(৬ষ্ট খন্ড, ২য় পর্ব)
-শামসুল আরেফিন খান
কবি সুকািন্ত লিখেছেন :
“কখনও হঠাৎমনে হয় আমি এক আগ্নেয় পাহাড়।
শান্তির ছায়া-নিবিড় গুহায় নিদ্রিত সিংহের মতো
চোখে আমার বহু দিনের তন্দ্রা।
এক বিস্ফোরণ থেকে আর এক বিস্ফোরণের মাঝখানে
আমাকে তোমরা বিদ্রূপে বিদ্ধ করেছ বারংবার
আমি পাথরঃ আমি তা সহ্য করেছি”।
মানুষতো জড় পদার্থ না।পাহাড় পর্বত না।রক্ত মাংশের শরীর, সংবেদনশীল মন, আশা আকাঙ্খা প্রেম ভালোবাসা, লোভ লালসা, হতাশা নিরাশা, ব্যাথা বেদনা হাসি কান্না এসব নিয়েই মানুষ।কিন্তু মানুষ শোকে পাথর হয়। ব্যাথায় বেদনায় ক্ষুধা তৃষ্ণায় শুকিয়ে কাঠ হয়। আবার যখন মানুষ হিংসায় উন্মত্ত হয়, অঙ্গীকারে উদ্দীপ্ত হয় প্রতিরোধে দুর্বার হয় ক্রোধে রাগে অগ্নিশর্মা হয় তখন তার চোখ দিয়ে আগুন ঠিকরে বের হয়। তখন সে হয়ে যায় এক আগ্নেয় পাহাড়। । যেমন বিসুভিয়াস- ফুজিয়ামা।
“মুখে আমার মৃদু হাসি,/বুকে আমার পুঞ্জীভূত ফুটন্ত লাভা/সিংহের মতো আধ-বোজা চোখে আমি কেবলি দেখছি:মিথ্যার ভিতে কল্পনার মশলায় গড়া তোমাদের শহর”।
মাউন্ট ভিসুভিয়াস, আছে ইতালিতে।ইতালির নেপলস থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় এর অবস্থান। এই আগ্নেয়গিরি ইতিহাসে অনেক বিখ্যাত। এর অগ্ন্যুৎপাতের ফলেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল পুরো পম্পেই ও হারকিউলানিয়াম নগরী। এ ছাড়াও বিশ্ব ব্যাপী রয়েছে আরও অনেক আগ্নেয় পাহাড়। ইন্দেোনেশিয়ায় রয়েছে মাউন্ট কালুত, মাউন্ট ক্রাকাতোয়া,জাপানে মাউন্ট উনজেন। শিবমানা শহরের পাশে এর অবস্থান।কলম্বিয়ায় নেভাদা দেল রুইজ। ফ্রান্সে মাউন্ট পিলি আইসল্যান্ডে লাকি আগ্নেয়গিরি।
পৃথিবীর অভ্যন্তরে অত্যন্ত উত্তপ্ত অর্ধতরল পদার্থ বিদ্যমান। হাড়িতে পানি বসিয়ে তাপ দিলে পানি যেমন নীচে থেকে উপরের দিকে একটি টগবগে প্রবাহ তৈরি করে, তেমনই পৃথিবীর অভ্যন্তরের উত্তপ্ত তরল পদার্থগুলোও নীচ থেকে উপরে প্রবাহ চক্র তৈরি করে। ভয়ানক উত্তপ্ত এসব পদার্থকে ঢেকে রেখেছে উপরের ভূমিস্তর। ভূমিস্তরের কিছু কিছু এলাকায় দৃঢ়তা ও পুরুত্ব কম। এরকম এলাকায় জন্ম নেয় আগ্নেয়গিরি। এরকম অপেক্ষাকৃত দুর্বল এলাকাগুলো দিয়ে মাঝে মাঝে অভ্যন্তরের উত্তপ্ত তরল বেরিয়ে আসে। আগ্নেয়গিরির ভেতর দিয়ে এধরনের তরল বেরিয়ে আসার ঘটনাকে বলে অগ্ন্যুৎপাত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা শান্তশিষ্টই থাকে। দুঃখী মানুষের নীরব অশ্রুপাতের মত। সন্তান হারা মায়ের চোখ দিয়ে কপোলে গড়ানো নিরন্তর অশ্রুধারার মত। কিন্তু মাঝে মাঝে এরা ক্ষেপে যায় । তখন সৃষ্টি হয় প্রলয়। রাশিয়ার ব্লাডি সানডের রক্তপাতের মত নেমে আসা উত্তপ্ত লাভা এত ভয়াবহ মাত্রায় রুদ্র হয় যে এদের কারণে মারা যায় মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ।
