করা হ’ল? শেখ নাসের , শেখ মনি ও আব্দুর রব সেরনিয়াবতকে কেন বধ করা হ’ল? এক রাতের সেই শণিতপ্রবাহে ২৫ মার্চ রাতের মত বুড়িগঙ্গার জরধারা আবার রক্তে লাল হয়ে গেলো। কেন ? হে বধির মূক বিধি তুমি কথা বলো।
সব চেয়ে বর্বরোচিত নিষ্ঠঠুর ও হৃদয়বিদারক হত্যার শিকার হ’ল ১০ বছরের নির্দোষ নিষ্পাপ শিশু শেখ রাসেল। সে চেয়েছিল তার মার আঁচলে মুখ লুকিয়ে দৃশ্যমান ভয়াবহ আতঙ্ক থেকে বাঁচতে। মায়ের কোলে আশ্রয় নিতে । ঘাতকরা বললো ,চলো তোমাকে মার কাছে নিয়ে যাই । আশায় উজ্জল হয়ে ওঠা নিষ্পাপ চোখ দুটো দেখেও কারবালার সীমারের দোসর ঘাতকদের হৃদয়হীন পাষাণ বুকে এক বিন্দু মমতার উদ্রেক হ’ল না। তার পরেই সেই নিরাপরাধ শিশূর কোমল বুকটা তারা ঝাঁঝরা করে দিল পাকিস্তানি হানাদারদের পরিত্যক্ত(?) বুলেটবৃষ্টি ঘটিয়ে।
‘ক্ষান্ত হও, শান্ত হও , কী চাই বলো। আমি যদি ভুল করে থাকি ,অন্যায় করে থাকি এই নাও আমার দুটো হাত। হাতকড়া পরাও ।বন্দৗ কর আমাকে । বিচার কর আমার। ছেড়ে দাও আমার নিরাপরাধ সন্তানদের। নিস্পাপ নারী শিশূকে মের না। করজোড়ে মিনতি করছি। কিন্তু হায়! সকলি গরল ভেল । সবই অরণ্যে রোদন হ’ল। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বুলেটে জর্জরিত রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে রইলো তাঁর ইতিহাস প্রসিদ্ধ বাসভবনের সিড়ির উপর।যার প্রতি ধুলিকনায় লেখা আছে ৩০ লাখ শহীদের নাম। দু লাখ নিরযাতীত বঙ্গললনার পিতৃপরিচয়। এতবড় দল ।এত তার নেতা কর্মী। এত লোকের গায়ে মুজিব কোট। এত এত গর্বিত উদ্ধত মুজিব সেনা ! হায় , কেউ সে লাশের দেখভাল করলো না। পিতার লাশ আগলে রাখলো না তাঁর কোন সন্তান। রাস্তা থেকে তুলে এনে জাতির জনক যাদেরকে রাষ্ট্রের উচ্চাসনে বসিয়েছিলেন , প্রেসিডেন্ট , স্পীকার মন্ত্রী মেমবার বানিয়েছিলেন তারা সুড় সুড় করে যেয়ে খুনি মুশতাকের কেবিনেট মিনিস্টার হিসাবে শপথ নিয়ে পতাকা শোভিত গাড়ি চড়ে মন্ত্রী পাড়ার বাসায় গিয়ে উঠলেন গদো গদো হয়ে।
বিউগেল বাজলো না। গার্ড অফ অনার হ’ল না। ফিদেল ক্যাস্ট্রোর দৃষ্টিতে হিমালয়ের মত অনধিগম্য অনতিক্রম্য মহান ব্যক্তি , সাদ্দাম হোসেনের মূল্যায়নে বিশ্বে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ দন্দ্বের প্রখম শহীদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের লাশ ৫৭০ সাবান দিয়ে গোসল করিয়ে গরীবের