আমার চীন সফর ও সিপিসি’র জন্ম শতবার্ষিকী

কলাম

0
1306

শামসুল আরেফিন খান

  কৈশোরে পড়েছিলাম সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের  চীন দেখে এলাম  আর একটি

          গ্রন্থনয়াচীন নয় দুনিয়া  তখন থেকেই আগ্রহ তৈরি হয়েছিল চীন দেখার তারও

         আগে  একেবারে শৈশবে কলকাতায় পেয়েছিলাম প্রতিবেশি হিসেবে একটি চৈনিক

         পরিবারকে। আমাদের ১৮ ফিয়ার্স লেনের ৫তালা বাসাটা ছিল সেন্ট্রাল এভিন্যূর  উল্টো

         দিকে এবং ইসলামিয়া হাসপাতালের  ৫তালা দালানের পিছনে টালি বস্তি পেরিয়ে।

        ২য় মহাযুদ্ধের সাইরেন বাজলে নিষ্প্রদীপ অবস্থা বা ব্লাক আউটের  মধ্যে দিন হোক বা

         রাত, আমরা গোটা পরিবার নিচের তালায় চীনাদের বাড়িতে  যেয়ে আশ্রয় নিতাম বলে 

         মনে পড়ে। তার ফলে আকাশে প্লেন ওড়ার শব্দটাই কেবল শুনতে পেতাম দেখার ইচ্ছা

         অপূর্ণ থেকে যেতো। চীনাদের ভাষাটা আমার কানে অচেনা উদভট শব্দের সমাবেশ ঘটাতো।

          শান্তির সময়  দিনের বেলায়  শব্দগুলো আমার মুখে আবার  অদ্ভুত  দু্র্বোধ্য জিবারিশ তৈরি

        করতো। আমি নিজেদের বাসায়  একরকম সারাদিনই বলতে গেলে উচু বড় জানালার মোটা

       মোটা শিক ধরে বোমারু বিমান  দেখার আশায় তোবাজাতীয় অর্থহীন বাক্য  তপ করতাম।

       তার ধ্বনির সাথে মিল খায়আয় বেটা দেখে যা দুটো সাপ নিয়ে যাজাতীয় ছড়াও তখন আমার

       আয়ত্বে ছিলআধো আধো  উচ্চারণে তাও উচ্চকন্ঠে ধ্বনিত ত।  আমার কোন খেলার সাথী

       ছিলনা। ঢিসুম ঢিসুম যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় আমি একাই জাপান ব্রিটিশ।  “ সারেগামা পাধানি বোম

        ফেলেছে জাপানি বোমের ভিতর কেউটে সাপ  ব্রিটিশ বলে বাপরে বাপ নিচের তালা থেকে  ছোটবড়

       বাচ্চারা  আমাদের  ছাদ উঠোনে এসে খেলা করতো আমার বড় ভাই শামসুদ্দোহা  পড়তেন হেয়ার

       স্কুলে।বড় দুই বোন এবং আমার মেজচাচার বড় মেয়ে পড়তো সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুলে। তাদের

      বন্ধুরা  মাঝে মাঝে এসে গল্পগুজব করতো।  আমি তাদের আসরে বসে পড়তাম। তারাই ছিল আমার  গুরু।

      ১৯৪১ থেকে  ১৯৪৫ পরযন্ত যুদ্ধ  বাস্তবতায় আমার বয়স ছিল অনুর্ধ বছর। সে সময়ের সব কথা মনে

      থাকার কথা না। কিন্তু  বড়ভাইবোনদের কাছে বার বার তাদের জন্য বিরক্তিকর  সেই  অভিজ্ঞতার কথা

      শুনতে শুনতে সেগুলো  আমার স্মৃতিতে গেথে  আছে। বড় হয়ে শুনলামহিকমতে চীন হুজ্জতে 

      বাঙালেরকথা। জ্ঞান লাভের জন্যে চীন যাওয়ার পরামর্শের ধর্মীয় বয়ান। কৈশোরের আর এক ধাপ

     এগিয়ে  শুনলাম চীন বিপ্লব শতকোটি মানুষের মুক্তির কথা। আরও পরে পড়লাম কৃতি লেখক পার্ল

