আমেরিকা থেকে
শামসুল আরেফিন খান
২০০৩ সালের কথা। নারায়ণগঞ্জের এক তরুণ বন্ধু ,নাম আখতার , আমার বাসায় এসেছিল সুধামিয়াঁর বার্তা নিয়ে।তিনি আমরা পূর্ব পরিচিত, সমবয়সী এবং পড়াশুনায় সমসায়িক ।সে সময়ে সেমিনার ও সভাসমিতিতে মাঝে সাজে দেখা সাক্ষাত হয়েছে অন্তর্মুখী খ্যাতিমান পরমানু বিজ্ঞানী সুধা মিয়াঁর সাথে। আমি তখন জনকন্ঠে নিয়মিত লিখি। কলামিস্ট হিসাবে একটা পরিচিতি রয়েছে। আখতারের কাছেই শুনলাম ১৫ আগস্ট ৭৫ এর শহীদ শিশু রাসেলের আশু জন্মদিন পালনের ব্যাপারে আলাপ করার জন্যে সুধা মিয়া আমাকে স্মরণ করেছেন। চায়ের কাপে আলোচনায় ঠিক হ’ল সমমতের আরও দুএকজন সুধিজনকে নিয়ে বিষয়টা আলোচনা করে একটা কর্মসূচি ঠিক করা হবে। দুদিনপর ছুটির দিন শুক্রবার সকালেই আবার বসা হবে।সেদিন আখতারের সঙ্গী সাথী কয়েক উদ্যোগী তরুণও উপস্থিত ছিল। ছিলেন সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. আমানুল্লাহসহ গন্যমান্য অনেকেই । ছেলেরা বললো তারা রাসেলের নামে একটা শিশু সংগঠন তৈরী করেছে।ড. ওয়াজেদ মিয়াকে তারা সভাপতি হিসাবে পেতে চায়।তিনি মত দেননি। তবে আমরা দু’একজন থাকলে তিনি থাকবেন এমনটা আশ্বাস দিয়েছেন। সুধা মিয়া বললেন, সে সব পরে হবে। আপাততঃ রাসেলের জন্মদিন পালনের জন্য তোমরা কী করতে চাও সেটা বলো। একজন চটপটে তরুণ বললো, কবর জিয়ারত করবো, মিলাদ পড়বো এবং আলোচনা সভা করবো। সুধা মিয়া আমাকে বললেন, আপনি কিছু বলেন। আমি বললাম,খুব ভালো কথা। তোমরা কর্মসূচি নেও। আমাদের যদি আসতে বলো তো আসবো। তবে আমার মনে হয় ,বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ সন্তান রাসেল বেচে থাকলে আজ একজন বড় রাজণীতিক হ’ত। কাজেই আমি মনে করি, তার জন্মদিন রাজনৈতিকভাবেই পালন করা উচিৎ হবে। সুধামিয়া আগ্রহ দেখিয়ে বললেন, আপনি বলেন কী করা যায়। আমি বললাম, ১৫ আগষ্টের খুনিদের বিচার হয়েছে। কিন্তু ফাঁসি হয়নি।রায় কারযকর করার দাবিতে আমরা সারাদিন প্রতীক অনশন করতে পারি। সেটা কেমন হয়? সুধা মিয়াঁ চঞ্চল হয়ে নড়েচড়ে বসলেন। বললেন, সেটাই ঠিক হবে। আমরা তাই করবো।সিদ্ধান্ত হয়ে গেলো। “মাঝরাতে কথা বলে যে, দুয়ার দেয় সে”।এমন একটা প্রচলিত কথা আছে। এখানেও তাই হ’ল । সব দায়িত্ব আমার উপরেই চাপলো। রাসেলের জন্মদিন , ১৮ অক্টোবর ৩২ ধানমন্ডি বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে আমরা অনশন মঞ্চ তৈরি করলাম।সাদামাটা একটা মঞ্চ, জাকজমকহীন। সামনে মাটিতে বসার উদার ব্যবস্থা। শেখ জামালের এক বন্ধু একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালায়। সে শতাধিক শিক্ষার্থীকে নিয়ে আসলো। তাদের প্রত্যেকের পরণে ছিল কালো মুজিব কোট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনেকে এসেছিলেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে ছাত্ররা এসেছিল স্বতঃস্ফূর্তভাবে। কাজেই সমাবেশ ঘটাতে কোন কষ্ট হয়নি। আমাদের মঞ্চটা ছিল বঙ্গবন্ধুভবনের ঠিক বিপরীতে ধানমন্ডি লেক ঘেঁসে। ওদিকে আবার বড় রাস্তার ধারে কাছে আরও একটা সুদৃশ প্যান্ডেল তৈরী করেছিল অন্য