বসন রিলিফের শাড়ী দিয়ে কাফন বানিয়ে টঙ্গীপাড়ায় দাফন করা হ’ল। যাঁরা তাকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করেছিল, যারা নাকি স্বাধীনতার পতাকাও উত্তোলন করেছিল, যারা বলে, তারা নাকি স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেছিল, তারা সবাই গেলো কোথায় ? যারা ছিল তথাকখিত নিইক্লয়াসভুক্ত মন্ত্রনাদাতা তারা সবাই বাতাসে মিলিয়ে গেলো! কী বিস্ময়! তবে যারা তাঁকে প্রাণ দিয়ে ভারোবাসতো সেই অকুতোভয মুক্তিযোদ্ধাদের একাংশ খুনিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রামে নামার জন্যে আবার অস্ত্র তুলে নিলো। কিন্তু মুজিব কোটধারী তাবড় তাবড় নেতারা ডীপ আন্ডার গ্রাউন্ড থেকে মাথা বের করে উঁকিঝুকি পর্যন্ত দিলেন না। রক্ষী বাহিনীপ্রধান ব্রিগেডিয়ার নুরুজ্জামান ছিল দেশের বাইরে । কিন্তু যার উপর রক্ষীদের রাজনৈতিক কমান্ড ন্যস্ত ছিল তাকে খুজে পেলো না ডেপুটি ডাইরেক্টর মেজর সারোয়ার। জীবন্মৃত সেনাপ্রধান জেনারেল শফিউল্লাহ থেকেও নেই। তবু বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবসেনারা এগিয়ে যেতে চাইলেন। ভারতীয় দূতের কপাট অনর্গল হ’লনা। বর্ডারের দরজা খুললো না। অনেকে বান্দরবন বা বা সুন্দরবনে গিয়েও, চে’র প্রশিক্ষণ না থাকায় ,সুবিধা করতে পারলেন না। বামপন্থী বন্ধুরা বঙ্গবন্ধুকে সমাজতন্ত্রের কাটাভরা বাবলা গাছে উঠিয়ে দিয়ে মই সরিয়ে নিলেন এবং কেটে পড়লেন। তাদের একজন বিশ্বস্ত রাণার ক্রেমলিনে ছুটলেন মুশতাকের জন্যে শুভেচ্ছা কুড়াতে। আর একজন আজীবন খদ্দর পরা কম্যুনিস্ট সাংবাদিক মুশতাকের কেবিনেটে প্রতিমন্ত্রীর শপথ নিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আব্দুল মান্নান, একাত্তরের জয়বাংলা পত্রিকার সাবেক প্রকাশক যিনি তিনি বিশ্বাসঘাতক মুশতাকের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হলেন। ১৯৮৭ নভেম্বর, ঢাকা জেলখানায় তাকে পেয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ১৫ আগস্ট ’৭৫ যথেষ্ট পরিমান পুলিশ কেন মোতায়েন ছিল না? ছাদে ও বাড়ির চার পাশে বিডিআর এর কামান পাহারা কেন ছিল না বালির বস্তার পিছনে প্রথাসিদ্ধভাবে? তিনি সুড় সুড় করে পালালেন। জেলারকে বলে নিজের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করলেন হয়ত কোন নির্জন সেলে লুকিয়ে। কী বিচিত্র দেশ স্যেলুকাস!