      এস বাকের গুড আরথ।

       মনের  মধ্যে অনেক জিজ্ঞাসা নিয়ে  আগস্ট ১৯৮৪ সালে  চীনের মাটিতে পা রাখলাম

     ব্ন্ধুবর  কাজী জাফরের সৌজন্যে তার ছিল একটা বামপন্থী ভন্ডামির  খোলস। পকেটে লাল বই এবং

     একটা ভূয়া  মার্কসিস্ট লেনিনিস্ট পার্টি।  আমার অজান্তে  আমাকে সহ  সেই বুদ্ধিমান যাদেরকে তার

   অস্তিত্বহীন  ভুয়া দলের পলিটব্যুরোর  সদস্য বানিয়ে রেখেছিল  তাদের মধ্যে  একজন বাদে কারও ত্যাগনিষ্ঠার দিক দিয়ে কম্যুনিস্ট হওয়ার কোন যোগ্যতা এমনকি ইচ্ছাও ছিলনা। ব্যতিক্রমী ব্যক্তি হলেন অধ্যাপক

 শামসুল আলম।  তিনি ছিলেন  সাপ্তাহিক নয়াযুগ পত্রিকার সম্পাদক। উত্তর কোরিয়ার দূতাবাস এই পত্রিকার

 খরচ যোগাতো। সেটা তার হাত দিয়ে এসে কাজী  জাফরের পকেটে ঢুকতো সেই টাকায় পালিত তথাকথিত কয়েকজন  পার্টি হোলটাইমার। তারা দুএকজন কাজ করতো শ্রমিক সংগঠনে। কয়েকজন ছিল ইউপিপির  কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। তাদের প্রধান কাজ ছিল আনুষ্ঠানিক সভার কোরাম পুরো করা  এবং কাজী জাফরের সব প্রস্তাব  আপত্তি ঠেলে  পাশ করিয়ে নেওয়া  ১৯৫৭ সালের   ছরের জুনিয়ার ছাত্র ইউনিয়ন  সহকর্মী ,বয়সে লেখাপড়ায়  আমার এক বছরের সিনিয়ার  ছিল কাজী জাফর তার  আদর্শের ভাওতাবাজিতে ফেঁসে আমার লাভ হয়েছিল এটাই যে  আমি  বহুদিনের নিষ্ক্রিয়তার পর  রাজনীতির মূল ধারায়  ফিরে এসে সাতদলীয় ঐক্যজোটের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত হয়েছিলাম। সাতদল গঠিত হয়েছিল স্বৈরাচার হোসেন মোহাম্মদ এরশাদকে গদিচ্যূত করার জন্যে।  কিন্তু বিএনপি কাজী জাফরের সুপ্ত  উদ্দেশ্য ছিল  এরশাদের  সম্ভাব্য শূন্যতায়  আওয়ামি লীগের অধিষ্ঠান ঠেকানো। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের শক্তিশালী সূচনা ঘটাতে সক্ষম  হয়েছিল আওয়ামি লীগের নেতৃত্বে সংগঠিত ১৫দল।এরশাদ ৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে গেলেন  অনুমোদন লাভের  আশা নিয়ে। সেখান থেকে ঘোষণা দিলেন  বাঘের খোলস ফেলে দিয়ে  গণতন্ত্রের লেবাজে তিনি নখদন্তহীন  বিড়াল সাজাতে চান কাজী জাফর এজেন্সি পেয়ে গেলো  বেসামরিক সরকার গঠনের জন্য  যুতসই লোক   সোনার খাচায় পোরার তার অভিজ্ঞতা ছিল।  জিয়াউর রহমানের  উর্দি ফেলে সাদা মানুষ হওয়ার প্রক্রিয়ায় সে ভূমিকা রেখেছিল। সে তার থেকেও ঘোড়েল বস্তু এনায়েতুল্লাহ  খান  এবং মুক্তিযোদ্ধা নামে পরিচিত নিরীহ ক্যাপটেন  আব্দূল হালিমকে  সাথে নিয়ে জকেবিনেট মন্ত্রী হয়েছিল।

বিচারপতি সাত্তারকে শীর্ষে বসিয়ে  জিয়া গঠন করেছিল জাগো দল। তারই নেতৃত্বে  জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল। সে সময় বিশ্বজুড়ে প্রায় ৬০টা দেশে সামরিক শাসন ছিল। কিন্তু মার্কিন কংগ্রেস সামরিক শাসন দিয়ে  তাবেদার সরকার  লালনপালনের নীতি প্রত্যাখ্যান করে  ফিডিং বোতল সরিয়ে নিলো।  খাকি পোষাক পরা পুতুল সরকারগুলোকে  সাদা পোষাক পরে মঞ্চে ওঠার  হুকুম দিলো। অন্যথায়   হুক্কা পানিরুটি মিঠাই সব বন্ধ এই হুমকিতে কাবু হয়ে জিয়া  কাউকে কিছু না বলে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট ভেঙে দিলো। ঘোষণা দিলো চট্র্রগ্রামে যেয়ে। এর পিছনে আরও একটা কারণ ছিল। সেনা বাহিনী বেঁকে বসেছিল। ইনডেমনিটি না নিয়ে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে তারা গিলোটিনে চড়তে  নারাজি দিয়ে বসলো। আরজিনটিনার  সামরিক সামরিক হোমরা চোমরারা  সেই নির্বুদ্ধিতার  খেসারত দিয়ে  বিশ্বময়  স্বগোত্রীয় সবাইকে সাবধান করে দিয়েছিল। বাছাধন 

ইনডেমনিটি না নিয়ে  বাঘের পিঠ থেকে নেমেছ কি মরেছ। সেনা বাহিনী পাক্কা শর্ত দিয়ে বসলো আইয়ুব খানের মত দল গঠন কর। নির্বাচন কর। দুই তৃতীয়াংশ সাংসদ খাঁচায়  ভরো ইনডেমনিটি বিল পাশ কর। তার পরে বাঘের পিঠ থেকে নেমে গাধার পিঠে চড়ে বাঘ শিকার কর।হরিণ মেরে খাও। যা খুশি তাই কর।   জিয়া সেই ম্যান্ডেট অনুযায়ী  ডা. বি চৌধুরির  নামে লাইসেন্স  ইসূ করে বিএনপি গঠন করলো সেই  ভানুমতির খেলার পুনরাবৃত্তি ঘটানোর  কোন বিকল্প ছিল না  একই পালক পরা এরশাদেরও। ঠিকেদারি  পেলো কাজী জাফর।

   পকেটে   লালিত   বিপ্লবী  পার্টির পলিট ব্যূরোর নামে কয়েকজন  লোকের   মিটিং বসালো  আমার বাসাতেই। বামপন্থী কায়দায় পলিমিকস শুরু করলো।  ফতোয়া দিলো,এরশাদ হতে পারে বিপ্লবের বন্ধু্। কাজেই তারপাশে দাড়ানোটাই বামপন্থীদের ঈমানী দায়িত্ব। এই পচা তত্বের   পাথুরে ডিমটা  পেড়েছিল আমার আর এক বন্ধু রহস্য পুরুষ সিরাজুল আলম  খান। আমি তাকে এক আসরে পেয়ে  বললাম দোস্ত  কেমনে বানাবি তোর  দুই কক্ষ  বিশিষ্ঠ  ৫০০ আসনের পার্লামেন্ট ?

সংবিধান সংশোধনের জন্যে দুই তৃতীয়াংশ  সূখ্যাগরিষ্ঠতা  পেতে বিপ্লব ছাড়া উপায় কী? বন্ধু ধরা খেয়ে বিলাপ করলো  , ‘ফ্রম উইদিন’ !  ফ্রম উইদিন  !মানে ঘটনা ঘটবে  ভিতর থেকে।

কাজী জাফর সেই পাথরের ডিমে তা দিয়ে মুরগির বাচ্চাফুটাবার  ভন্ডামি শুরু করলো। আমি অনড় রইলাম। স্বৈরাচার পতনের  আন্দোলনে  সবার সাথে থাকতে আমরা  অঙ্গীকারবদ্ধ। নয় ছয় করা যাবেনা। পলিমিকস এর নামে প্রকাশ্য সভাতেও জনমত নিজের   পক্ষ্যে পাওয়ার  প্রয়াস রাখলো।  কিন্তু  হোল টাইমারদের বাইরে কারও  তেমন সমর্থন  না পেয়ে সে মাও জেদঙ (মাও সেতুঙ) এর দৃষ্টান্ত টানলো।