একটা সংগঠন। এবারেও তারা আগের মত মোটা বাজেটে রাসেলের জন্মদিন পালন করছিল নানা কর্মসূচির মাধ্যমে। আমি সকাল আটটায় পৌছে দেখলাম আমাদের সব আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে সুচারুভাবে। উপস্থিতি কেবল একজন। তিনি একাই একশ’। তাঁর নাম ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. খুরশিদউদ্দীন আহমদ (অবঃ)। আগরতলা মামলার অভিযুক্ত পরিষদের তিনি সভাপতি। তাঁকে বলেছিলাম ৮টায় আসতে। উনি বলেছিলেন, ‘রাইট’। তাঁর আসতে একমিনিটও দেরি হয়নি। ৯টায় অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে ড. ওয়াজেদ মিয়কে নিয়ে আমরা জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পাঞ্জলি দিলাম। তিনি খুব ভোরে বনানী গোরস্তানে শহীদ রাসেলের কবর জিয়ারত করে তবে এখানে এসেছেন । আমরা ঠিক সময়ে অনুষ্ঠান শুরু করতেই সামনের শানশওকতের আয়োজন ছেড়ে ওবায়দুল কাদেরসহ অনেক বিশিষ্ঠজন হুড়মুড় করে আমাদের মঞ্চে এসে উঠলেন। তাঁরা ঠিক সময়মতই এসেছিলেন। কিন্তু আয়োজকরা আসেনি। ওদিকটা প্রায় জনশূন্য হয়ে গেলো। আয়োজকরা হতোদ্যম হ’ল কেন তা জানিনা। তবে নেপথ্যে যিনি ঐ অসামান্য আয়েজনের প্রধান হোতা তিনি একটা গল্পের জন্ম দিয়েছিলেন। ‘১৫ আগস্টের খুনিদের ফাঁসি এখনই কারযকর করতে হবে’।এতবড় রাজনৈতিক একটা জাতীয় দাবি আদায় করতে আমাদের প্রতীক অনশন। কারও জন্মদিন পালনের ক্ষেত্রে একটা ব্যতিক্রমী আয়োজন। কিন্তু অনশন ভাঙাবেন কে? ১৯৫৭ সালে আমার কলেজ জীবনের ২য় বর্ষে, আমরা সতীর্থ অনেকে মিলে গণঅনশন করেছিলাম । অনেকগুলো দাবি ছিল আমাদের । সেই অনশন ভাঙাতে এসেছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান খান । তারই ফলশ্রুতি বর্তমান ঢাকা কলেজের পূর্ণতাপ্রাপ্ত বিশাল কমপ্লেক্স। আমি ১৯৫৬ সালে যখন ভর্তি হযেছিলাম কলেজে তখন ছিল একটা মূল ভবন ও দুটো মাত্র ছাত্রাবাস। অনেকগুলো ছাত্রাবাস ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল আরমানিটোলা ও অশেপাশে। সেই কথা মনে করে আমি তখনকার বিরোধীদলীয় নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সাথে দেখা করলাম । তাঁকে আমোদের কর্মসূচির কথা আগেই জানানো হয়েছিল । তাঁর সম্মতি ছাড়া আপনভোলা দার্শনিক পরমানু বিজ্ঞানী সুধা মিয়াকে বহিরাঙ্গনের এমন একটি অনুষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া যেত না ।সেই সাহসে বুক বেঁধেই আমি তখনকার বিরোধী দলীয় নেত্রীকেই সরাসরি অনুরোধ করে বসলাম। বললাম, আপনি দয়াকরে আমাদের অনশন ভাঙাতে আসলে গোটা ব্যাপারটা একটা নতুন মাত্রা পাবে। শেখ হাসিনা বললেন, “আপনি ক্ষেপেছেন? সুধা মিয়াঁ অনশন করবে। আর আমি যাবো তার অনশন ভাঙাতে?” আমার কাচুমাচু অবস্থা দেখে বা গোটা ইসূতে তাঁর অসীম দরদের দরুণই হবে হয়ত, তিনি ক্ষণিকের নীরবতা ভেঙে বললেন, “আচ্ছা ঠিক আছে। আমি সামাদ আজাদ সাহেবকে বলে দিচ্ছি। তক্ষুনি তিনি ডাকলেন তাঁর সহকারি একান্তসচিব কৃষিবীদ ড. আলাউদ্দিনকে। বললেন তাকে, “তুমি এখুনি আব্দুস সামাদ আজাদকে খবর দাও ।