কী নিষ্ঠুর! কী নির্মম ! কী পাশবিক! কী মানবেতর !সেই হত্যাকান্ড !ভাবতে গা শিউরে ওঠে। পাপড়ি ভিজে যায়।পশু না হয়ে যদি সে কেবল মানুষ হয়, সে যে দলেরই হোক না কেন , যে মতেরই হোক না কেন , সে যদি কারও বাবা হয় কি মা হয়, কিংবা ভাই অথবা বোন হয় , সামান্যতম মমতাও যদি থাকে তার বুকে, তা হলে সে বুক গুমরে উঠবেই বেদনায়। উথলে উঠবে ব্যাথার প্লাবন। চোখে নামবেই শ্রাবনের ধারা। জালিয়ান অয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ নিয়েছিল পাঞ্জাবের শহীদে আজম উধাম সিঙ বইএর পাতা কেটে তার ভিতর পিস্তল গুজে , ব্রিটেনের মাটিতে যেয়ে ঘাতক ব্রিটিশ সেনাপতিকে খুন করেছিল। তার মত করে প্রতিশোধ নিতে পারুক না পারুক অন্ততঃ বিচার চাইবে। অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে চাইবে। কিন্তু সে সুযোগটুকুও পায়নি বাংলার মানুষ। সেই দুর্দিনে প্রবাসী মুজিব তনয়া শেখ হাসিনার অনুরোধে বিদেশ থেকে মানবাধিকার কর্মী নেতা ও মনীষীরা আসতে চাইলেন মুজিব হত্যা তদন্তের জন্যে। কিন্তু জবরদস্তি ক্ষমতা হরণকারী মুশতাক ও অবৈধ সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান এবং তার সুগ্রীব দোসর পাকিস্তানের শিখন্ডি শাহ আজিজুর রহমান তাঁদের জন্য বাংলাদেশে প্রবেশের কপাট অর্গলাবদ্ধ করে দিলো । ইমডেমনিটি আইন পাশ করে বিচারের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দিলো। লীহার্ভে ওসওয়াল্ডকে কৌশলে হত্যা করে জ্যাক রুবিকে পাগল সাজিয়ে কেনেডির আসল হত্যাকারীকে যেমন করে ইতিহাসের চোখ থেকে আড়াল করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত খুনি ও খুনের হুকুমদাতাদেরও তেমন করে আড়াল করা হ’ল মহাকালের সূর্যচোখ থেকে । সেনা বাহিনীর একদল কথিত বিদ্রোহী , যারা মোহাম্মদি বেগের মত জল্লাদ ছিল সন্হে নেই, তারা মাথা বাড়িয়ে বললো আমরাই খুন করেছি রাষ্ট্রপতি মুজিবকে। তাদেরকে আত্মস্বীকৃত খুনি নাম দিয়ে নতুন যাত্রা পালা শুরু হ’ল। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরিদের মত রাঘব বোয়ালদের নিয়ে কেউ আর মাথা ঘামালো না। কর্ণেল(অবঃ) ওসমানি, যিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি ছিলেন আবশ্যই এবং কখনোই সর্বাধিনায়ক ছিলেন না। তিনি মুশতাক- জিয়ার সামরিক উপদেষ্টা হয়ে কলকাঠি নাড়লেন। সেটাও কোন অপরাধ বলে বিবেচনা করলো না “আদম তত্বের” অন্ধ অনুসারীরা। বঙ্গবন্ধুর সহজ সরল স্নেহ ভালোবাসায় আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়া সাংবাদিকরত্ন তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, যাকে সরল বিশ্বাসে তথ্য প্রতিমন্ত্রী করেছিলেন মহানুভব মুজিব সেও মেজর ডালিমের মত আর একজন মিডিয়া কুতুব হয়ে রেডিও টেলিভিশন কলঙ্কিত করলো।