মাও দু দুবার  চিয়াং কাইশেকের  মন্ত্রী হয়েছিলেন। সে সময় তিনি বিপ্লবের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে পেরেছিলেন। রাজনৈতিক ট্রেণিংস্কুল  স্থাপন করে কম্যুনিস্ট কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। আমি বললাম , কিসে আর কিসে ধানে আর তুষে কোথায়  আগর তলা  আর কোথায় চৌকির তলা !লোকটার অসীম ধৈর্য। আমার কথায় একটুও রাগ করলো না। বরং আমাকে সদস্যের একটি  প্রতিনিধিদলের সদস্য বানিয়ে  চীনে নিয়ে গেলো সাথে গেলো ৭ম ব্যক্তি  তার বড় মেয়ে জয়া। আমন্ত্রণ এসেছিলো চীনের কম্যুনিস্ট পাার্টির  আন্তর্জাতিক লিঁয়াজো কমিটি থেকে মৈত্রী সফরের। কাজী সাহেব ভাব দেখালো  চীনের কম্যুনিস্ট পার্টি  তার  পকেট সংগঠনকে ভ্রাতৃ প্রতিম  পার্টি হিসাবে অনুমোদন করে।ইহা তাহারই আলামতকিন্তু

যাওয়ার আগে  চাঁদা তুললো  ডাইনে বাঁয়ে। ধরা খেলো আমার চোখে  এসবির  সূত্র, ডিআইজি গোলাম ইউনুসের  বড় ভাই বিজ্ঞাপন সর্বস্বগঙ্গা কসমেটিকসনামের ভূঁয়া  এর  মালিক গোলাম  কুদ্দুসের  কাছ   থেকে ২৫,০০০ টাকা নিয়ে। তার অপিস ছিল  শিল্প ব্যাংকের ঠিক উল্টো দিকে। সেখান থেকে  এরশাদের  রাজনৈতিক দানছত্রের  মাল  বিতরণ রাজণীতির এতিমদের মধ্যে কাজী জাফরের সাথে যেয়ে সেখানে লাইনে বসা দেখতে পেলাম , শাহজাহান সিরাজ, শফিউল আলম প্রধান সহ  অনেককে।  যাদের কারও কারও নাম লিখলে তাদের উজ্জল ভাবমূর্তি ম্লান হবে।

    যাই হোক,   আশৈশব  লালিত চীন দেখার স্বপ্ন সফল করতে আমি আর কোন দিকে তাকালামনা। চীনা বিমানে চড়ে  দীর্ঘ  আকাশ পথ পাড়ি দিয়ে বেইজিং এসে  নামলাম সন্ধ্যার পরে পার্টি প্রটোকলে সংবর্ধিত হয়ে  সিপিসির রেস্ট হাউজ  ওয়াংশু লু  বিশ্রামাগারে পৌছালাম রাত্রি যাপনের জন্যে।  পরদিন  দুপুরে রাষ্ট্রদূত খাজা কায়সারের বাসায় লাঞ্চের  নিমন্ত্রণে যেয়ে  থলির বিড়ালের ম্যাও ডাক শুনতে পেলাম।  দুপুর ৩টা  বাজতেই  একটা  ফোন কল আসলো। রাষ্ট্রদূত নিজেই ধরলেন সোফা থেকে  একটু দূরে  দেয়ালের ধারে রাখা রিসিভার তুলে বললেন  “-কাজী সাহেব   আপনার কল মি. প্রেসিডেন্ট  অন দি আদার সাইড ঘন্টাখানেক প্রেমালাপ চললো। শেষ হতেই আমি চেপে ধরলাম। একী হেরিনু   কমরেডএতো দেখি অন্ধকারে কালো বিড়াল। কাজী সাহেব  দুধের হাড়িতে মুখ ডোবানো বিড়ালের মত একগাল ফিকে হাসি হাসলেন গোপনে ঢোক গিলে বললেন , আপনার জন্যেও সুখবর আছে। মনে মনে ভাবলাম তাহলে অভাগা জন্ম দৃঃখীর     কপালেও শিকা  ছিড়তে পারে !   মুখে বললাম মারহাবা।  কাজী ধাতস্থ ল।  “রাতে  ডিনারের পর   আমাদেরফর্মের”  মিটিং আছে।  তখন সব কথা খুলে  বলবো রাষ্ট্রদূত আমাদের হাতে  ‘মাওতাইএর ক্ষুদে পাত্র তুলে দিলেন। চিয়ার্স, চিয়ার্স চিয়ার্স….একঢোকে  মিনি গ্লাসে চীনের জাতীয় পানীয়  গিলে  ফেললেই