তিনি ওনাদের অনশন ভাঙাবেন।” আমি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আশ্বস্ত হয়ে ফিরে এলাম। কিন্তু ঠিক অনুষ্ঠানের আগেরদিন দুপুরে জানলাম সামাদভাই ঢাকায় নেই। তিনি সিলেটের সুনামগঞ্জে তাঁর পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচিতে চলে গিয়েছেন আগের রাতে। আমি আবার গেলাম শা’জাহান মিয়াঁকে সাথে নিয়ে শেখ হাসিনার কাছে। তিনি বললেন, আবার কী হ’ল? সব শুনে তিনি কুপিত হলেন। ড. আলাউদ্দিনকে তলব করলেন। তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কী তুমি জানাওনি সামাদ আজাদকে?তিনি মাথা চুলকালেন। বললেন, আমি ভুলে গিয়েছি। আমাকে মাফ করবেন। জননেত্রী হাসিনা বললেন, “সেটা পরে হবে। আপাততঃ এখুনি রেডিওগ্রাম করে তাকে খবরটা পৌছে দেও”। বলাবাহুল্য ,প্রবীন নেতা সামাদ আজাদ ঠিক সময়ে উপস্থিত হয়েছিলেন। তবে তাঁকে হেলিকপটার ভাড়া করে আসতে হয়েছিল। বেলা তিনটায় তাঁর জনসভা ছিল সিলেটের কোন একটা প্রত্যন্ত অঞ্চলে। মঞ্চে উঠেই তিনি বললেন, “তুমি আমারে ২ টার সময় ছাড়িয়া দিবা”। আমাদের অনুষ্ঠান তাতে কিছুটা সঙ্কুচিত হ’ল।আমি সবাইকে বললাম, ড. ওয়াজেদ মিয়াঁ জটিল ডায়াবেটিসে ভুগছেন। কাজেই তাঁকে দীর্ঘ সময় অনশনে আটকে রাখা যাবে না। অনুষ্ঠান সঙ্কুচিত হওয়ায় বিশিষ্ঠজনরা বক্তব্য রাখতে পারলেন না। আমাদের ‘সেক্যুলার ইউনিটি বাংলাদেশ’ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং শিশু সংগঠন রাসেল ইন্টারন্যাশনালের সংগঠকরাও কোন বক্তব্য দিতে পারলেন না।আমার জন্যে সেটা ক্ষতির কারণ হ’ল। অনেকে ভাবলেন যে আমি ইচ্ছে করেই সবাইকে বঞ্চিত করলাম। সংগ্রামের হাতিয়ার।।পৃথিবীর মুক্তিকামী লড়াকু মানুষের অহিংস আন্দোলন সংগ্রাম ও নিরস্ত্র যুদ্ধের অন্যতম তীক্ষ্ণ হাতিয়ার হচ্ছে অনশন ধর্মঘট। ভারতবর্ষে মহাত্মা গান্ধী , সীমান্তের পাঠান নেতা খান আব্দুল গাফ্ফার খান মওলানা ভাসানীর কারাজীবনের অনশনের কথা সবাই জানে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কারারুদ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকতে অনশন করে ‘১৪৪ ধারা ভেঙ্গে জেগে ওঠা’ মহান ভাষা আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন। বরিশালের মহিউদ্দীন আহমদও যোগ দেন অনশনে।তার আগে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্নিপুরুষদের অনেকে বিভিন্ন কারাগারে তাদের দাবি এগিয়ে নিতে অনশন পালন করেন। অগ্নিযুগে ৬৪ দিন অনশন করেন পাঞ্জাবের বিপ্লবী নেতা ভগৎ সিং । কবি নজরুল লিখেছিলেন তাঁর বিখ্যাত কবিতা -‘‘জাগো অনশন-বন্দী, ওঠ রেযত//জগতের লাঞ্ছিত ভাগ্যহত!//যত অত্যাচারে আজি বজ্র হানি’//হাঁকে নিপীড়িত-জন-মন-মথিত বাণী’’ । কিন্তু অনশনের কিংবদন্তী হলেন মনিপুর রাজ্যের অজেয় নারী যোদ্ধা তরুনী শামিলা। পাশাপাশি বলা যায় মেক্সিকোর শ্রমিক নেতা সিজার শ্যাভেজ ( Cesar Savez ) এর কথা ।তিনি ৩৪ দিন অনশন করেন। উল্লেখ করা যায় ফ্রান্সের সোলান্জ ফারনেক্স (Solnge Farnex )এর নাম। তিনি অনশন করেন ৪০ দিন। আর আয়ারল্যান্ডের বিপ্লবী নেতা ববি স্যান্ডস (Boby Sands) অনশন করেছিলেন ৬৬ দিন। তাঁদের কথা বিস্তারিত বলার আগে এই অকৃতি অধমের নিজের কথাটুকু বলে নিতে চাই।। এক চিলতে নরক দর্শন ।।