মাউন্ট উনজেন
জাপানের শিমাবারা শহরের পাশে এটি অবস্থিতমাউন্ট উনজেন।
এটি মূলত দ্বীপ প্রধান এলাকা। জাপানের ইতিহাসে অন্যতম ভয়ঙ্কর দুর্যোগ সংঘটিত হয় এখানেই। ১৭৯২ সালে এখানের আগ্নেয়গিরি প্রচণ্ডভাবে গর্জে উঠে। সমুদ্রের পাশে অবস্থিত হওয়াতে এটি একই সাথে ভূমিকম্প ও সুনামির সৃষ্টি করে। বিশেষ করে সুনামির মাত্রা হয় অত্যন্ত ভয়াবহ। একে শুধু সুনামি বললে কম হয়ে যাবে, বলতে হবে ‘মেগাসুনামি’। ভূমিকম্প ও সুনামির সম্মিলিত আঘাতে সেখানে মারা যায় ১৪ হাজার ৫২৪ জন মানুষ।
নেভাদো দেল রুইজ
কলম্বিয়ার রাজধানী থেকে ৮০ মাইল পশ্চিমে অবস্থিত। হাজার হাজার বছর ধরে এটিতে অগ্ন্যুৎপাত হচ্ছে। তেমনই অগ্ন্যুৎপাত ঘটেছিল ১৯৮৫ সালের নভেম্বরে। তীব্রতার দিক থেকে এটি বেশ দুর্বলই ছিল। কিন্তু এর ফলে প্রচুর লাভা ও উত্তপ্ত গ্যাস নির্গত হয় যা আশেপাশের গ্রাম ছেয়ে যায়। পাশাপাশি উত্তপ্ত পানিও যোগ হয় এদের সাথে। পানির ব্যাপারটিও আরেক ট্রাজেডি। নেভাদো দেল রুইজের উপরিভাগে তুষারের আচ্ছাদন ছিল। উত্তপ্ত গ্যাস ও লাভার প্রভাবে সেই তুষার গলে পানিতে রূপান্তরিত হয় এবং চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। উত্তপ্ত পানি গ্যাস এবং লাভার মাঝে পড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় সেখানে। মারা যায় প্রায় ২৩ থেকে ২৫ হাজার মানুষ।এই দুর্যোগের অন্যতম দুঃখময় অধ্যায় হচ্ছে ‘ওমায়রা সেনশেজ’ নামে ১৩ বছরের একটি মেয়ে। মেয়েটি একটি বিদ্ধস্ত ভবনের নীচে আটকা পড়ে। প্রায় তিন দিন সংগ্রাম করে মেয়েটি মারা যায় টানা ৬০ ঘণ্টা ধরে আটকে থেকে সংগ্রাম করা এই মেয়েটি।
মাউন্ট পিলি
বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাত ঘটে ফ্রান্সের মাউন্ট পিলিতে।। এর ভয়াবহতার মাত্রা এতই বেশি ছিল যে ঐ অঞ্চলে জান নিয়ে বেঁচে ফিরতে পেরেছে মাত্র দুই বা তিন জন। এদের মাঝে একজন বেচেছিল দুর্ভেদ্য এক জেলখানায় থাকার ফলে। জেলখানা এতই দুর্ভেদ্য যে সেখানে ভালো করে আলো বাতাসও প্রবেশ করতে পারে না। বড়ই অদ্ভুত, শাস্তির জন্য এক বন্দীকে রাখা হয়েছিল কবর সদৃশ সেই কারাগারে । কিন্তু ভাগ্যের কী লীলা, সকল স্বাধীন মানুষ মরে গেলো। সেই বন্দী মানুষটিই কেবল রইলো বেঁচে।রাখে আল্লা মারে কে? রাখে হরি নাশে কে?