 বুক  জ্বালাপোড়া তার পরেই   হৃদয় ঠান্ডা, শরীর গরম।

 ডিনারের পর  আমরা পার্টি  রেস্ট হাউজে মিটিঙে বসলাম ডেলিগেশনের  সদস্যকাজী সাহেব,   আমি,  রহমতগঞ্জের প্রভাবশালী শ্রমিক   নেতা হারুন , দিনাজপুরের রিয়াজুল হক চৌধুরি, গাইবান্ধার  আমিনুল ইসলাম গোলাপ, নয়াযুগের  আব্দুর রহিম আজাদ। কাজি সাহেব বড়ই আনন্দে গর্বে বললেন, আমরা জন  মন্ত্রির শপথ নেবো শিগ্রি। আসার আগে সেনা হাই  কমান্ডের সাথে ১৬ ঘন্টাবৈঠক হয়েছে আমার। তার আগে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট গঠিত হবে ইউপিপিসহ আরও কয়েকটি দল নিয়ে। আতাউর রহমান খান, মিজানুর রহমান চৌধুরি, সিরাজুল হোসেন খানক্যাপটেন হালিম চৌধুরি  প্রমুখ থাকবেনস্ব স্ব দল নিয়ে সেই  জোটে।  নাম হবে ন্যাশনাল  ফ্রন্ট  পরে  ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ , ব্যারিস্টার আবুল হাসনাত সহ আরও কয়েকজন  যোগ দেবেন মন্ত্রিপরিষদে। প্রেসিডেন্ট স্বয়ং  আজ দুপুরে বিষয়টা নিশ্চিত করেছেন।

আমি বললাম  আপনি বলছেন কমরেড এটা  পলিট ব্যূরোর মিটিঙ। কিন্তু আপনার তো কোন ক্ষমতা   নেই এই মিটিং ডাকার। পার্টি সেক্রেটারি অধ্যাপক শামসুল আলমই  কেবল ডাকতে পারেন  এই মিটিং। তাছাড়া রকম একটি আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত  সর্ব সম্মতভাবে  হওয়াই বাঞ্ছনীয়।  কাজী সাহেবের মুখে সেই  পুরাণো ভায়লগ, “রাজনীতিতে এগিয়ে যেতে হলে ফ্লেকজিবল    ডাইনামিক হতে হবে। রিজিড হলে চলবে না।  রাজনীতিতেতে কোন  স্থায়ী শত্রু নেই কোন স্থায়ী মিত্র নেই রাজনীতিতে কোন শেষ কথা নেই।আমি মিটিং ডাকার  ক্ষমতা নিয়েই এসেছি। বাকি চারজনের হা  ভোটও নিয়ে এসেছি। তাছাড়া ৫জন মন্ত্রীর মধ্যে  আপনিও আছেন।  আমি  হা হা করে  হাসলাম কিছুক্ষণ তার পরে বললাম, আমি সহমত নই। প্রসিডিং আমার আপত্তি নোট করুন।

আমিনুল ইসলাম গোলাপও  দ্বিমত পোষণ করলেন।  অন্য  জন কাজীর পক্ষ্যে ভোট দিলো  এবং ঢাকা থেকে বয়ে আনা পকেট ভোটে পাশ হয়ে গেলো এরশাদ সরকারের মন্ত্রিসভায় যাওয়ার বিপ্লবী  প্রস্তাব। কাজী সাহেব বললেন  আমি কালকেই ঢাকায়  চলে যাব শপথ নেবো। আপনারা পরে আসুন।  