আমার জীবনের প্রথম অনশনের গল্পটা জন্ম নিয়েছিল ১৯৫৫ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ভাষা আন্দোলনের শেষ পর্বে। মার্চ মাসের প্রথম সপ্তায় দেখলাম আমার সহবন্দী অনেকে নাক খত দিয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছেন। আমরা স্কুলছাত্র ছিলাম ১২জন। ঝরে গেলো ৭জন। রইলাম মাত্র ৫ জন। সব মিলে প্রায় একশত ছাত্র বন্দী বন্ড সই করে জেল থেকে বেরিয়ে গেলেন। স্পেশাল ব্রাঞ্চ সবার অভিভাবকের উপর চাপ সৃষ্টি করে সরকারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ কমাবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। আমার আব্বাও এসেছিলেন একই চাপে পড়ে আমাকে দিয়ে বন্ড সই করাতে। কিন্তু তিনি চোখ মুছতে মুছতে ফিরে গিয়েছিলেন। তখন তাঁর সরকারি চাকুরির পোস্টিং ছিল চট্রগ্রামে। আমি জেলে থাকায় ঢাকার বাসা পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছিল। আব্বা ফিরে যাওয়ার পরেই আমি অনশনের সিদ্ধান্ত নিলাম। ৭ মার্চ সকালে লক আপ মুক্ত হয়েই একটা কম্বল বিছিয়ে বাইরের আঙ্গিনায় শুয়ে পড়লাম। আমার বন্ধুরা আমাকে ঘিরে বসলো। উর্দু রোডে মুসলিম গার্ল্স স্কুলের বিপরীতে রাস্তা ঘেঁষে দাড়িয়ে ছিল তিন মানুষ সমান উঁচু কারা প্রাচির। তার ভিতর দৃশ্যমান তিন নম্বর লাল দালান।সেটাই তখন আমার ঠিকানা। ভোর থেকে সূ্র্যাস্ত, খোলা আকাশ দেখার স্বাধীনতা।সন্ধ্যায় লক আপ। প্রতিদিন রোলকলের মত নাম ডেকে হাজিরা নিশ্চিত করতে যেয়ে এ্যাঙ্গলো ইন্ডিয়ান জেল ইনেসপেক্টর জোসেফ আমার নাম বানিয়ে ফেললো,-‘স্যামুয়েল আফরিণ’। কারারক্ষীর কাছে খবর পেয়ে সেই আসলো সবার আগে। ব্যাপারটা জানতে পেরে জেলার ছুটে আসলেন। জেল সুপার আসলেন। ডি আইজি আসলেন । কারও চাপে কোন কাজ হ’ল না। কাকতালীয়ভাবে সেদিন দুপুর ১২টার দিকে জেল পরিদর্শণে এসেছিলেন প্রাদেশিক চীফ সেক্রেটারি। ছাত্র বন্দীদের সাথে দেখা করাই ছিল তার প্রধান উদ্দেশ্য। তখন ৯২-ক ধারার রাষ্ট্রপতি শাসন বলবৎ ছিল। সর্বজয়ী যুক্তফ্রন্ট সরকারকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। গভর্ণর হয়ে এসেছিলেন মেজর জেনারেল ইস্কান্দার মীর্জা। চীফ সেক্রেটারি সাহেব বিষয়টা জানতে পেরে চলে আসলেন আমার অনশনের ভূমি শয্যার পাশে। তার সঙ্গে মাসকয়েক আগে আমারএকবার দেখা হয়েছিল।সে গল্পটা আগে কখনও বলা হয়নি। তিনি প্রধান অতিথি হয়ে এসেছিলেন লালবাগে আমার প্রিয় পাঠাগার ‘গ্রন্থবিতানে’এর বার্ষিক অনুষ্ঠানে। এর পিছনেও এক চিলতে গল্প রয়েছে। ১৯৫০ এর দাঙ্গায় আমাদের পাড়ায় ‘হরিদাশ পাঠাগার লুঠ হয়ে গেলো। সেই শূন্য ঘরে পাড়ার বন্ধুদের নিয়ে ছোট করে গড়ে তুললাম ‘নবারুণ পাঠাগার’। সেটা এগিয়ে যাচ্ছিল। এর মধ্যে ইউনাইটেড সার্ভিস ক্লাবের সভাপতি খন্দকার কেরামত আলি এবং সম্পাদক গোলাম সোলায়মান এসে বললেন, খোকা আসো আমরা পাঠাগারটা সবাই মিলে গড়ি। অমরা এক কথায় রাজি হয়ে গেলাম।