কবি মানিক মনোয়ার

ইংলিশ, বিজ্ঞান আর গণিতে পুরোটাই ডাব্বা
ধর্ম আর বাংলায় টেনেটুনে পাশ করা পেছনের ছাত্রটা
এখন ঐ স্কুলের নামকরা সভাপতি!
বীজগণিতের সূত্র মূখস্ত করাতে যে শিক্ষক একদিন ধুমছে পিটিয়েছিলো;
নিজের চেয়ার টেনে সে শিক্ষক তাকে বসতে দেয় এখন!
এই আকাশকুসুম সম্মান সভাপতির বড্ড ভালো লাগে
যাবার সময় স্কুল সীমানার গাছ কাটার ফন্দি আঁটে।

বিশেষ বিবেচনায় পাশ করা পেছনের ছাত্রটা এখন মস্তবড় উকিল
পাশের বাড়ির ছেলেটার শুধু মেয়ের দিকে তাকানোর অভিযোগ পেলেই হয়,
বাকিটা সে একদমে লিখে ফেলে বুদ্ধি করে ক্ষয়।
তাকানো থেকে জড়াজড়ি, নির্যাতন, হাতাহাতি
তারপর টেনে হেচড়ে জামা ছিড়ে, নির্মমতার শেষ ছবি,
লম্বা রচনা লিখে মিথ্যে অভিযোগের সাতকাহন ধরিয়ে দেয় বাদির হাতে
নির্দোষ ছেলেটা এখন দৌড় খা দিনে রাতে।

থানার দারোগা বাবুর বজ্রকন্ঠে বুক বাধে নির্যাতিতা
এবার বুঝি ন্যায় বিচার পাবেই পাবে,
হঠাৎ ঘুষের মোটা বান্ডিলে বজ্রকন্ঠ বর্জ্য হয়,
দারোগা বাবুর সে কন্ঠ গলতে থাকে বরফের মতো
কঠিন থেকে তরল, তরল থেকে বায়বীয় তারপর ফুস….!
নির্যাতিতা বাদি, মিথ্যে চার্জশিট দেখে যেনো বেহুশ।

তিন বাড়ি পরেই মাদ্রাসা পড়ুয়া এক প্রতিবেশী বেকার
চলন-বলন আর চোখের চাহনিই যেনো কেমন?
তিনশো মাইল দূরের এক অচেনা লোক আমার মসজিদের ইমাম
আর কিছু জানি না জানি, ঝার-ফুকে কাজ হয় মানি,
সভ্য-ভদ্র ইমাম, পথে হলে দেখা সেকি লম্বা সালাম।

চারিত্রিক সনদপত্রে স্বাক্ষরকারীর চরিত্রে আমি হতবাক
উর্বর সমাজ পতিত করে রাখা লোকটা এখন সমাজপতি!
ন্যায়কে অন্যায় আর বিচার কে অবিচারে সে এখন দক্ষ
তার থেকে পাওয়া চারিত্রিক সনদপত্রে কি আর থাকবে সত্য?

দুর্নীতির মন্ত্র পড়তে পড়তে মন্ত্রী এখন সোজা মন্ত্রণালয়ে
তাদেরও শুনি প্রধান থাকে, প্রতি ও উপমন্ত্রী থাকে।
সব প্রধান, প্রতি, উপমন্ত্রী-সমাজ, পুঁজি, প্রজাতন্ত্রী
সব তন্ত্রী, মন্ত্রী, আমলা, গোত্রী-একই দিকে গিয়ে একই ফন্দি।

বড় মন্ত্রী, উকিল, ইমাম, সভাপতি
এসবের কিছুই নই যে আমি।
আমার এ গান, গদ্য, কবিতা
জানি মূল্যহীন ছেঁড়া শ্মশানের কাঁথা।
তবু রেখে গেলাম এ সমাজ দর্পন,
যদি বোধ জেগে হয় মানুষ একজন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *