-শামসুল আরেফিন খান
রূপান্তর কতপ্রকার এবং কি কি? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর আমার জানা নেই।শেক্সপীয়ার
রবীন্দ্রনাথ কার্লমার্ক্স ফ্রেডারিক এ্যাঙ্গেলস লেনিন মাওজে দঙ স্টালিন হিটলার হয়ত জানতেন। কিংবা
জানতেন না। জানতেন সবটুকু কেবল ডারউইন । কারন তিনিই বিবর্তনবাদের জনক। আগে বিবর্তন পরে রূপান্তর
নাকি আগে রূপান্তর পরে বিবর্তন ? মুরগী আগে, হাস আগে , বলাকা আগে , পাখি উটপাখি,তোতা পাখি
চড়ুই ,পাখি ঘুঘু পাখি, এসব আগে না ডিম আগে? বৃষ্টি আগে না মেঘ আগে?তাল পড়িয়া ঢিপ করে না ঢিপ
করিয়া তাল পড়ে? মানুষ আগে না ধর্ম আগে ? গ্রন্থ আগে না মানুষ আগে? “মানুষ অনিয়াছে গ্রন্থ কেতাব/ গ্রন্থ
আনে নাই মানুষ কোন।।এই অবান্তর প্যাচালের কোন শেষ নেই ।
আমার কাছে রূপান্তরের কিছু চাক্ষুশ প্রমান ও দৃষ্টিান্ত রয়েছে। তার মধ্যে সাইজে ও ওজনে ক্ষুদ্র তবে গুরুত্বে
অপরিসীম যে দৃষ্টান্ত তার নাম হচ্ছে অভি। জ্ঞান পিপাসু গ্রন্থ আসক্ত সমভাবনাময় মেধাবি ছাত্র। মায়ের চোখের
তারা । শেষ জীবনের আশা ভরসা। বাপের বুকের উপর ঘুমিয়ে বেড়ে ওঠা স্বপ্নের রাজপুত্র যেমন সম্রাট শাহজাহানের
আওরঙজেব।কিন্তু হঠাৎ করে কিসে কী হ’ল কে জানে? সে কী নিয়তি না তকদির না বিধিলিপি জানিনা। তার
জীবনে এলা ১. নদী বক্ষে প্রমোদ বিহার ২. হিজবুল বাহার এবং ৩.কালো চশমা। সেই ত্রহস্পর্ষে স্কলার থেকে
পিস্তলবাজ ,চাক্কুবাজ, চাঁদাবাজ , নারীবাজ, চাঁদাবাজ ! করুণ পতন? কী ভয়াবহ রূপান্তর! সেই মেধাদীপ্ত সম্ভামনাময়
তরুণ অভি আমাদের চোখের সামনেই পঙ্কে নেমে একটু একটু করে চোরা বালিতে তলিয়ে গেলো্ তার মত আরও
অনেক মেধাবি তরুণকে জাপ্টে ধরে। কী দুর্ভাগ্য জাতির!আমার ঝোলায় রয়েছে প্রাচীন কাব্যের গুরু বাল্মিকীর লুটেরা
দস্যূ থেকে ঋষি হয়ে ওঠার কিংবদন্তি। এসব হ’ল মর্কট থেকে মানব হওয়ার গল।প। আবার তার বিপরীতে
মানুষ থেকে বরাহ কিঙবা শরমেয়তে পরিণত হওয় বিপরীতমুখী রুপান্তরের বহু দৃষ্টান্ত। যেমন সেকালের
স্যেকুলার জিন্নাহ ও পরবর্তীকালের অলি আহাদ প্রমুখের “স্বপ্নানু মায়ানু মতিভ্রমের” গল্প।
মাঝারি মাত্রার আর একটি গম্ভীর রূপান্তর ঘটতে চলেছে বা ঘটে গেছে ইতোমধ্যে। ঢাকা মহানগরীর মীর্জা আব্বাসের
দুর্ভাগ্য রজনীর অবসান ঘটাতে চলেছে একটি বিবর্তনে। সেই রূপান্তরের আলামত ইতোমধ্যেই দেদীপ্যমান হয়েছে।
হাটের ভিতর ভাঙা সেই হাড়ির ভিতর থেকে বেরিয়ে মেকুর ম্যাও করেছে। জিয়াউর রহমানের প্রিয়পাত্র মীর্জা আব্বাস
ফালুর চাচাতো ভাই।