নতুন নামে গ্রন্থবিতান জেগে উঠলো। হরমোহনশীল স্ট্রীটে দশকাঠা নিজস্ব জমিতে একতালা ভবনে এখনও নিশ্চই তার অস্তিত্ব রয়েছে। গ্রন্থবিতানের প্রথম সাধারণ সভায় সম্পাদক গোলাম সোলায়মানের পক্ষ্যে বার্ষিক রিপোর্ট পড়লাম আমি প্রধান অতিথির পাশে দাড়িয়ে। সে সময়ের তথ্য দফতরের পাক্ষিক পত্রিকা ‘পাক সমাচার’এর বাইরের প্রচ্ছদে আমার সেই ছবি ছাপা হয়েছিল। ভাষণ দিতে উঠে তিনি আমার পাঠ এবং পাঠাগার গড়ায় আমার অল্প বয়সের ভূমিকার প্রশংসা করেছিলেন। আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। আর জেলে যখন দেখা হ’ল তখন আমি কেবল দশম শ্রেণীতে উঠেছি। চীফ সেক্রেটারি তখন মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন। তিনি আমার পাশে এসে ঘনিষ্ঠ হয়ে দাড়ালেন পারিষদবর্গ সহ। আমার চেহারা হয়ত তাঁর মনে ছিল। তিনি আমাকে দেখে বললেন, আরে বাচ্চা তুম এঁহা? চলো এখনই আমি তোমার বাড়ি যাওয়ার ব্যবস্থা করছি। আমি বললাম, সবাইকে যদি ছেড়ে দেন তবেই আমি যাব। তাঁর মুখটা একটু কঠিন হয়ে গেলো। বললেন সেটা পরে দেখা যাবে। বন্দীরা সবাই তখন আমাকে ঘিরে দাড়িয়েছিলেন। ভিড়ের মধ্য থেকে ঠিক সেই সময় কেউ একটা চিকন ঢিল ছুড়লো মুখে ‘ঠুস’ শব্দ করে। বুঝলাম আমার দুষ্টু বন্ধুদের কারও কাজ। কিন্তু লাগবি লাগ ঠিক বড় সাহেবের কপালে । সঙ্গে সঙ্গে কারা রক্ষীদের হুইসেলে বিপদ সঙ্কেত বেজে উঠলো। পাগলা ঘন্টি বাজতে পারতো। কিন্তু আমাদের জেষ্ঠ বন্দীরা ব্যাপারটা সামলে নিলেন। কিন্তু আমি রক্ষা পেলাম না। জেল ইনেসপেকটর আমাকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে গেলো ৬নম্বর কনডেম সেলে ।৬ফুট উঁচুতে ছাদ ঘেসে ছোট্ট একটা ফোকর । বাকিটা ঠাসা দেয়াল। রোমহর্ষখ ঘুট ঘুটে অন্ধকার ৬ফুট ৮ ফুট মাপের পায়রার খোপ। ২৪ঘন্টা পর ১০৫ জ্বরে বেহুশ অবস্থায় জেল হাসপাতালে স্থানান্তরিত হলাম। ফাঁসির আসামি না হয়েও ফাঁসির সেলে অবস্থান দারুণ ভাগ্যের ব্যাপার।এক চিলতে নরক দর্শণ। ইতিহাসের ৫টি দীর্ঘতম অনশন।।জিহ্বায় এক ফোটা মধু ঘসে দিয়ে আইরোম শামিলার ‘১৬ বছরের অবিশ্বাস্য অনশন’ ভাঙানো হয়েছিল। এটা ইতিহাসের এক নজীর বিহীন ঘটনা। ২৮ বছর বয়সে শামিলা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাঁর এই ঐতিহাসিক অনশন ব্রত শুরু করেন। মনিপুরের অনন্যা অগ্নিকন্যা এভাবেই প্রতিবাদী হয়েছিলেন সামরিক বাহিনীর ‘এ-এফ-এস-পি-এ’ তথা বিশেষ ক্ষমতা আইনের নির্মমতার বিরুদ্ধে। তার জন্মস্থান উত্তর-পূর্ব ভারতের পর্বতকন্যা মনিপুর রাজ্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে নানা সমাধানহীন বিরোধে জড়িয়ে আছে সুদীর্ঘ সময় ধরে। দশজন বেসামরিক নাগরিককে সেনা বাহিনী গুলি করে হত্যা করলো। কিন্তু তারা বিচারের জন্যে অভিযুক্ত হল না। তাই তিনি অনশণ শুরু করলেন। ভারতের আইনে আত্মহত্যা বেআইনী কাজ । তাইতে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করলো। সারাপৃথিবী জানলো তার এই নিঃশব্দ অবিরাম সংগ্রামের কথা। মানবাধিকার সংগঠনগুলো কতভাবে সোচ্চার হ’ল। জাতিসঙ্ঘ জানলো। তবুও বেসামরিক নাগরিকদের উপর এই সেনা বরবরতা অব্যাহত থাকলো।