নাজনীন তৌহিদ
চারিদিকে এখন রসনা কাড়া রসালো ফলের মৌ মৌ গন্ধ। নতুন ফুলের মধু খেতে বসন্তকালে মধু মাছির আগমন ঘটে বলে চৈত্র মাসকে মধু মাস বলে কিন্তু জ্যৈষ্ঠ মাসে আম কাঁঠালের মিষ্টিগন্ধে চারিদিক ভরে থাকে বলে আজকাল অনেকে আবার এই মধুময় মাসকেই মধুমাস বলছেন ।মৌমাছির মৌবন আর মধুমাছির গুঞ্জন, সে যাই হোক না কেনো প্রকৃতি তার নিজ নিয়মেই খুশি।তবে প্রকৃতির কিছু বৈরিতায় এই মুহূর্তে হয়ত খুশি থাকতে পারছি না আমরা তবু আজন্মকাল এই প্রকৃতির মাঝে সমঝোতা করে টিকে থাকা আমাদেরকে হার মানলে চলবে না ।
এখন বসন্ত নয় , নয় গ্রীষ্ম ।কদম, কেতকী আর বেলিফুলের সুবাস মেখে বরষা রানি এসেছে ধরায় তবে তার মন ভালো নেই বলে রাগি রাগি রোদেলা মেজাজ নিয়ে গম গম করে চলছে এখন। সে যাক,মধুমাসের মধু কথা থাক, এবার তবে কিছু কাজের কথায় আসি । চারিদিকে আম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস চলছে এখনও হরদম । একটি প্রচলিত শ্লোক আছে “মরবো বলে করবো না, বাঁচলে ফের খাবো কী”। তাই চলুন এসব ফল খাওয়া ও সংরক্ষণের কিছু নিয়ম নীতি জেনে নেওয়া যাক।
১।বাজারে আছে শত শত রকমের আম ।এত শত আমের নাম আমরা হয়ত সবাই জানি না তবে গোপাল ভোগ, হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাত,ল্যংড়া,হাড়িভাঙ্গা,ফজলি,লখনা, আম্রপলি ,চোষা,আশ্বিনা এই আমগুলো আমরা কম বেশি সবাই চিনি।লিচুর মধ্যে আছে দেশি বা আঁটি লিচু ,মাদ্রাজি, বোম্বাই , বেদানা ও চায়না- ৩। আবার আনারসের মধ্যে আমরা পাহাড়ি ও মধুপুরি আনারসকেই বেশি চিনি। এসব আম কিংবা অন্য যেকোনো ফলই পচনশীল কিন্তু এই পচনশিলতা দূর করা কিংবা পোকামাকড় দূর করা ছাড়াও ফলকে বাড়ন্ত করা,দ্রুত পাকানো এবং ফলকে আকর্ষণীয় করে ব্যবসা রমরমা করে তুলতে বেশিরভাগ ব্যবসায়িরা অতিমাত্রায় ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে আমাদের মানব দেহের চরম ক্ষতি সাধন করছেন তা আমরা কম বেশি সবাই জানি । তবু জানিয়া শুনিয়া আমরা করিতেছি বিষ পান …। তাই বাগান থেকে নিজের হাতে পেড়ে আনা হোক আর বাজার থেকে কিনে আনা হোক যে কোনো ফল বা সবজি খাবার আগে অবশ্যই তা নরমাল পানি কিংবা কুসুম গরম পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন অথবা আধা চা চামচ পরিমাণ লবণ মিশ্রিত পানি অথবা এক চা চামচ পরিমাণ সিরকা মিশ্রিত পানিতে ভিজিয়ে রেখে এরপর ভালো করে ধুয়ে নিন (কিছুক্ষণ সময় বলতে ১৫ -২০ মিনিট এবং একটি পরিবারের খাবার উপযোগী কিছু ফল পানিতে ভিজিয়ে রাখা যায় এমন একটি বাটি বা বোল পূর্ণ পানি) এবং যে ফলের খোসা ছড়ানো যায় তা ছড়িয়েই খাওয়া ভালো ।এসব করলে যে আমরা একেবারে শতভাগ নিশ্চিত হতে পারব তা নয় তবে অনেকটাই নিরাপদ হতে পারব।
২। রাসায়নিক মুক্ত ফল যেভাবে চিনবেন –‘চক চক করলেই তা সোনা হয় না’এই কথাটি আমাদের মাথায় রেখেই ফল কেনা ভালো অর্থাৎ তরতাজা, টসটসে কিংবা রঙ্গিন না দেখে তুলনা মুলক ম্রিয়মান দেখতে যে ফল তাই কেনা ভালো । আম, জাম, কাঠাল, কলা, আনারস ইত্যাদি ফল যে মাসে পাকার কথা তার আগেই বাজারজাত করা হলে তা কেনা থেকে বিরত থাকুন। কেনোনা অসাধু ব্যবসায়ীরা অতি লাভের আশায় অতি মাত্রায় কার্বাইড দিয়ে অপরিপক্ক ফল পাকিয়ে তা বাজারজাত করে থাকে। রসালো ফল অর্থাৎ ফলের মধুগন্ধে মধুমাছি ঘুর ঘুর করবে কিন্তু তা না দেখলে বুঝবেন এ ফল ভেজালযুক্ত । ফল থেকে তার নিজস্ব পাকা গন্ধ না পেলে , ফলের খোসা ছড়ানোর পর ভিতরে কাঁচা থাকলে এবং ফল খোসা ছড়ানোর পর এতে সামান্য পরিমাণ আয়োডিনযুক্ত লবণ ছিটালে এর রঙের কোনো পরিবর্তন না হলে ধরে নেওয়া যায় এই ফলে রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো আছে। তা ছাড়া রাসায়নিক মেশানো আম বা অন্য যে কোনোফল কাটলে তা থেকে কেমন উটকো কটু গন্ধও পাওয়া যায় । যদিও আজকাল আম, জাম, লিচু ইত্যাদি ফলে ফরমালিন কিংবা ক্ষতিকারক কোনো পদার্থ মেশানো হয় কি হয় না এ নিয়ে অনেক চাউর আছে, তবে সে যাই হোক, ফল ব্যবসায়ি এবং ক্রেতা দুদিকের মতামত জেনেই প্রতিবেদনটি সাজিয়েছি তাই নিজস্ব যাচাই বাছাই থেকেই ফল কেনার ভার আপনার ।
(চলবে)
লেখক: উপ সম্পাদক, বিজয় প্রতিদিন