ক্রাকাতোয়া, ইন্দোনেশিয়া
১৮৮৩ সালে প্রায় ২০০ মেগাটন টিএনটি বিস্ফোরকের সমতুল্য শক্তিতে এটি বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণের তীব্র শব্দ শুনা গিয়েছিল সুদূর অস্ট্রেলিয়ায় । প্রায় ১০ ফুট উচ্চতার সুনামির জন্ম হয়েছিল, যা উপকূলে আঘাত হেনে প্রচণ্ড ক্ষয়ক্ষতি ঘটায়। ১৬৫টি গ্রাম ভেসে যায় এই সুনামির ফলে। এটি থেকে নির্গত ধোঁয়া-গ্যাস বায়ুমণ্ডলে প্রায় ১৫ মাইল উচ্চতা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। ফলে সূর্যের আলো প্রবেশে বাধা পড়ে এবং এর বিরূপ প্রভাব পড়ে পৃথিবীর জীবমণ্ডলের উপর। বিশ্বের সামগ্রিক তাপমাত্রা কমে গিয়েছিল। পরে এই তাপমাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে ৫ বছর লেগেছিল।
মাউন্ট তামবরা, ইন্দোনেশিয়া
১৮১৬ সালে এতটা শক্তি নিয়ে এটি বিস্ফোরিত হয়েছিল মাউন্ট তামবরা যে এর উপরিভাগের পুরোটাই ছিটকে ছড়িয়ে পড়েছিল। ১৩ হাজার ফুটের আগ্নেয়গিরির উচ্চতা কমে গিয়ে দাঁড়ায় ৯ হাজার ফুটে। বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়া বায়ুমণ্ডলের ২৫ মাইল উচ্চতা পর্যন্ত উঠেছিল। পরিবেশে এর প্রভাব এতই বেশি ছিল যে প্রচণ্ড গরমের কাল জুন মাসেই তুষারপাত হয়েছিল। সারা বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়েছিল এর বিরূপ প্রভাবে
কৃষকদের সকল ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। খাদ্য সংকট ও রোগ শোকে প্রায় ১ লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছিল।
হুয়াইনাপুতিনা, পেরু
অদূর অতীতে পেরুর এই আগ্নেয় পাহাড়ে অগ্নুৎপাতে নির্গত ছাই আশেপাশের ১০টি গ্রামকে তলিয়ে ফেলেছিল। সেখানে যতটা না ক্ষতি হয়েছে তার চেয়ে অনেক অনেক গুণ বেশি ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৯ হাজার মাইল দূরে রাশিয়ায়। এর বিরূপ প্রভাবে সেখানে ফসল উৎপাদন বন্ধ হয়ে দুর্ভিক্ষ নেমে আসে। সেই দুর্ভিক্ষে মারা যায় প্রায় ২ মিলিয়ন মানুষ। রাশিয়ার ইতিহাসে অন্যতম দুঃখজনক অধ্যায় হচ্ছে এই দুর্ভিক্ষ। এই দুর্ভিক্ষের পেছনে যে হাজার হাজার মাইল দূরের আগ্নেয়গিরির শক্তিশালী প্রভাব রয়েছে এটা অনেকদিন ধরে কেউ আঁচ করতে পারেনি। ২০০৮ সালে ভূতত্ত্ববিদদের করা এক গবেষণায় উঠে আসে যে এই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনার পেছনের মূল কারণ এই আগ্নেয়গিরি।
