কল্যাণীয়াসু,

চিঠি

0
1325

পত্রের প্রথমে আমার এলাহী ভরসা,কে করে কার আশা! আমি করি তোমার আশা, এইতো আমার ভালোবাসা

,নিও একগুচ্ছ লালগোলাপের শুভেচ্ছা। তুমি জানো আমি কবি নই নজরুলের মতো যে তার নার্গিসের জন্য লিখেছিলো এক প্রেমপত্র যা তাকে অমর করেছিলো ঠিকই কিন্ত বিরহ বেদনায় মুর্ছে গিয়েছিলো দুজনেই। আমি সেরকম প্রেমপত্র লিখতে চাই না যা আমাকে অমর করবে ঠিকই কিন্ত তোমাকে করবে হাতছাড়া। তুমি জানো আমি মনিরখানের মতো সুকণ্ঠের গায়ক নই যে তার অঞ্জনার জন্য চীর অমর হয়ে থাকবে তার ভক্তকুলের হৃদয়ে। কিন্তু চীর সত্যটা কী জানো প্রিয়তমা?  আমি তোমাকে হারাতে চাই না, চাই না আমি মনির খান হতে, চাইনা আমি ভক্তকুলের হৃদয়ে আবাস গড়তে। আমি শুধু চাই তোমার হৃদয় রাজ্যে ভালোবাসার সম্রাট হয়ে ভালেবাসার সুভাস ছড়াতে। জানো  সে রাজ্যের একমাত্র সম্রাজ্ঞী কে? আচ্ছা তুমি নীল আকাশ দেখেছো নিশ্চয়ই  তবে দেখেছো কি তার ক্রন্দন?  সে যখন বেদনায় অশ্রু গড়ায় তখন তা বৃষ্টি নামে ঝরে আর তখনি তুমি আকাশ নীল দেখো। ঐ নীল আসলে কি জানো? মুক্ত আকাশ বেদনায় নীল রং ধারণ করে আর ঝুমুর ঝুমুর শব্দে যে বৃষ্টি ঝরে তা তার ক্রন্দন ধ্বনি যেমনটা অঞ্জনা কে হরিয়ে মনিরখানের হৃদয়ের আকাশ নীল হয়ে বেদনার কান্না গানের সুরে কন্ঠ হয়ে ভেসে আসছে, তাইতো সে গায়ক। নজরুলের হৃদ-আকাশে নার্গিসকে হারানোর বেদনাই কান্না হয়ে কাব্যের সুরে বয়ে গেছে তাইতো সে কবি। না, আমি কবি হইতে চাই না,আমি গায়ক হতে চাই না। আমি চাই গোধূলিলগ্নের একপশলা বৃষ্টির পরে তোমার হৃদআকাশের রংধনু হতে। তুমি জানো?  তুমি আমার জীবনের প্রিজম যার সংস্পর্শেই আমার ভীতরের সাত রং স্ফূরণ খেলে যায় আর আমি হয়ে উঠে রংধনু যেখানে জীবনের মানে খুঁজে পাই। বৃষ্টির ফোটা যেমন প্রিজমের কাজ করে তুমি আমার জীবনের প্রিজম যে জীবনটাকে রাঙিয়ে দেয়। জানো? তুমিই প্রিজম নামের সেই সম্রাজ্ঞী যার জন্য অহর্নিশ প্রতীক্ষার পুষ্পমাল্য গেঁথে যাই। তুমি হয়তো বলবে তোমার অবস্থান আমার ভুবনে কতোটুকু তাই নয় কি?