ফালু দারুণ ঘোড়েল মাল। আমি তাকে ছেড়া স্যান্ডেল পরে ফাই ফরমাশ খাটতে দেখেছি। তার খোচা খোচা দাড়ি
তেল ছাড়া ফ্যাকাশে বিবর্ণ চুলের ‘লুজার’ মার্কা চেহারা-সুরত কীভাবে চক চকে হয়ে গেলো একটু একটু
করে ? তাও স্বচক্ষে দেখার সুযোগ হয়েছে আমার। সূচনাটা বেশ ঐতিহাসিক। সেদিন ছিল ২৭ নভেম্বর ১৯৮৩। বিরোধী
দুই জোট ১৫ দল ও ৭ দল সচিবালয় অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে প্রথম মাঠে নামলো। বেলা ৩টার সময় কার্ফ্যু ঘোষিত হ’ল।
নাতিদীর্ঘ একটা মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন বেগম জিয়া। বিডিআর তার পথ আটকে দাড়ালো। বেগম সেদিন বৈধব্য
বেশে মলিন বদনে ছিলেন। তিনি বিডিআরে এর সম্মতিক্রমেই ফজলুল হক হলের ভিতর আশ্রয় নিলেন । আমি একটা
হাফটন ট্রাকে মাইক বেঁধে সেই মিছিলের সাথে থেকে দলবল নিয়ে স্লোগান দিচ্ছিলাম। সে অনেক কথা ।
অন্যকখনও বলবো। কার্ফ্যূ বুঝে এবাউট টার্ণ করে এপথ সে পথ হয়ে সেই ফজলুল হক হলের অন্য পাশদিয়েই
ছুটছিলাম চক বাজারের দিকে মাইকটা ফেরত দেয়ার জন্যে। হটাৎ বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াকে
দৌড়ে দৌড়ে গাড়ী গাড়ী বলে গলা ফাটাতে শুনে ও দেখে আমি গাড়ি থামালাম। বন্ধু রফিকুল বরলেন , ম্যাডাম
আটকে পড়েছেন । তাঁর জন্যে যে কোন একটা গাড়ি না হলেই নয়। আমি ভেবে দেখলাম মাইকটা ফেরত দিয়ে ইসলাম
বাগে কোথাও রাত কটাতে হতে পারে। হয়ত কোন জুতার কারখানায় শীতল পাটি বিছানো ফ্লোরে শুয়ে সারারাত
ছারপোকার কামড়ে ছটফট করব। এই যাত্রায় বেগম জিয়াকে সঙ্গী করলে ধরা খেতে হবে । মাথা চুলকাতে চুলকাতে
বললাম, দেখি কোন গাড়ি জোগাড় করতে পারি কিনা। ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া যেন একটু হতাশ হলেন।
এর মধ্যে সেখানে ৫০ সিসি হেন্ডা মটর সাইকেল নিয়ে ফালুর আবির্ভাব ঘটতে দেখলঅম। তার পরেরটুকু আর জানিনা।
সেই ফালু এখন শেয়ার মার্কেটের রাজা দরবেশের পার্টনার।আর দরবেশ সরকারের উপদেষ্টাই শুধু না অনেক কিছুরই
বড় পার্টনার । করোণা ভ্যাকসিনের সবচেয়ে বড় মহাজন।
কাজেই ঢাকামহানগরীর আসন্ন বাই ইলেকশনে মীর্জা আব্বাসকে আর ঠেকায় কে? দুয়ে দুয়ে চার হতেই হবে। গত
ইলেকশানে জিয়ার বহু গর্বের ধন বহুদলীয় গণতন্ত্রের একটা রঙচটা ফ্যাকাশে নমুনা স্থাপন করা গেছে।
স্বয়ং বেগম জিয়া তার ফায়দা ভোগ করছেন। সামনে তাঁর রাজনীতি থেকে খসে পড়ে বিদেশে হিজরত করার
ইস্যুটাও ঘরের আড়ায় ঝুলছে। এ সময় বেআড়া নাচীজ হেফাজতে ইসলামের নাহক তর্জন গর্জন সমূহ