রেডিও , টিবি ও সংবাদপত্র থেকে মুজিবভক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের উৎখাত করে আগেভাগেই সেসব শূন্যস্থানে রাজাকারদের পুনঃস্থাপন করেছিল। সেই কুলাঙ্গার দৈনিক ইত্তেফাকে সিরাজুদ্দিন হোসেনের স্নেহে বিকশিত হযেছিল। সেখানে সে ছিল আমার জুনিয়ার সাংবাদিক। আমিই হলাম তার প্রথম শিকার। আমি তখন বঙ্গবন্ধু কর্তৃক নিয়োজিত হয়ে দৈনিক বাংলা ও সাপ্তাহিক বিচিত্রার সি,ই,ও তথা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি । আমাকে উৎখাত করেই সে তার মিডিয়া নিষ্কন্টক করার কাজ শুরু করেছিল। টিভির প্রডাকশান ম্যানেজার মনিরুল আলম ১৫ আগস্ট খুন হলেন। সেই নিধন প্রক্রিয়ায়। তিনি ১৯৫৬ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রইউনিয়নের দফতর সম্পাদক নিযুক্ত হয়েছিলেন।তার অন্য একজন সাথীকৈও হত্যা করা হয় বর্বরোচিতভাবে।স্বাধীন বাংলা বেতন কেন্দ্রের উত্তরসূরি ঢাকা বেতারকেন্দ্রের নাম ‘রেডিও বাংলাদেশ’ রাখা হ’ল । সবই সেই কুঙাঙ্গারের অবদান।
সংবিধান মোতাবেক স্পীকার আব্দুল মালেক উকিলেরই ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হওয়ার কথা। যশোরের জিওসি মীর শওকত আলী কী সত্যি বলেছিলেন , ‘স্যার আমার ট্রুপস মুভ করছে। কুমিল্লা থেকে খালেদ মোশারররফ মুভ করছে। চট্রগ্রাম ডিভ্ ও ৯ম ডিভ্ যথা সময় পৌছে যাবে। আপনি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি পদের দায়িত্ব নেয়ার জন্যে প্রস্তুত হোন’। কিন্তু মালেক উকিল নাকি বলেছিলেন, “আমার ঘাড়ে কল্লা মাত্র একটাই। আমি সেটাই বাচাতে চাই । আর সব গোল্লায় যাক”। এ গল্পের সত্য মিথ্যা আমার জানা নেই।তবে মোহাম্মদ উল্লাহ সাহেককে যখন বঙ্গবন্ধু প্রেসিডেন্ট বানালেন তখন মালেক উকিল সাহেব প্রেসিডেন্ট হওয়ার খায়েশ ব্যক্ত করেছিলেন। তাঁকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী থেকে স্পীকার বানানো হয়েছিল। আবার বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরি যখন প্রেসিডেন্ট হলেন সে যাত্রায় জেনারেল এম এ জি ওসমানি রাস্ট্রপ্রধানের পদ দাবি করলেন। কিন্তু তাঁর জেনারেল পদমরযাদাটাই আন্তর্জাতিক বিধানমতে বৈধ ছিল না । অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল কখনও জেনারেল হতে পারেনা । কারণ একজন জেনারেলের কম করে তিনটা কোর কমান্ড করার অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। তাই তার রণসৌরযের প্রতীক রণাঙ্গনের পদমরযাদা কেটে ছেটে তাঁর পাকাপোক্ত কর্ণেল (অবঃ) মরযাদায়য় তাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হ’ল। তিনি ক্ষুন্ন হলেন। তাঁকে বেসামরিক বিমান চলাচল দপতরের মন্ত্রী বানানো হ’ল। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও তাঁর পদ পদবী নিয়ে চাপান উতোর ছিল। তিনি নিজেকে জেনারেল দাবি করে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমান্ডের প্রধান হওয়ার খায়েশ ব্যাক্ত করেছিলেন।সেটা বাস্তবতায় খাপ না খাওয়ায় তিনি গোসা করেন। তাকে নাচাচ্ছিলেন জিয়াউর রহমান।