আমাদের জন্যে রয়েছে চীনে সপ্তার  সফর কর্মসূচি। তার পর একমাস উত্তর কোরিয়া সফর। বেইজিঙে  অভিনব পদ্ধতিতে শীতল কক্ষে  সংরক্ষিত  চেয়ারমান  মাও জে দং এর মরদেহ দেখলাম। মনে একটু আগেই  ঘুমিয়েছেন। মিঙ  রাজাদের ঐতিহ্যভরা  রজপ্রাসাদ  ফরবিডেন সিটি দেখলাম। ভুগর্ভে সুরক্ষিত রয়েছে  মিঙ রাজাদের সম্পদে ঠাসা  রাজপ্রাসাদ দাসদাসী সহ রাজা রানী রাজ পরিবারের সদস্যদের  মমিকৃত মরদেহ  রয়েছে  তাতে সম্ভাব্য পারমানবিক হামলার  সময় ১০ লক্ষ লোক আশ্রয় নিতে পারে এমন স্বয়ং সম্পূর্ন আন্ডার গ্রাউন্ড সিটিতে ঢোকার প্রবেশ পথ  অদৃশ্য একটা  বোতাম টিপতেই  ভোজবাজির মত খুলে গেলো  ব্যস্ত নগরীর মস্ত এক বিপনী কেন্দ্রের  ফ্লোর ফাঁক হয়ে গেলো আরব্য  রজনীর   আলাউদ্দিন৪০ চোরের গল্পের মত  চিচিঙ ফাঁক বলতে না।

এক  সময়ের  সপ্তম  আশ্চরয বিষয়ভুক্ত  চীনের প্রাচীরে  কয়েক  ধাপ ওঠার বিচরণ করার সৌভাগ্য ল।  ছবি তুললাম। নানজিং মানে আগের নানকিং শহরে  যেয়ে দেখতে পেলাম চিয়াং কাইসেকের কর্মস্থল , তার রাজ প্রাসাদ। দেখলাম  সেই খরশ্রোতা নদী যার বুকের উপর চীন বিপ্লবের  শেষ যুদ্ধ হয়েছিল।  একদিকে মাও যে দঙ এর নেতৃত্বাধীন রেড আর্মি।  অন্যদিকে মার্কিন সমর্থনপুষ্ট আধুনিক অস্ত্র সজ্জিত পদতিক , নৌ সেনা বায়ু সেনা। বিমান হামলার মধ্যেই রেড  আর্মির  দশ হাজার দুর্ধর্ষ সৈন্য  হাজার হাজার নৌকার উপর  মেশিনগান এন্টি এয়ারক্রাফট গান ফিট করে ডুব সাতার দিয়ে সমস্ত বাধা  অতিক্রম করে  চিয়াং কাইশেকের শেষ ঘাটির পতন ঘটালো সেই নদীর উপর নির্মিত হয়েছে  সংযোগ  সেতু। এর পর তিয়েন

 মিয়েন স্কোয়রের বিশাল চত্বরে যেয়ে মাও দেজঙের উদ্দীপনাময়  বিজয়ভাষণ শুনে চীন বিপ্লবের ইতিহাস পরিক্রমার  ইতি টানা যায়। বাকি থাকে শুধু মাও জেদঙের  জন্মস্থান  দেখা।

দশদিন বেজিঙে থাকলাম রেস্ট হাউজ থেকে বেরিয়ে পথে পা রাখতেই যেটা চোখে পড়ে সেটা  সমাজতন্ত্রের এক টুকরো  কলঙ্ক এক খন্ড কঙ্কাল। একটা ছোট দোকান ,রাষ্ট্রীয় মালিকানায় চলছে। আসলে চলছে না। কোন মাল সামানা নেই। খরিদদারও নেই আছে কেবল একজন  ভগ্ন স্বাস্থ্য  কর্মচারি। দশটা পাঁচটা কাজ করলে  বেতননটা ঠিকই পায়   কেনাকাটার বড় বাজারেও পাঁচটা বাজলেই  বাতি নিভে যায়। সব দোকান পাট  চলছে   টিম টিম  করে। কর্মচারিরা যা বেতন পায় তাতে তাদের পেট চলে না। সবাই মনক্ষুন্ন। শহর ছেড়ে আমরা কিছু কিছু গ্রামেও গেলাম সেখানে গণ কমিউন দেখলাম। চমৎতার  যৌথ জীবন সবাই পেট পুরে খেতে পায় একই রঙের পোষাক পায়  কারও কোন ব্যক্তিগত জমি নেই। কাজেই কাজেরও কোন গরজ নেই টা বাজলে  মাঠের ফসল  মাঠে থাকে। কৃষক বাড়ি যেয়ে তামুক খায়। তুমুল বৃষ্টিতে তরমুজ  লাউ কুমড়া শষা  সবই পচে যায়।