এসব আগ্নেয় পাহাড় যতই প্রবল হোক না কেন দলিত নিপীড়িত শোষিত নিরযাতীত মানুষের মধ্যে সুপ্ত থাকা আগ্নেয়গিরির মত ক্ষমতাশালী কেউ না। ক্ষুধার আগুন যখন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে দরিদ্র শানুষের উদরে তখন কুম্ভকর্ণের ঘুম ভেঙে যায়। সর্বগ্রাসী ক্ষুধা নিয়ে সে জেগে ওঠে।অনশনবন্দী মা যখন দেখে তার নাড়ি ছেড়া ধন অনাহারে ছটফট করছে তখন সে ঘটৎকচ তনয়া হিড়িম্বার মত হিংস্র হয়ে ওঠে।
দুঃখী মানুষের এই ক্ষুধা নিবারণের তাগিদ নিয়ে বাঙালির মুক্তিদাতা শেখ মুজিবুর রহমান যৌবনের সকল ভোগবাসনা বিসর্জন দিয়ে কারাতপস্যায় জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়, ৪৬৮২ দিনরাত্রি অতিবাহিত করেন। বন্দী১১ বছরের সেই তপস্যায় তিনি বোধি লাভ করেন।কারাগারে তাঁর সান্নিধ্য ঘটে দুই মানবআগ্নে গিরির সাথে। সিলেটের নানকর বিদ্রোহের(১৯৪৯) অগ্নিকন্যা অর্পণা রায় চৌধুরি এবং কৃষকের তেভাগা আন্দোলনের অগ্নিবলয় রাজশাহীর নাচোল বিদ্রোহের সর্বাধিনায়ক রাণী মা ইলামিত্রের সাথে।২৪ মার্চ ১৯৫০ রাজশাহী জেলের খাপড়া ওয়ার্ডে পুলিশের অকাতর গুলিবর্ষণে শহীদ হলেন তেভাগা সংগ্রামের যে ৮ অগ্নিপুরুষ তাদের সাথেও ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন বাংলার নেলসন মেন্ডেলা। দেখা হয়েছিল ব্রিটিশ ভারতের অগ্নিযুগের অগ্নিপুরুষদের সাথে যারা সমস্ত জীবন যৌবন জননী জন্মভূমির স্বাধীনতার জন্যে যাজ্জীবন কারাদন্ডে উৎসর্গ করেছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের অগ্নিমন্ত্র নিয়েছিলেন সেই মহামানবের সাগরতীরে বসেই।বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হওয়ার পর স্বদেশের মাটিতে পা রেখে ১০ জানুয়ারি ৭২ রেসকোর্স ময়দানে দাঁড়িয়ে জাতিকে ৪ দফা দিকনির্দেশনা দিয়ে বললেন বাংলাদেশ হবে একটি সমৃদ্ধশালী দেশ , ধর্ম হবে না যার ভিত্তি। ধর্মনিরপেক্ষতা হবে বাঙালির অগ্রায়নের মূলমন্ত্র। সমাজতন্ত্র ও জনগণতন্ত্র হবে শোষকের অচলায়তন ভাঙার লড়াইতে শোষিতের হাতিয়ার । মানবমুক্তির অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শির নমিত করে গ্রহন করলেন জুলিও কুরি শান্তি পুরষ্কার। আলজিয়ার্স এ জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে দাঁড়িয়ে বললেন ,“পৃথিবী আজ দুভাগে বিভক্ত। একভাগে রয়েছে পৃথিবীর সব শোষিত মানব । অন্যভাগে শোষক। আমি শোষিত মানুষের পক্ষে আছি। আমি শেষিত মানুষের সাথেই থাকবো”।সে অগ্নিশপথ তিনি কখনও বিসর্জন দেননি।
