সুমাইয়া আওয়ারা
নিরেট সত্য কথা বলার মত একজন মানুষ চলে গেলেন ঊর্ধ্ব গগনে। আমার অসম্ভব পছন্দের অনুকরণীয় একজন ব্যক্তিত্ব সৈয়দ আবুল মকসুদ স্যার। স্যারের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার অডিটোরিয়ামে সংবিধান দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে। পরবর্তীতে আমার এক সময়ের কাজের ক্ষেত্র শাহবাগের পাঠক সমাবেশ কেন্দ্রে স্যারের লেখা ও বই প্রকাশের বিষয়ে কয়েকবার আলাপ করার সুযোগ হয়। অসম্ভব বন্ধুভাবাপন্ন একজন মানুষ ছিলেন তিনি। আলাপকালে স্যারের মুখ থেকে জীবন সম্পর্কিত দারুণ কিছু কথা শোনার সৌভাগ্য হয়েছিলো। স্যারের চলে যাওয়ার সংবাদের পর থেকে কথাগুলো কানে এসে ভীষণ বাজছে। তাঁর মত একজন প্রগাঢ় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাভাজন গুণীজনের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত হতে পেরে অন্তরাত্মায় গর্ব অনুভব করতাম, নিজেকে গৌরবান্বিত মনে করতাম। তাঁর সাদা বসন, পরিশীলিত অবয়ব ও অভাবনীয় ব্যক্তিত্ব আমার মনে শ্রদ্ধার আবেশ ছড়াতো। যার বসন সাদা অন্তরও সাদা। এমন একজন মানুষ ছিলেন স্যার। স্যারের সাথে দেখা করার কথা ছিলো। আর দেখা করা হলো না। চিরকাল আর দেখা হবেও না। সময়টা বদলে গেলো এক লহমায়। অপরিমেয় দুঃখ থেকে গেলো মনে। প্রতি সপ্তাহে স্যারের লেখা কলাম পড়বো বলে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকতাম। গত মঙ্গলবারেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। স্বভাবসুলভ পত্রিকার পাতা উল্টিয়ে স্যারের লেখা খুঁজেছি। পাই নি। অজান্তেই মন খারাপ হয়েছে। রাতে হঠাৎ স্যারের চলে যাওয়ার সংবাদ শুনে স্তব্ধ হয়ে গেছি। ভীষণ কান্না পেয়েছে। আর কখনো স্যারকে দেখতে পাবো না। তাঁর কোন নতুন লেখা পড়া হবে না। এ কথা ভাবতেই ভিতরে কষ্ট জমা হচ্ছে। ছোট্ট এ পৃথিবীতে ক্ষণিকের এ জীবন হায়। স্বল্প দিনের এই অভিযাত্রা শেষে নিয়তির নির্ধারিত গন্তব্যে যেতে হবে সবাইকে। জানি তাতে আহাজারি করা কোন সমাধান নয়। তবু কিছু মুখের হারিয়ে যাওয়া সত্যি মেনে নেবার অনুমোদন মেলেনা। স্যার, আপনি আপনার জীবনের পরিভ্রমন পরিসমাপ্তি করেছেন। প্রথম আলোর সম্পাদকীয় পাতায় আপনাকে অনেক বছর অনেক দিন অনেক বার খুঁজবো। ভালো থাকবেন স্যার।
লেখক: সাবেক শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়