বাংলাদেশে রাজনীতিতে বর্তমানে পড়ালেখা একটি গুরুত্বহীন বিষয়। প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের প্রায় শতভাগই নিজ নিজ দলের রাজনৈতিক মেনিপেস্টা সম্পর্কে অজ্ঞ।ফলে দলের প্রতিষ্ঠাতা আর মরহুম নেতার নামে কিছু শব্দ আর বাক্য দিয়েই তাদের রাজনীতির বোলচাল।পরিবর্তনশীল বিশ্বব্যবস্থায় ভাসা ভাসা জ্ঞান নিয়ে সঠিক নেতৃত্ব প্রদান করা অসম্ভব। আজকে আমরা রাজনীতির মাঠে জ্ঞান ও কর্মের প্রতিযোগিতায় কারা কী করছে এবং কী করা উচিত সে বিষয়ে আলোচনা করব।
বাংলাদেশে সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল হচ্ছে আওয়ামীলীগ এবং বি এন পি ।বর্তমানে সুযোগসন্ধানীরা ক্ষমতাসীন দলে ভীড় করেছে।যখন বি এন পি ক্ষমতায় ছিল তখন সেইদলে দলে দলে নতুন নতুন মুখের আভির্ভাব ঘটেছিল। সুযোগসন্ধানীদের অনুপ্রবেশের বিষয়টি যখন যেই দল ক্ষমতায় থাকে সেই দলের নীতি নির্ধারকদের মুখ থেকেও মাঝে মাঝে শুনা যায়।শুধুমাত্র বামধারার দু’একটি দল এবং ইসলামি ভাবধারানুসারী দলে ব্যতিক্রম দেখা যায়।এদের আদর্শ, উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য সম্পর্কে এরা স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করে।ফলে তারা মাথায় নগণ্য হলেও মাথাওয়ালা;সমাজের, রাষ্ট্রের বিভিন্ন সমস্যা ও সংকটে যৌক্তিক অভিমত প্রকাশে সমর্থ।অন্যদিকে সুবিধাবাদী রাজনৈতিক দলের কর্মী ও সমর্থকেরা নিজ দলের রাষ্ট্র বিরোধী কর্মকাণ্ডকেও বিনাবাক্যে সমর্থন দিয়ে থাকে;এটি জাতির জন্য অপমান ও ভয়ের কারণ।রাজনীতি যদি দেশ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে হয় তবে এমন অবস্থা থেকে মুক্তি আবশ্যক।
মাঝে মাঝে মাঠে ময়দানে নতুন নেতাদের বক্তৃতা শোনার সুযোগ হয়।সন্তুষ্ট হওয়া তো দূরে থাক,তাদের ভুল উচ্চারণে বাংলা শুনে হতাশ হতে হয়।অন্যদিকে যুক্তিহীনতা আর তথ্যবিকৃতি স্বাভাবিক বিষয় দেখা যায়।তাদের অধিকাংশ দলের নীতিমালা,সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়।এমতাবস্থায় তাদের মুখের জোর কিছুটা থাকলেও বুকের জোর থাকেনা।
উঠতি নেতৃত্বের জ্ঞানগর্ব উচ্চারণ ভবিষ্যতের সমৃদ্ধ অবস্থাকে নিশ্চিত করবে।কিন্তু এরা তো পড়ালেখা জানেনা।এখন প্রশ্ন:এই অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় কী? সংক্ষেপে বলতে গেলে বলতে হয়, এদেরকে পড়া লেখা করতে হবে।বুঝাতে হবে ,শুধুমাত্র গলাবাজিতে মুক্তি আসবে না;দলের স্থায়ী নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হলে অবশ্যই জ্ঞান অর্জনে ব্রতী হতে হবে।এতে দলসমূহ বিভিন্নভাবে উপকৃত হবে।
যদি তারা পড়ালেখা জানে তাহলে কী ধরণের সুবিধে হবে তা আলোচনা করা যেতে পারে।
প্রথমত যারা দল করবে তারা জেনেশুনেই আসবে এবং দলের প্রচারে যুক্তি উপস্থাপন করতে সমর্থ হবে।এরা নেতৃত্বের বিপক্ষে সুযোগ সন্ধানী হিসেবে আভির্ভূত হবেনা।কারণ,এর মধ্যদিয়ে দলে গুরুমূখী শিক্ষাপদ্ধতি প্রতিষ্ঠিত হবে।অন্যদিকে দেশের সংকটে দলের অন্ধ আনুগত্য করবে না।
রাজনৈতিক দলগুলো এজন্য প্রয়োজনীয় পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করতে পারে।সপ্তাহিক ক্লাসের ব্যবস্থা করতে পারে এবং এরই ভিত্তিতে মূল্যায়ণের পদক্ষেপ নিতে পারে।যারা আচার আচরণ, মৌখিক ও লিখিত পরীক্ষায় সন্তোষজনক ফলাফল করবে তারা নেতা নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার সুযোগ পাবে।সাথে সাথে যারা সমাজকর্মে বিশেষ ভূমিকা রাখবে তাদেরকে দলীয় দায়িত্ব পালনের জন্য নির্বাচিত করা যেতে পারে।এর মধ্যদিয়ে দলের অন্তর্গত ভীত শক্তিশালী হবে ;এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হারালেও নির্ভয়ে এগুতে পারবে।
দলীয় নেতা কর্মীদের জন্য প্রণীত পাঠ্যসূচিতে প্রথমত বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য,সম্পদ,প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে তথ্যপূর্ণ বিষয় থাকবে।দ্বিতীয়ত আন্তর্জাতিক বিষয়াদি সম্পর্কে পাঠ্যসূচি থাকবে।তৃতীয়ত ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কেও দলীয় কর্মপ্রক্রিয়ার উল্লেখ থাকবে।এরই ভিত্তিতে পরীক্ষার আয়োজন করবে।রাজনৈতিক দলসমূহের প্রোপাগান্ডামূলক আচরণ প্রায়ই দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।এইভাবে স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে অগ্রসর হলে তারা চাইলেই কর্মীদের অন্যায্য কাজে ব্যবহার করতে ব্যর্থ হবে।
প্রাথমিকভাবে নির্বাচন কমিশন এই বিষয়ে দেখবাল করার দায়িত্ব নিতে পারে।প্রতিটি দল তাদের কর্মী ও নেতাদের জন্য প্রণীত সিলেবাস ও সুনির্দিষ্ট পুস্তকাদি কমিশনে জমা দিতে হবে।অন্যদিকে যেসকল প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা নির্বাচিত হবে,জনগণকে কাছে টানবে তাদেরকে প্রথমে অবশ্যই সে সকল প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করতে হবে।
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশে জ্ঞানী এবং দূরদর্শী নেতা প্রতিটি গ্রামে, পাড়ায় দরকার।একমাত্র একটি স্বীকৃত মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এটি নিশ্চিত করা সম্ভব।আশাকরি এই বিষয়টি নীতিনির্ধারকগণ বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ নিবেন।