কবরে দাফন করার জন্য অনেক অবান্তর কান্ডের প্রয়োজন হলেও হতে পারে। সেই কবর খুড়তে পারিবারিক
অভিজ্ঞতা নিয়ে ফালু ও তার চাচাতো ভাই মীর্জা আব্বাস ভাড়ার টাট্টু হলে আমি অবাক হব না।
আপাতঃ দৃষ্টিতে হেফাজতে ইসলাম চিৎপটাং হয়ে মরা সৈনিকের অভিনয় করছে। কিন্তু তাদের একশন পার্টনার
ও প্রবাসী অভিভাবকরা ইউ টিউবে ভিডিও দলিল রেখে “ইসলামী বিপ্লব কামিয়াব করার” হুঙ্কার ছেড়ে বলছে ,
এতো কেবল কলির সন্ধ্যে। আগে আগে দেখো কেয়া কেয়া হোতা হ্যায়। একই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান ও সৌদি
আরব চরম দুর্দিনে হাজার হাজার অক্সিজেন সিলিন্ডার ও করোণা ভ্যাকসিন উপঢৌকন নিয়ে দক্ষিন পূর্ব
এশিয়ায় বাইডেন সরকারের পরম মিত্র ভারতের সাথে গলাগলি কোলাকুলি করতে এগিয়ে এসেছে। এদিকে
আবার ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পরে প্রধান সেনাপতি করোণাকালে বাংলাদেশে পরযটন করে গেলেন যে শুধু
তাই না বড়ভাইসুলভ অনভিপ্রেত আচরণে রোহিঙ্গা সীমান্তে। দুপা বেশি হেটে কূটনীতির সীমাও লঙ্গন করলেন। ।
অন্যদিকে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে বাংলাদেশের কন্ঠলগ্ন হয়ে একই সাথে মহব্বত
চাঞ্চল্য ও উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা গেলো। এমতাবস্থায অদূর ভবিষ্যতে বহুমতের বহুদলের সরকার
গঠনের সম্ভাবনাকে নাকচ করা যায়না। কারণ আপাতঃদৃষ্টিতে হেফাজতে ইসলাম কুপোকাত হয়ে কামারের
হাপরের মত নাভিশ্বাস ছাড়লেও তাদের নটের গুরু ও অভিভাবকরা বিদেশে বসে কথিত ইসলামী বিপ্লব
সফল করার লক্ষ্য নিয়ে “প্রবাসী সরকার” ঘোষণার হুমকি ধামকি দিতে শুরু করেছে। মুখে বলছে দ্বিতীয় বিপ্লব
ঘোষণার কথা।
২০১৮ নির্বাচনের ছকে টোপ গিলেছিলেন টগবগে ছটফটে তরুণী ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানা। কিন্তু সহসা
তার কপালে ছিকা ছিড়ছেনা । কারণ তার অতি চালাক পিতা ওলি আহাদ নিজ সন্তানের কপালে কলঙ্কের
যে তিলক পরিয়ে রেখেছেন সেটা এ জন্মে কেন বহু জন্মেও হয়ত মুছবেনা। শুদ্ধভাষায় যাকে বলে অনপনেয়
কলঙ্ক। যতই ঘষো মাজো উঠবে না কখনও সে কলঙ্কের দাগ। রুহিন ফারহানার জন্যে আমার দুঃখ হয়। এমন
একটা চটপটে ছটফটে মেধাদীপ্ত মেয়ে । তার কপালটাই এমন মন্দ।
কিন্তু রাজনীতিতে কী না হয়। জাসদ করা বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রেক্ষাপট রচনাকারীদের একজন খুনিতূল্য ব্যক্তি ও ৮৮
সালে খুনি এরশাদকে ইন্ডেমনিটি প্রদানকারী স্বাক্ষী গোপাল রাবার স্ট্যাম্প পার্লামেন্টের