এন্থনি মাসকারাণহাস লিখেছেন, ১৫ আগস্ট ভোরে ব্রিগডিয়ার শাফায়েত জামিল এসে রিপোর্ট করলেন, প্রেসিডেন্ট মুজিব নিহত হয়েছেন। জিয়া দাড়ি কামাচ্ছিলেন। তিনি ব্লেড চালানো অব্যাহত রেখে বললেন, “সো হোয়াট? ভাইস-প্রেসিডেন্ট ইজ দেয়ার”। সংবিধান মতে স্পীকারই ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্টের সমতূল্য। এর সাথে জিওসি মীর শওকতের উক্তি মেলালে একটা নীলনক্শা ফুটে ওঠে। তবে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পনা পালটাতে হতে পারে বিধায় সব অপারেশনেই একটা “প্লান বি” রাখা হয়। মুজিব হত্যার বাস্তবতায় সাংবিধানিক উত্তরণ ঘটালে স্পীকারের গ্রহনযোগ্যতা শতভাগ অকাট্য ছিল। কিন্তু তাতে মুশতাক অনেক তলায় পড়ে যেতেন। শফিউল্লাহ পদ হারাতেন। জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান হয়ে ডান্ডা ঘুরাতেন। “দোদেল বান্দা কলমা চোর না পায় শ্মশান না পায় গোর।” শফিউল্লার তাই হ’ল। নতুন ছকে মুশতাক প্রেসিডেন্ট ও জিয়া নাটের গুরু সেনা প্রধান রূপে দৃশ্যপটে আভির্ভুত হলেন। চার জাতীয় নেতাকে জেল খানায় হত্যা করে মুশতাক , জিয়া এবং অলক্ষে বিধাতা তাদের গড ফাদার একটা বড় ঝুকি থেকে বাঁচলো। কর্ণেল তাহেরকে সরিযে দিয়ে ‘নিউক্লিয়াস’ বেচে গেলো। মালেক উকিল নিজের একখান মাত্র কল্লা বাঁচিয়ে লন্ডন গেলেন। যাওয়ার পথে হিথ্রো বিমান বন্দরে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে সেই নরাধম যে হৃদয়হীন নিষ্ঠূর উক্তি করেন তা অমার্জনীয়।১৫ আগস্ট হত্যাকান্ড নিয়ে এমন অনেক গল্পের ডালপালা গজিয়েছে। আমি কোনটাতেই আস্থা রাখতে চাইনা। আমি শুধু জানি এবং বিশ্বাস করি যে, প্রয়াত মুজিব প্রাণিত মুজিব থেকে অনেক বেশি প্রমত্ত। প্রবল ও অলঙ্ঘনীয়, অনধিগম্য, অনতিক্রম্য, অদম্য । অরুণ রবির মত অবিনাশি শ্বাশ্বত চিরন্তন সত্বা। যাকে ধ্যান জ্ঞান করে মুক্তির পথে অবিরাম এগিয়ে যাবে বিশ্ব বাঙালি গাঙেয় বদ্বীপের বাঙালির পাশে হেটে। অন্য কিছু জানিনা। বুঝি না ও বিশ্বাস করিনা।একটা কথা ভুলে যাওয়ার কোন উপায় নেই যে , পচাত্তরে খুনিরা যুদ্ধবিরতি ও ১৬ ডিসেম্বর ৭১ প্রকাশ্য আত্ম সমর্পনের শর্ত ভেঙে ৭১ এর স্থগিত মুক্তিযুদ্ধের স্তিমিত আগুনকে উশকে দিয়েছে। ২১ আগস্ট ২০০৪ যুদ্ধাস্ত্র আর্জেস গ্রেনেড হামলায় শেখ হাসিনার শারিরীক বিনাশের ব্যর্থ চেষ্টা ও অদম্য নারী নেত্রী আইভি রহমানসহ ২০ জনকে হত্যা এবং শত শত মুজিব সেনাকে আহত করে সেই যুদ্ধ অব্যাহত রেখেছে। এখন যুদ্ধ শেষ হবে একপক্ষ আত্মসমর্পন করলে বা নির্মূল হলে। সমর শাস্ত্রে তাই লেখা আছে।
প্রিয় পাঠক , বক্ষমান নিবন্ধের অনভিপ্রেত স্ফীত কলেবর সত্বেও, মার্জনা চেয়ে, আমার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে অন্য একটা ছোট গল্প এর সাথে যোগ করতে চাই। ১৯৭২ সালের কথা। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরি তখনও রাষ্ট্রপতির আসনে অধিষ্ঠিত রয়েছেন । এমনি একদিন খুব ভোরে রংপুর সার্কেট হাউজে আমার কপাটে টোকা শুনে দরজা খুলে যাকে দেখে চমকে উঠলাম , লুঙ্গি পরা গেঞ্জী গায়, তিনি খন্দকার মুশতাক আহমদ। পানি সম্পদ মন্ত্রী। তাঁর আগমন বার্তা আমার জানা ছিলনা।বললাম, ‘ ভিতরে আসেন স্যার, বলুন স্যার আমি কী করতে পারি ’। তিনি অসঙ্কোচে বললেন, “একটা ব্লেড যদি থাকে দিতে পারেন”। একটা নতুন ব্লেড তাঁকে দিতে পেরে আমি স্বস্তি পেলাম। সেদিন দুপুর ১২টায় এলেন রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। পূর্তমন্ত্রী মতিউর রহমান তাঁদের নিয়ে গেলেন হারাগাছা।সেখানে ছিলেন রহিম ভরসা ও করিম ভরসা, দুই ভাই । তারাা খুব প্রভাবশালী ও ধনী তামাক ব্যবসায়ী। মেহেমানদের তাঁরাই আপ্যায়ন করলেন। ডিসি রুহুল আমিন মজুমদার আগেই পৌছে গিয়েছিলেন।সেদিন বিকালেই দুই অতিথি চলে গেলেন। রাষ্ট্রপতি ও পানিসম্পদ মন্ত্রীর এই অনির্ধারিত সফরের কথা জানিয়ে আমি কোন প্রেস রিলিজ দিলাম না। কারন সেভাবেই আমি নির্দেশিত হয়েছিলাম। আমাকে তারা সফরসঙ্গীও করেননি। সেই গোপন বৈঠক পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রেক্ষাপট তৈরিতে কোন ভুমিকা রেখেছিল কিনা তা আমার জানা নেই। তবে পূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে রংপুরের মন্ত্রী মতিউর রহমানকে অপেক্ষাকৃত ছোট কোঅপারেটিভ দপ্তরের মন্ত্রী বানানো হ’ল । আমাকে পুর্ত মন্ত্রণালয় থেকে প্রত্যাহার করে সরকারি কাগজ দৈনিক বাংলা ও সাপ্তাহিক বিচিত্রার সি-ই-ও বা প্রধান নির্বাহী করা হ’ল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার আপত্তি শুনলেন না।
কিছুদিনের মধ্যে।পানি সম্পদ মন্ত্রীকে খর্ব করে আবদুর রব সারনিয়াবতকে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হ’ল। তিনি বঙ্গবন্ধুর তত্বাবধানে ২৪ এপ্রিল ৭৪ ফারাক্কা বাঁধ চালুর আগে ভারতের সাথে রাতারাতি অন্তর্বর্তীকালীণ একটি অসমাপ্ত পানিচুক্তি প্রণয়ন ও স্বাক্ষরে ভুমিকা রেখেছিলেন। খন্দকার মুশতাকের ছক ছিল চুক্তিছাড়াই বাঁধ উদ্বোধন করা হবে। ওপারে ফিতে কাটবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী । এপারে বঙ্গবন্ধু । সেটি হ’ল না। একতরফা একটি প্রেস রিলিজের মাধ্যমে ফারাক্কা বাঁধ চালু হ’ল মাত্র ৬ মাসের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে। দুপক্ষ্যে ঐকমত্য হ’ল , গঙ্গার পানি প্রবাহে দুদেশের নায্য হিস্যা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দিয়ে পূর্ণাঙ্গ চুক্তি সাপেক্ষে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে ফারাক্কা বাঁধ।কিন্তু তা যে হয়নি তখন সে কথায় কোন ভুল নেই্।
বঙ্গবন্ধু হত্যার চেষ্টা আগেও অনেকবার হয়েছে। ১৯৬৯ সালে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান এবং ১৯৭১ সালে ইয়াহিয়া খান মুজিবের মৃত্যুদন্ডের ফরমান লিখেও তা জনরোষে কারযকর করতে পারেনি। ১৯৭৫ সালে অন্ধ বিশ্বাসে চলা জনবলের আধিক্যের কাছে বিজ্ঞান আত্মসমর্পন করলো। আচারয প্রফুল্লচন্দ্র দুঃখ করে লিখেছেন, “আমি ক্লাসে এত করিয়া ছাত্রদের পড়াইলাম, যে পৃথিবীর ছায়া চাঁদের উপরে পড়িয়া চন্দ্রগ্রহণ হয়। তাহারা তা পড়িল, লিখিল, নম্বর পাইল, পাস করিল। কিন্তু মজার ব্যাপার হইল যখন সত্যি সত্যি চন্দ্রগ্রহণ হইল তখন চন্দ্রকে রাহু গ্রাস করিয়াছে বলিয়া তাহারা ঢোল, করতাল, শঙ্খ লইয়া রাস্তায় বাহির হইয়া পড়িল। ইহা এক আশ্চর্য ভারতবর্ষ”। ঠিক বলেছেন মাননীয় আচারয । পৃথিবী সূরযের চারিদিকে ঘুরে না। পৃথিবীই সূরযকে প্রদক্ষিন করে ।আর মানুষের উদ্গম – উন্মেষ বিকাশ ঘটেছে কোটি কোটি বছরে, ডারউইন বর্ণিত বিববর্তন ধারায়। সেই শ্বাশ্বত সত্যকেও এক শ্রেণীর জ্ঞান পাপী তাদের বিশ্বাসে ধারণ করেনা। আর বিশ্বের কোটি কোটি নিরক্ষর বা অর্ধশিক্ষিত মানুষ এমনকি উচ্চশিক্ষিত জ্ঞানীরাও তাদের সেই অন্ধ বিশ্বাসকেই মনোজগতে সযত্নে লালন করে ।এ নিয়েও মনীষীদের ক্ষোভ ও দুঃখের শেষ নেই।
আশ্চরয বাংলাদেশের মানুষও। ৮০ ভাগ মানুষ ৬ দফার পক্ষে ভোট দিয়ে অস্ত্র হাতে ঝাপিয়ে পড়লো মুক্তিযুদ্ধে। রাষ্ট্রের মালিক জনগন। সকল ক্ষমতার উৎস জনগন। এই নীতি শিরধার্য করে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান তৈরী শেষ হ’ল ডিসেম্বর ১৯৭২ । বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিলেন ১৯৭৫ জানুয়ারি । তখন “আদম তত্বে” বিশ্বাসী হোমরা চোমরা মানুষ ব্যক্তিগত সম্পদ বুকে জাপটে ধরে , তাদের সংখ্যাধিক্য দেখিয়ে , ঐকতানে বলে উঠলো আসমান জমিনের কোন কিছুরই মালিক আব্দুল্লাহ (ভগবান দাশ) না । কোন ক্ষমতার উৎসই জনগন না। জলস্থল অন্তরীক্ষের মালিক মহাপ্রভু। তার এরশাদেই দেশ চলবে। যেমন খলিফারা তার দেওয়া শরীয়তের আইনে দেশ চালিয়েছেন। কালো মুজিব কোট পরে মধুর চাক ভাঙা মানুষ আর লাল গামছার ফেটা বেঁধে যমুনায় নৌ ডাকাতি করা রবিনহুডরা একজোট হয়ে মুজিবকে বয়কট করলো। মুজিবের হাতে তখন ছিল নগদ দুটো বিকল্প,- ১. দেবদাশ ২. চিয়াংকাইশেক। তৃতীয় বিকল্প চে গুয়েভারা ,তথা সুন্দরবন -বান্দরবন । যার নির্গলিতার্থ পদ্মা মেঘনা যমুনা ভাসানো কোটি মানুষের রক্তস্রোত। জনগনই ছিল জাতির জনগনের ধ্যানজ্ঞান ভালোবাসা। তাই নতুন করে রক্তপ্লাবনের পথে না হেটে তিনি অবলীলাক্রমে নিয়তির কাছে আত্ম সমর্পন করলেন । তাতেই বাঙালির ভালোবাসার নভোমন্ডলে অনশ্বর জ্যোতিস্কের মত চিরঞ্জীব হলেন বিদ্রোহী রণক্লান্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আজ আমরা সমগ্র বিশ্বের বাঙালি এক কাতারে দাড়িযে তাই মাথা উঁচু করে বলতে পারছি , জাতির জনক হে অনন্য অসীম, হে অনিরুদ্ধ. অলঙ্ঘনীয়, অনতিক্রম্য মহা মহিম !তুমি ছিলে , তুমি আছ। তমি থাকবে।
লেখক:শামসুল আরেফিন খান
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি, ‘অন্যদেশ , নিউইয়র্ক
ভাষা সৈনিক , মুক্তিযোদ্ধা , কলামিস্ট