মুজিবে আগে লেনিন বলেছিলেন,পৃথিবীর সমস্ত শোষিত নিপীড়িত মানুষ যদি একসাাথে হুঙ্কার দেয় তাহলে আল্পস পর্বত মাটির সাথে মিশে যাবে।হিমবাহ গলে যাবে। দারুণ গ্রীষ্মে তুষারপাত হবে । দারুণ শীতে আগুন বৃষ্টি হবে।মহাসাগর শুকিয়ে বাষ্প হয়ে আকাশে উঠে যাবে।কারণ পৃথিবীর ৯০ ভাগ মানুষই দলিত বঞ্চিতগরীব তারা ১৫ ঘন্টা কাজ করে দুবেলা পেট পুরে খেতে পায়না। মার সামনে সন্তান অনাহারে মরে। এই শোষিত মানুষদের ঈশ্বরের দোহাই দিয়ে পায়ের নিচে দাবিয়ে রাখা হয়েছে। রাশিয়ার মানুষ জানে ঈশ্বর স্বয়ং জার নিকোলাসকে নিয়োগ দিয়েছেন । তাই জার(রাজা) যা কিছু করে সব ঈশ্বরের নির্দেশে করে। পৃথিবীর সব রাজাই জারের মত ঈশ্বরের দোহাই দিয়ে গরীব মানষের পেটে লাথি মেরে চলেছে।
১৯০৫ সালের ব্লাডি সানডে খ্যাত ২২ শে জানুয়ারি, রবিবার, ভন্ড ধর্মগুরু তরুণ ফাদার জর্জি গ্যাপনের নেতৃত্বে রাশিয়ার প্রায় ৫০হাজার বেকার শ্রমিক সেন্ট পিটারসবর্গে ২য় জার নিকোলাসের রাজ প্রাসাদ সামার প্যালেসে গিয়েছিল দয়া ভিক্ষা করতে ঈশ্বরের প্রতিনিধির দরবারে। খাদ্যের বদলে তারা পেয়েছিল বুলেটের বৃষ্টি । হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। জেগে উঠেছিল রাশিয়া। তারই ধারাবাহিকতায় অক্টোবার ১৯১৭ সালে সমস্ত রাশিয়ার গরীব মানুষ গর্জে উঠেছিল।কেঁপে উঠেছিল সারা পৃথিবীর শোষকদের সিংহাসন সেই হুঙ্কারে। লক্ষ কোটি বছরের অন্ধকার দূর করতে নতুন সূরযো উঠেছিল সমাজতন্ত্র নাম নিয়ে। তার আগে লেলিনের গুরু কার্লমার্কস বলেছিলেন,পৃথিবীর শোষিত দরিদ্র মানুষের সব চেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে তাদের সংখ্যা গরিষ্ঠতা। তারা যদি একাথে উঠে দাঁড়ায় তাহলে সমস্ত রাজশক্তি ধ্বসে পড়বে তাদের এক হুঙ্কারে। তাই হয়েছিল ফরাসী বিপ্লবে। ফ্রান্সে তখন সমস্ত জমিজমার মালিক ছিল রাজানুগত ৬ শতাংশ সুবিধাভোগী শোষক শ্রেনী ।বিপ্লবী রবেসপিয়ারির নেতৃত্বে শোষিত বঞ্চিত ৯৪ শতাংশ জনগণ গর্জে ওঠায় বাস্তিল দূর্গ ধ্বসে পড়েছিল ,১৪ জুলাই ১৭৮৯।রাজা ১৬ষ লুই ও রাণী এবং রাজতন্ত্র গিয়েছিল অস্তাচলে। পৃথিবীর প্রথম সেই গণবিপ্লবের দার্শনিকগণ দিয়েছিলেন গণতন্ত্র ও সাধারণতন্ত্রের অগ্নিমন্ত্র। রুশো বলেছিলেন সব মানুষই স্বাধীন হয়ে জন্মায় কিন্তু জন্মের পরে মানুষই মানুষের পায়ে দাসত্বের শিকল পরিয়ে দেয়। “ আমি তোমার সাথে দ্বিমত পোষণ করতে পারি । কিন্তু তোমার মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় আমি জীবন দিতে অকুন্ঠ হ’ব।” ভলতেয়ারের এই অমিয় বাণী ওয়েস্ট মিনিস্টার গণতন্ত্রের ভিত্তি রচনা করেছে।
লেখক : বঙ্গবন্ধুর একান্ত সংবাদ কর্মী, ওয়ার করেসপনডেন্ট ৭১, সাংবাদিক কলামিস্ট