গৃহপালিত বিরোধীদলীয় নেতা হিসাবে কুখ্যাত আসম রব ১৯৯৬তে শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রী। প্রতিবাদী সংগ্রামী
কত মানুষের রক্তে স্নান করলো খুনি এরশাদ তার স্বৈর শাসনামলে। সেই হ’ল শেখ হাসিনার প্রধান মিত্র । সংসদীয়
বিরোধী দলের নেতাএবং আমৃত্যূ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত।
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা আমার স্নেহাষ্পদ ব্যক্তি। মীর্জা আব্বাস তার বাড়া ভাতে ছাই ঢালতে পারে ভেবে দৃঃখ পাই ।
কারন আমার সর্বকনিষ্ট সন্তান শর্মিলা হালে যুক্তরাষ্ট্রে সিপিএ( বৃটেনের চার্টার্ড একাউন্টেনট)ঢাকার হলিক্রস গার্লস
স্কুলে যখন ৩ ক্লাসে পড়তো তখন রুমিন ফারহানা তার সহপাঠী ছিল। রোজ দিনই অলি আহাদ সাহেব তাকে ছুটি
হলে আনতে যেতেন। আমিও যেতাম আমার মেয়েকে আনতে। দুজনেই বেশ আগে ভাগে যেতাম।অপেক্ষার সময়টুকু
একটা বট গাছের তলায় শান বাঁধানো বৃত্তের ওপর বসে গল্পগুজব করে কাটিয়ে দিতাম। ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ
মানুষ অলি আহাদ সাহেব বলতেন ইতিহাসের নানা কথা। আমি আশৈশব রাজপথের স্লোগানবাজ পুলিশের লাঠি
গুতা টিয়ারগ্যাস খাওয়া জেল খাটা ফেরার থাকা নগন্য রাজনৈতিক কর্মী। ৮০ দশকে স্বৈরাচার বিরোধী
আন্দোলনের গন গনে সময়টাতে ইতিহাসের সেই মহিরুহের সাথে আলাপচারিতায় অনেক ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলাম। কিন্তু
কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও তাঁর ওপর শ্রদ্ধা ফিরিয়ে আনতে পারিনি। কেন জানিনা বার বারই ১৫ আগস্ট ৭৫ এর
দুঃস্বপ্ন আমাকে গ্রাস করতো। কতচেষ্টা করেছি টাইমমেশিনে চেপে ৪৮ , ৪৯ , ৫০ এর পটভুমিতে ফিরে গিয়ে ভাষা
আন্দোলনের কান্ডারিশেখ মুজিবুর রহমান,রণেশ দাস গুপ্ত , মোহাম্মদ সুলতান এর পাশে দাঁড় করাতে । কিন্তু পারিনি।
চেষ্টা করেছি ভাষাযুদ্ধের অন্যতম নায়ক ও পূর্ব পাকিস্তান যুব লীগের প্রাণপুরুষ ক্ষণজন্মা ইমাদুল্লাহ লালাভাইর
সাথে যুগলবন্দী ছবি আঁকতে। কৃতি সাংবাদিকঅগ্রজ আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরি সম্প্রতি যা পেরেছেন আমি সে সময়
তা পারিনি। বারবারই খুনি জল্লাদ মুশতাকের উল্টো পিঠেই তার ছবি ভেসে উঠেছে।। মুশতাক কায়া। অলি আহাদ
তার ছায়া।টাকার এপিঠ ওপিঠ। মানসপটে ভেসে উঠেছে ৩২নম্বর ধঅনমন্ডির সিঁড়ির ওপর পড়ে থাকা জাতির
জনকের লাশ। পাপড়ি ভিজে চোখ বুজে গিয়েছে।শুনতে পেয়েছি জল্লাদের অট্টহাসি। পরের পর্বে চলমান…
লেখক: কলাম লেখক ও সাংবাদিক