আহমেদ ফরিদ
দেশটির নাম উগান্ডা। কে না জানে দেশটির নাম। ছোটবেলা থেকে আমরাও দেশটির নাম জানি। জানার কারণ হলো দেশটির প্রেসিডেন্ট। নাম তার ইদি আমিন। সে সময় কী জন্য তিনি লাইম লাইটে আসেন তা আজ আর মনে নেই। আমাদের কাছে তিনি তখন খুব বিখ্যাত একজন মানুষ তাঁর দৈহিক আকৃতির জন্য।সে সময় পত্রিকার পাতায় প্রায়ই ইদি আমিনের ছবি ছাপা হতো। আমরা তাঁর দেহাকৃতি দেখে বিস্মিত হতাম। বাজারে নাকি তাঁর পায়ের জুতা পাওয়া যেতো না। অর্ডার দিয়ে জুতা বানাতে হতো। গেন্জির বেলায়ও একই কথা।
উগান্ডার আরেক বর্তমান প্রেসিডেন্ট কাগুতা মুসেভেনি (Kaguta Museveni। তিনি করোনা নিয়ে জাতির উদ্দ্যেশে একটি ভাষণ দেন। তিনি তাঁর ভাষণের শুরুতেই বলেন- স্রণ্টার আনেক কাজ আছে। তাঁকে সারা বিশ্বব্রহ্মান্ড দেখতে হয়। কিছু অপদার্থ মানুষকে দেখাশুনার জন্য তিনি উগান্ডায় বসে থাকবেন না।
তাঁর ভাষণটি সোশ্যাল মিডিয়াতে ভেসে বেড়াচ্ছে। তাঁর ভাষণটা আমারও খুব পছন্দ হয়েছে। তাই এটি এখানে উল্লেখ করলাম। তিনি তাঁর ভাষণে বলেছেন-
যুদ্ধকালীন সময়ে আপনাকে কেউ বলে না আপনি ঘরে থাকুন। আপনি স্বেচ্ছায় নিজেকে গৃহবন্দী করে রাখেন। শত্রু যতক্ষণ থাকে আপনি নিজেক ততক্ষণ বাড়ির বেসমেন্টে লুকিয়ে রাখেন। যুদ্ধের সময় কেউ তাঁর স্বাধীনতা নিয়ে ভাবে না . বেঁচে থাকার বিনিময়ে তিনি তাঁর স্বাধীনতাকে সেচ্ছায় বিসর্জন দেন। যুদ্ধের সময় আমরা আমাদের ক্ষুধা নিয়ে অভিযোগ করি না, আমরা ভবিষ্যতে খাওয়ার জন্য বেঁচে থাকার চেষ্টা করি। যুদ্ধের সময় আমরা আমাদের দোকানপাট খুলে রাখার চিন্তা করি না, জীবন বাঁচানোর জন্য আমরা দৌঁড়ের উপর থাকি। প্রতিটি নূতন দিনের জন্য আমরা স্রষ্টার নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।
আমাদের সন্তানরা কেনো স্কুলে যাচ্ছে না তা নিয়ে আমরা যু্দ্ধের সময় মোটেও চিন্তিত হই না। আমরা স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করি স্কুল যেনো না খোলে। কারণ স্কুল খুললেই সরকার বাচ্ছাদেরকে সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে যুদ্ধে পাঠিয়ে দেবে।
বর্তমানে বিশ্বে একটা যুদ্ধ চলছে। এ যুদ্ধে কোন গোলাবারুদ, কামান ব্যবহৃত হচ্ছে না। এ যুদ্ধে কোন মানবীয় সৈনিক নেই,বর্ডার নেই, যুদ্ধ বিরতির কোন শর্ত নেই ।
এ যুদ্ধের সৈনিকেরা বড়ই নির্মম। এরা কোন জাতপাতের ধারধরে না। বাচ্ছা কাচ্ছা, মহিলা কিংবা পবিত্র জাযগার প্রতি এর কোন শ্রদ্ধাবোধ নেই।
সে কোন সরকার পরিবর্তন চায় না,পৃথিবীর মাটির নিচে লুক্কায়িত খনিজ সম্পদের প্রতিও এর কোন লোভ নেই। ধর্ম, বর্ণ কিংবা আদর্শিক কোন বিষয়কে সে বিবেচনায় আনে না। সে অদৃশ্য,সর্বত্র বিচরণকারী,নিষ্ঠুর কিন্তু দক্ষ এক সেনা। সে চায় শুধু মৃত্যু। সারা পৃথিবীকে সে এক কবরস্থানে পরিণত করতে চায় এবং তার সে শক্তি আছে। জলে স্থলে কিংবা আকাশে কোন ঘাটি ছাড়াই পৃথিবীর প্রায় সবগৃলো দেশই তার দখলে।…. এর নাম করোনা ভাইরাস। আমাদের সৌভাগ্য যে এরও কিছু দূর্বলতা আছে,একে পরাজিত করা সম্ভব। এর জন্য আমাদের প্রয়োজন যৌথ প্রয়াস,শৃঙ্খলা আর ধৈয্য। সামাজিক আর দৈহিক দূরত্ব রক্ষা করলে করোনা বাঁচতে পারে না। সে তখনই বাঁচে আমরা যখন এর মুখোমুখি হই। সে আমাদের চায় আমরা তার মুখোমুখি হই। চমৎকার ব্যক্তিগত সুরক্ষার কাছে সে নতিস্বীকার করে সে অসহায় যখন ঘন ঘন হাত ধোয়ার মাধ্যমে। আমরা আমাদের ভাগ্যকে সুরক্ষা দেই।
রুটি রুজির জন্য কান্না করার সময় এটা নয়। চলুন আমরা কর্তৃপক্ষের কথা মেনে চলি।“
এ ভাষণটি বিশ্বের অনেকেই শুনেননি বা শুনে থাকলেও মানেনি। খুদ উগান্ডার লোকজনই হয়তো তাঁর ভাষণটিকে পাত্তা দেয়নি। পাকিস্তানের স্পিকারও হয়তো মুসেভেনির ভাষণটি শুনেননি বা শুনে থাকলেও পাত্তা দেননি। তিনি করোনার কথা ভুলে গিয়ে ইফতারি জোশে এক পার্টি দিয়ে বসেন। সে পার্টিতে বিনা দাওয়াতে করোনারাও গিয়ে হাজির হয়েছিল বোধ হয়। ফলে তিনি নিজে আক্রান্ত হয়েছেন,আক্রান্ত হয়েছেন ঘর গোষ্টির আরও কয়েকজন। করোনা ক্ষমতাবান চিনে না ধর্ম মানে না,মানে সামাজিক আর শারিরীক দূরত্ব।
লেখক : গল্পকার ও যুগ্ম সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার