কে এ বিপ্লব : ১৪ দলের নতুন মুখপাত্র হতে যাচ্ছেন আমির হোসেন আমু । আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোটের যাত্রা শুরু হয় ২০০৪ সালের ২৫ নভেম্বর তখন আওয়ামী লীগ বিরোধী দল। শুরুতে এই জোটের সমন্বয়ক ছিলেন আব্দুল জলিল। এরপর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ১৪ দলের সমন্বয়কের দায়িত্ব পান দলটির প্রবীণ নেত্রী সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। তিনি কয়েকটি বৈঠকও করেন। বার্ধ্যকজনিত কারণে সাজেদা চৌধুরী প্রায়ই অসুস্থ থাকায় মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পান মোহাম্মদ নাসিম।
সেই থেকে তার নেতৃত্বেই পরিচালিত হয়ে আসছিল ১৪ দলের কার্যক্রম। আওয়ামী লীগের এই নেতা গত ১৩ জুন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও নাসিমের মৃত্যুর পর ক্ষমতাসীন মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে—কে হচ্ছেন ১৪ দলের মুখপাত্র। আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু ১৪ দলের মুখপাত্র হচ্ছেন এমনটাই বলা হচ্ছে। জল্পনায় আরেক সাবেক মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর নামও রয়েছে। যদিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
চলতি সপ্তাহেই ১৪ দলের সমন্বয়কের নাম ঘোষণা হতে পারে। বর্তমানে এ জোটের প্রধান দলগুলো হলো ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টি, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণআজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, বাসদ (একাংশ), জাতীয় পার্টি (জেপি) ও তরিকত ফেডারেশন। টানা দুই মেয়াদে মন্ত্রিসভায় জোটের প্রতিনিধিত্ব ছিল।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হয় সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়ার। পরবর্তী সময়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু মন্ত্রিসভায় জায়গা পান। আন্দোলনের মিত্র থেকে ১৪ দলের শরিকরা সরকারের অংশীদার হয়ে পড়ে। পুরো সময়টাতে শক্ত হাতে জোটের নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন মোহাম্মদ নাসিম। গত নির্বাচনের পর থেকে এককভাবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার চলছে।
এ নিয়ে জোট শরিকরা মাঝে মধ্যে প্রকাশ্যে উষ্মা প্রকাশ করেন। কৌশলে ব্যর্থতার দায় আওয়ামী লীগের উপর চাপান। নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা রাশেদ খান মেনন। পরে তিনি পর্দার আড়ালের খেলায় নিশ্চুপ হয়ে যান।
এদিকে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে, এই মেয়াদে মন্ত্রিসভায় জোটের আর কোন প্রতিনিধিত্ব থাকছে না। যদিও রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। এটাতো প্রবাদ বাক্যে পরিণত হয়েছে।
জোটের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, এখন বুড়িগঙ্গায় অনেক পানি গড়িয়ে গেছে। কতকিছু বদলে গেছে। ব্যর্থতার পাল্লাও ভারি হয়েছে। যাইহোক জোট আছে। হয়তো থাকবে। তবে এখন আর কোনো চমক যে নেই এটা বলতে পারি।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতা বলেন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, জোটের ঐক্য অটুট রাখতে পারবেন- এমন ব্যক্তিই হবেন জোটের সমন্বয়ক। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, জোটের রাজনীতির মেরুকরণে অত্যন্ত দক্ষ প্রবীণ রাজনীতিক আমির হোসেন আমু নতুন সমন্বয়কের দায়িত্ব পেতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
এ বিষয়ে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, বিষয়টি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঠিক করবেন। এখানে তাঁর মতামতই প্রধান।
বিষয়টি নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, মোহাম্মদ নাসিম ১৪ দলকে সার্বক্ষণিক সক্রিয় রাখার চেষ্টা করে গেছেন। সবার কাছে তার ছিল গ্রহণযোগ্য অবস্থান। কাজেই তার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে কোনো সিনিয়র ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে এ দায়িত্ব দেওয়া উচিত, যিনি ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারবেন।
এ বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আমাদের শ্রদ্ধেয় নেতা মোহাম্মদ নাসিম ১৪ দলের মুখপাত্র ছিলেন। তিনি খুব সুন্দরভাবে ১৪ দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। আল্লাহ তাকে বেহেস্ত নসিব করুন। এই পদটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কে এই দায়িত্ব পালন করবেন-খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই এ বিষয়ে মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত দেবেন।