মৃত্যুর ধারা অব্যাহত রইলো। বছরের পর বছর গেলো। মৃত্যুর মিছিল ক্রমেই দীর্ঘতর হ’ল । কোন প্রতিকার হ’ল না। শামিলার দাবি ‘বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল বা তার মানবিকীকরণ’ পূরণ হ’ল না। তিনিও অনশন ভাঙলেন না। নাকের ভিতর পাইপ ঢুকিয়ে পুষ্টি সঞ্চালন প্রক্রিয়া অব্যাহত রইলো। তাকে মরতে দিলনা পুলিশ প্রশাসন। যে আইন হত্যার অপরাধকে ঢেকে রাখে,শার্মিলা তার মৃত্যু চেয়ে নিজের জীবনকে সপে দিয়েছিলেন মৃত্যুর দরজায় ।কিন্তু মৃত্যঞ্জয় তিনি। ভারতের জাতির পিতা বার বার অনশন করেছিলেন স্বাধীনতার জন্যে। ব্রিটিশ তার দাবি মেনেছিল। কিন্তু অদৃষ্টের পরিহাস এই যে, স্বাধীন ভারতে শার্মিলার এই নজীরবিহীন দীর্ঘতম অনশন সরকারের উপর কোন প্রভাব ফেললো না।অন্য এক সূত্রমতে আইরম চানু সামিলা কোন অন্নজল নেননি ‘৫০০ সপ্তাহ’। জোর করে নাকের ভিতর টিউব দিয়ে পুষ্টি পাচার করে সরকার তাকে বাচিয়ে রেখেছিল।১৯৫৮ সাল থেকে পূর্ব ভারেতর সঙ্কটাকীর্ণ বিভিন্ন রাজ্যে এই বর্বর আইন বলবৎ রয়েছে।১৯৯০ সালে জম্মু ও কাশ্মীরেও বলবৎ হয়েছে সেনা বাহিনীর এই বিশেষ ক্ষমতা আইন। সম্প্রতি মনিপুর স্বাধীনতার দাবি নিয়ে ফুঁসে উঠেছে। মেক্সিকোরসিজার শ্যাভেজ।। ১৯২৭ সালে মেক্সিকোর এক শ্রমজীবী পরিবারে জন্মগ্রহন করেন সিজার শ্যাভেজ। প্রথম জীবনে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কেলিফরর্ণিয়া এবং এরিযোনা রাজ্যে বিভিন্ন ধরণের কৃষি ফার্মে কাজ করেন। তার মনে হয়েছিল তার সাথে মানবিক আচরণ করা হচ্ছেনা। দাশ শ্রমিকের মত ব্যবহার পেয়ে তিনি হতবাক হয়েছিলেন। ১৯৬২ সালে কৃষি শ্রমিকদের নিয়ে একটি সংগঠন তৈরী করে তিনি প্রতিবাদ শুরু করেন। শ্রমিকদের সাথে মুক্ত মানুষের মত আচরণ দাবী করেন। হাজার হাজার মানুষ তার সাথে সংহতি প্রকাশ করেন। তিনি সমাবেশ এবং প্রতিবাদ সভা করতে থাকেন।কিন্তু সবই অরণ্যে রোদন হয়। এরপর তিনি অভিবাসী শ্রমজীবী মানুষের প্রতি মানবিক আচরণের দাবিতে অনশণ শুরু করেন। ৩৬ দিনে তার ৩০ পাউন্ড ওজন হ্রাস পায়। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের বীর হিসাবে নন্দিত সিজার শ্যাভেজ ১৯৯৩ সালে মৃত্যু বরণ করেন।সোলাঞ্জ ফারনেক্স।।ফ্রান্সের সবচাইতে প্রভাবশালী রাজনীতিকদের অন্যতম শোলাঞ্জ ফারনেক্স।তিনি আবহাওয়ার উপর পারমানবিক শক্তির প্রতিক্রিয়া এবং সম্ভাব্য রিএকটর বিস্ফোরণের ভয়াবহতা সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্যে কাজ করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তার আন্দোলনের প্রতি জনসমর্থন বৃদ্ধির আশায় তিনি ৪০ দিন অনশন করেন। তিনি আশা করেছিলেন সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ পারমানবিক অস্ত্র পরীক্ষা করার পক্ষে ভোট দেবে। কিন্তু তাঁর সে আশা সফল হয়নি তখন। কিন্তু আজও সেই সাহসী নারী ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন তার সেই মহৎ কাজের জন্যে।ববি স্যান্ডস এর ৬৬ দিন অনশন ।।ববি স্যান্ডস আইরিশ ইতিহাসের সবচেয়ে ‘কুখ্যাত’ একজন বিপ্লবী মানুষের নাম। ১৯৭২ সালে ১৮ বছর বয়সে তিনি অস্থায়ী আইরশ বিপ্লবী বাহিনীতে যোগদান করেন। চারটি বেআইনী আগ্নেয়াস্ত্র সহ তিনি গ্রেফতার হন। ১৯৭৬ সালে মুক্তি পেয়ে পশ্চিম বেলফাস্টে নিজের পরিবারের কাছে ফিরে আসেন। এবার তিনি বোমাবাজির জন্যে গ্রেফতার হন। তার ১৪ বছর জেল হয়।জেলখানায় নানা উৎপাতের জন্যে তাকে ২২দিন নগ্ন অবস্থায় ন্যূনতম আহারে নির্জন সেলে বন্দী রাখা হয়। তার সমর্থনে জেলখানায় “নোংরা প্রতিবাদ” শুরু হয়। বন্দীরা স্নান পরিহার করে মলমূত্র দিয়ে দেয়াল নোঙরা করতে থাকে। ১৯৮১ সালে তিনি নিরযাতনমূলক বর্বর কারা আইন সংশোধনের দাবিতে অনশন শুরু করেন। আরও ৯ বিপ্লবী বন্দী তাকে অনুসরণ করেন। সারা পৃথিবীতে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। স্যান্ডস কারাগারে থেকেই পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু সেই লাগাতার অনশনেই তার নিজের ও সঙ্গী ৯জনের মৃত্যু ঘটে। ৬৬দিন অনশন করে স্যান্ডস বীরের মৃত্যূ বরণ করেন। ঘুচে যায় তার ‘নোঙরা’ অপনাম। তিনি এখন একজন খ্যাতিমান বীর শহীদ হিসাবে আইরিশ ইতিহাসে বেঁচে আছেন।ভগৎ সিং এর ৬৪ দিন অনশন।।ব্রিটিশ যুগে মাতৃভূমির পরাধীনতার শিকল ছেঁড়ার নিরন্তর সংগ্রামী বিপ্লবী ভগৎ সিং ৬৪ দিন লাগাতার অনশন করে রেকর্ড সৃষ্টি করেন।: প্রভাবশালী ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী বিপ্লবী ভগৎ সিংকে শহীদ ভগৎ সিংহ নামে অভিহিত করা হয়। ১৯১৯ সালের জালিয়ানওয়ালাবাগের নৃশংস হত্যাকাণ্ড তার মনে গভীর রেখাপাত করে। তিনি বাসে করে ৪০/৫০ মাইল দূরে অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালাবাগে ছুটে যান। সেখানকার ত্রাস ও দুর্যোগের পরিবেশ উপেক্ষা করে কুড়িয়ে আনেন সেই রক্তরঞ্জিত মাটি। এভাবে ভগৎ সিং ছেলেবেলা থেকেই ব্রিটিশদের প্রতি ঘৃণা ও বিপ্লবীদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রর্দশন করেছেন। আর দেশকে মুক্ত করার জন্য জীবন বাজী রেখে ব্রিটিশ বিরোধী বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে শেষ পর্যন্ত ফাঁসির রজ্জু হাসিমুখে বরণ করেছেন। ১৯০৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর এই মহান বীর পাঞ্জাবের লায়ালপুরে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা সর্দার কিসান সিংহ সান্ধু ভারতবর্ষের প্রথম সআবাধীনতা ঘোষক ও স্ব ঘোষিত প্রবাসী সরকার প্রধান মহেন্দ্র প্রতাপ সিং এর সাথে সংস্রব রেখে লাহোর দূর্গে বন্দী হন যখন সহস্র বিপ্লবীকে ব্রিটিশ নির্মমভাবে নিশ্চিহ্ণ করেছিল। মায়ের নাম বিদ্যাবতী। ভগৎ সিংয়ের বাবা তাঁকে আর্যসমাজের বিদ্যালয় দয়ানন্দ অ্যাংলো-বৈদিক স্কুলে ভর্তি করান। মেট্রিক পাসের পর ভগৎ সিং ন্যাশনাল কলেজে (স্বদেশী বিদ্যালয়) ভর্তি হন। ওই কলেজে পড়াকালে আজীবন সংগ্রামের সাথী শুকদেব, যশপাল ও ভগবতীচরণ ভোরার সঙ্গে পরিচিত হন। ইতিহাস ও রাজনীতি বিষয়ক পড়াশোনার প্রতি তার আগ্রহ ছিল সবচেয়ে বেশি। ইতালির দেশপ্রেমিক ম্যাৎসিনি ও গ্যারিবল্ডি, আয়ারল্যান্ডের বিপ্লবী ইমন-ডি-ভ্যালেরা ও রুশ বিপ্লবী ক্রোপটকিনের ঘটনাবহুল জীবনের নানা দিক নিয়ে এ সময় পড়াশুনা করেন। আরও পড়েন ভলতেয়ার আর রুশোর রচনাবলী।১৯২২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী হঠাৎ উত্তরপ্রদেশের গোরখপুর জেলার চৌরীচেরা গ্রামে কৃষকদের শান্তিপূর্ণ অসহযোগ আন্দোলন হঠিয়ে দেয়ার জন্য পুলিশ জনতার উপর গুলি চালায়। এতে কয়েকজন কৃষক মারা যায়। ফলে বিক্ষুব্ধ জনতা থানা ঘেরোও করে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। থানার ভিতর ২২ জন পুলিশ পুড়ে মারা যায়। এই ঘটনার কারণে গান্ধীজী অসহযোগ আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ান। এতে হতাশ হয়ে ভগৎ যুব বিপ্লবী আন্দোলনে যোগ দেন এবং সশস্ত্র বিপ্লবের পন্থায় ভারত থেকে ব্রিটিশ শাসন উৎখাত করার কথা প্রচার করতে থাকেন।ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মানবতা বিরোধী বর্বর দমন আইন ‘রাওলাট এ্যাকট’ পাশের প্রক্রিয়া রুখে দেওয়ার জন্য, ভগৎ সিং এর ভাষায় ‘বধিরের কানের কাছে আওয়াজ তুলতে’ বিপ্লবীরা ৮ এপ্রিল’১৯২২ সেন্ট্রাল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলিতে বোমা নিক্ষেপ করেন। বোমা ফাটিয়ে নির্ভয়ে লিফলেট বিলি করতে করতে ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর গ্রেফতার হন।জেলে বন্দী থাকাকালে ভগৎ সিং ব্রিটিশ ও ভারতীয় বন্দীদের সমানাধিকারের দাবিতে ৬৪ দিন অনশন করেন। তার অনশনের ফলে ব্রিটিশ সরকার নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়। ১৯৩০-৩১ সালে জেলের মধ্যে ফাঁসির অপেক্ষায় যখন ভগৎ সিং এর দিন কাটছিল সে সময় তিনি ‘হোয়াই আই এম এন এথিস্ট’ (‘why I am An Atheist’) প্রবন্ধটি লিখেছিলেন। ফাঁসির কয়েক মাস পরে লাহোরের ‘দি পিপল’ নামক পত্রিকায় ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩১ প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়। ১৯৩০ সালের ৭ অক্টোবর। তিন ব্রিটিশ বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত এক বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ভগৎ সিং, সুখদেব ও রাজগুরুকে অপরাধী সাব্যস্ত করে এবং ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার রায় প্রদান করে। অবশেষে ১৯৩১ সালের ২৩ মার্চ সন্ধ্যা ৭ টায় এই তিন বিপ্লবীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। মহাত্মা গান্ধী ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের সর্বাপেক্ষা বলিষ্ঠ ধারার অন্যতম পথিকৃৎ ‘শহীদ-ই-আজম্’ ভগৎ সিং ও তাঁর সাথীদের প্রাণ রক্ষার আবেদনে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন।তিনি তরুণ বিপ্লবী ক্ষুদিরামের ফাঁসি রদ করে অনুকম্পা প্রদর্শনের আবেদনে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানান।তিনি বলেন এরকম বিপ্লবী তৎপরতা দিয়ে ভারত স্বাধীন করা যাবেনা।এসব কারণে তিনি ব্রিটিশের কাছে মহাত্মা হয়ে ওঠেন। তবে তাঁর সমালোচকরা বলে থাকেন যে ব্রিটিশকে বাঘের পিঠ থেকে নামার সুযোগ করে দিয়েছিলেন গান্ধিজী।তাঁর সম্মতিক্রমেই ভারত ভাগ করে ব্রিটিশ নির্বিঘ্নে প্রস্থান করতে পেরেছিল।
লেখক : সাংবাদিক ও কলাম লেখক