তবে শুনো,পৃথিবীর সমস্ত প্রেমিক পুরুষ মাত্রই সে তার প্রেয়সীকে চাঁদের সাথে তুলনা করতে ভালোবাসে কিন্তু আমি এ জায়গাটাতেই ব্যতিক্রম।আমি তোমাকে চাঁদের সাথে তুলনা করে তোমার সৌন্দর্য ও স্বকীয়তা কে খাটো করে দেখার দুঃসাহস দেখাতে চাই না। অবাক হচ্ছো তাই না?  চাঁদ সুন্দর বটে তবে নিজের স্বকীয়তায় নয়,সূর্যের অনুগ্রহে চাঁদ সুন্দর । কখনো সূর্য অভিমান করে আলো বিলানো বন্ধ করে দিলে চাঁদ নিকোশ কালো হয়ে যাবে,হারিয়ে ফেলবে তার সমস্ত সৌন্দর্য । আর তাই তোমাকে চাঁদের সাথে তুলনা করে প্রকারান্তরে তোমাকে স্বকীয়তাহীন করে উপস্থাপন করতে আমি নারাজ।তুমি আমার আকাশে আপন মহিমায় জাজ্বল্যমান যে কিনা চাঁদের ভূমিকাকেও হার মানায়।তোমার আলোয় আলোকিত হয়ে আমি তোমার রাতের আকাশে চাঁদ হয়ে আলো বিলাতে চাই , মন খারাপের দিনগুলোতে সন্ধাকাশে শুকতারা হয়ে তোমার হৃদ আকাশে উঁকি দিতে চাই । তুমি জানো আমার দৃষ্টিতে নারীরা পৃথিবীর অলংকার আর সে অলংকারের মধ্যে সবচেয়ে মুল্যবান ধাতুটি তুমি। তুমি আমার নিকট গোল্ড নও ডায়মন্ডও নও বরং পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান ধাতু প্লাটিনাম সদৃশ। তুমি মেহেদী দেখেছেো নিশ্চয়ই তবে তার আত্মত্যাগ দেখেছো কি? যে তার জীবন দিয়ে অন্যের হাত রাঙিয়ে দেয় আর এটাই মেহেদীর আত্মতৃপ্তি ও স্বার্থকতা। তুমি মোমবাতি দেখেছো নিশ্চয়ই যে তার জীবন পুড়ে পুড় অন্যের তরে আলো বিলিয়ে যায় আর এতেই মোমবাতি খুসি, সে হাসে অপরের তরে আলো বিলাতে পেরে । মোমবাতির জীবন স্বার্থক হয় নিজের আত্মত্যাগে আর ঠিক তদ্রূপ আমিও কখনো মেহেদী হয়ে আবার কখনো মোমবাতি হয়ে তোমার জীবন আলোকিত করতে চাই, রাঙাতে চাই তোমার জীবন মেহেদীর মতো যার বাহিরে থাকবে সজিবতা আর অন্তরে থাকবে তোমাকে রাঙানোর উপাদান। তুমি আমার জীবনে স্বর্ণ নও বরং কষ্টিপাথর যার সংস্পর্শে আমি নিজেকে আবিষ্কার করবো বাইশ ক্যারেটের খাত যুক্ত স্বর্ণ হিসেবে নয় বরং পুরো চব্বিশ ক্যরোটের শতভাগ খাটি স্বর্ণ হিসেবে যেথায় থাকবে না তামার খাত যুক্ত সংমিশ্রণ অর্থাৎ তোমার পূর্ণ দখলে থাকবে শতভাগ খাটি ভালোবাসা।

শরতের কাশবনে বায়ুর তালে তালে দোল খায় যেমন প্রকৃতি ঠিক তেমনি তোমার আগমন বাণী হাতছানি দেয় আমার হৃদয় কাশবনে। তোমার প্রতি আমার এতোটাই বিশ্বাস থাকবে যে, যেমনটা শিশু বাচ্চাকে উপরে ছুড়ে মারলে সে কাদেনা বরং এই ভেবে হাসে ভরসার হাত পাতা থাকে নিচে। শিশুটি শতভাগ নিশ্চিত থাকে যে,সে আঘাত নয় ভালোবাসা পেতে যাচ্ছে ।আমিও ঠিক ঐ শিশুর মতো তোমার প্রতি ভরসা ও বিশ্বাস রাখতে তে চাই কারণ বিশ্বাসে ভালোবাসার সুত্রপাত আর সন্দেহে তার যবোনিকাপাত। স্রোতে গা ভাসিয়ে নয় বরং উপরের আদালতে রায়ের মাধ্যমে তোমাকে আপন করে পেতে চাই।

তইতো প্রভুর নিকট দোয়া ভিখ মেগে যাই যেন জীবনের প্রিজম হারিয়ে না ফেলি। বলি, রাব্বানা হাবলানা মিন আজওয়াজিনা ওজুররিয়্যাতিনা কুর রাতা আইয়্যুনি ওয়াজায়ালনা লিল মুত্তাকিনা ইমামা। জানিনা যার নিমিত্তে প্রার্থনা করে যাই সেই তুমিই প্রার্থণা করো কিনা।যদি কোনো দিন না পাও ভেবে নিবে তোমার চাওয়ার চেয়ে অন্যের চাওয়াটা বেশি শক্তিশালী ছিলো।শুধুই এ ধরায় নয় যাকে জান্নাতের পুষ্পকাননে নিয়ে হাত ধরে হাঁটা যাবে আর গান ধরা যাবে স্বর্গের পাখপাখালিদের কন্ঠের সাথে সুর মিলিয়ে। হে অনাগতক কল্পনাপ্রসূত জীবনসঙ্গিনী নদী যেমন সমুদ্রের সাথে মিশে যায় আপন প্রচেষ্টায় আমিও তোমার সাথে মিশে যেতে চাই খোদার মহিমায়।

ইতি তোমার নিত্য শুভাকাঙ্ক্ষী

মাহাবুব আলম

শিক্ষার্থী স্নাতকোত্তর,

লোক প্রশাসন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here