বাংলাদেশে শিক্ষায় ঝরে পড়ার মূল কারণ

প্রবন্ধ

0
960

গোলাম কিবরিয়া

বাংলাদেশে শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া এখনও বড় সমস্যা হিসেবে বিবেচিত।
সরকার ঝরে পড়ার হার শূণ্যের কোঠায় আনার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু এই সমস্যা থেকে মুক্তি মিলছে না।প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই হার নেই বললেই চলে।কিন্তু মাধ্যমিক পর্যায়ে খুবই বেশি।
সরকার বেশ কয়েক বছর ধরে অষ্টম শ্রেণিতে বোর্ড পরীক্ষার আয়োজন করছে।এই প্রক্রিয়া শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার অন্যতম কারণ।অঞ্চলভেদে এই হার ১০% থেকে ৪০% পর্যন্ত উঠানামা করে।পরবর্তী স্তর এস এস সি পরীক্ষায় এই হার আরও ভয়াবহ। এই স্তরে কোন কোন বিদ্যালয়ে শতকরা একজনও পাশ করেনা ।গ্রামাঞ্চলে কোন কোন বিদ্যালয়ে শতকরা ফেলের হার ৫০% থেকে ৭০%।
শিক্ষায় বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন, এর জন্য মূল্যায়ন পদ্ধতিই মূলতঃ দায়ী।বাংলাদেশে মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থী মূল্যায়ন পদ্ধতি শিক্ষাবিজ্ঞানের সাথে সংগতিহীন। এই নিয়ে খ্যাতিমান শিক্ষাবিদগণ প্রায়ই মতামত দেন।এই স্তরে মূল্যায়নে ত্রুটিসমূহ হলো:
১।বার থেকে চৌদ্দটি বিষয় একসাথে মূল্যায়ন করা হয় এবং এই ক্ষেত্রে অধিকাংশ বিষয়ে সাতটি সৃজনশীল এবং ত্রিশটি নৈর্বত্তিক প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়।পাবলিক পরীক্ষা হিসেবে পরিচিত এই পরীক্ষা পুরো দুই বছরের শ্রেণি পাঠদানের পর অনুষ্ঠিত হয়।এটি অবৈজ্ঞানিক মূল্যায়ন পদ্ধতি।

২।এইসব পাবলিক পরীক্ষার কোন স্তরে ইনকোর্স মূল্যায়নের ব্যবস্থা নেই ।
৩।খুবই অল্প সময়ে অধিক সংখ্যক উত্তরপত্র মূল্যায়ন করতে হয়।
৪।পরীক্ষক নির্বাচনে পরীক্ষকের যোগ্যতা যথাযথভাবে বিচার করা হয় না।
৫।এই ধরনের মূল্যায়নে প্রায় প্রতি বছর প্রশ্ন ফাঁস হয় যা মূল্যায়নে প্রভাব ফেলে। 
৬। মাত্র একটি বিষয়ে পাস নাম্বার না পাওয়ায় হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে অনুত্তীর্ণ হতে হয়। এদের মধ্যে অনেকে শিক্ষাজীবন সেখানেই সমাপ্ত হয়।মেয়েদের মধ্যে অনেকের বিয়ে হয়ে যায়।


এই ধরনের মূল্যায়ন থেকে বের হয়ে আসতে হলে কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া জুরুরী।

১।বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় এস এস সি ও এইচ এস সি পরীক্ষার ফলাফলের উপর সুনির্দিষ্ট মান যুক্ত হয়।এটা পরিহার করা উচিত।
২।সবচেয়ে মেধাবীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে এবং শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে।শিক্ষাব্যবস্থাপক পদে নিয়োগপ্রাপ্তদের অবশ্যই 
শিক্ষক পদে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। 
৩।বিদ্যালয় ভিত্তিক মূল্যায়নকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। 
৪।শিক্ষায় যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে হলে শিক্ষায় বিশেষজ্ঞের মতামতের ভিত্তিতে নিতে হবে।
৫।একাধিক বিষয়ে ফেল করলেও শিক্ষার্থীদের বিশেষ বিবেচনায় পরবর্তী শ্রেণিতে ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে।বারটি বিষয়ে পাশ করার পরেও একজন শিক্ষার্থীকে আশাহত হতে হয়।এটা বিচারের কথা নয়।শিক্ষার্থীর প্রবণতা অনুযায়ী শিক্ষার্থী অগ্রসর হবে ।
৭।।শিশুশ্রমিকের শ্রমের মূল্যমান সমান অর্থ তাদের পরিবারকে দেবার ব্যবস্থা করতে হবে।কারণ,অনেক দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক তাদের বিদ্যালয়ে না পাঠিয়ে কাজ করতে পাঠায়। অতএব দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য এই ব্যবস্থা থাকা জুরুরী।এতে ঝরে পড়ার হার কমবে।

সরকার যদি শিক্ষায় ইতিবাচক পরিবর্তন চাহেন তবে অবশ্যই বড় মানসিকতা নিয়ে এগুতে হবে।সর্বস্তরের মানুষের জন্য শিক্ষাকে উন্মুক্ত করতে হবে।বৈষম্যহীন শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।সরকারি,বেসরকারি এবং প্রাইভেট সবকিছুকে শিক্ষার মূল ধারায় নিয়ে আসতে হবে।এই বিষয়ে দীর্ঘসূত্রিতা জাতির জন্য অকল্যাণ বয়ে আনবে।

লেখক : শিক্ষক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here