 লেখাপড়া শেখা বাধ্যতামূলক। কিন্তু উচ্চ শিক্ষায় রয়েছে কড়কড়ি। ৯৫% নম্বর না পেলে ১২ ক্লাসের পর আর ১৩ ক্লাসে কেউপা রাখতে পারে না। এদিকে সরকারে দেওয়া টারগেট বাঁধা  আছে।  প্রত্যক ১২ ক্লাসের হাই স্কুল % শিক্ষার্থী পাঠাবে  বিশ্ববিদ্যালয়ে। টার্গেট পূরণ করতে না পারলে স্কুল শিক্ষকদের প্রণোদনা কমে যাবে। ছাটাই হওয়ারও ভয় আছে। কাজেই শিক্ষকরা  মেধার বিকাশ ঘটাবার চেষ্টার কোন ত্রুটি করেন না কেউ ফেল করে না। হাই স্কুল শেষ করে কেউ বেকার থাকে না। গ্রামে গ্রামে শিল্প কারখানা রয়েছে সেগুলো বড় বড় কারখানার শাখা। তখন ধুমসে তৈরি হচ্ছে টেলিভিশনকিন্তু  উৎপাদন ব্যবস্থা  একটু  অন্য রকম হাত এক জায়গায় তো পা আর এক জায়গায়। অন্য কোন গ্রামের কারখানায় তৈরি হচ্ছে তার মাথা ধড়। কেন্দ্রীয় কারখানায় যেয়ে সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ জোড়া লেঘে বাজারে যাচ্চে। এভাবে তৈরি হচ্ছে রেডিও  এবং রেফ্রিজেটার সব পরিবার পাবে  একটা করে অভিন্ন মানআকার অকৃতি। বিলাস সামগ্রী না , জীবনের

প্রয়োজনীয়  অনুষঙ্গমিশ্র অর্থনীীতর   পরীক্ষা নিরীক্ষার  অন্য এক  পরযায়ে ব্যক্তি মালিকানায়  শ্রমিকরা পাচ্ছে বাড়ি। সামনে পিছনে একটুকরো করে জমি। যে যার পারিবারিকচাহিদা মেটাতে  বেগুন পিয়াজ মরিচ শাক সব্জি উৎপাদন  করছে পরম উৎসাহে। যত উৎপাদন ততো লাভ।

সাংহাইতে যেয়ে দেখলাম শিল্প বিকাশের এক নতুন ধারা সরকারি মালিকানায় আনাড়ি হাতে পড়ে  সবগুলোরই কঙ্কাল দশা হয়ে পড়েছিল প্রাক্তন মালিক প্রশাসকরা ফিরে এসেছে। রাষ্ট্রায়াত্ব  শিল্প কলকারখানাগুলো  এখন  হাসছে তাজা গেলাপের মত। শ্রমিক কাজ করছে।বাড়তি কাজের বাড়তি মজুরি। চুরি চামারি নেই। শোষণ নেই , বঞ্চনা  নেই।বছর শেষে শ্রমিক কর্মচারি  উৎপাদন সফলতার জন্য মোটা বোনাস পাচ্ছে এরই নাম শোষণমুক্ত উৎপাদন ব্যবস্থা।

একটা  মস্ত বড় সূতাকল দেখলাম। যা সারা চীনের ৭৫ ভাগ চাহিদা পূরণ করছে।  স্থানীয়ভাবে পাওয়া বিপুল পরিমান পেট্রলিয়ামকে তরল গ্যাসে রূপান্তর করে  সিনথেটিক সূতা উৎপাদন করা  হচ্ছে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে।  মাত্র ৫০ জন শ্রমিক কর্মচারি বিশাল যন্ত্র দানবকে  আহার দিয়ে  পরিচর্যা দিয়ে  সচল ও  ফলবান করে রেখেছে। কারও মধ্যে কোন  দেনা পওনার চাপান উতোর নেই। উসখুশ নেই । স্বাচ্ছন্দে সাবলীল গতিতে অবিরাম চলমান রয়েছে সবকিছু।  অসম্ভবকে সম্ভব করা এই  প্রক্রিয়া

লেখক: কলাম লেখক ও সাংবাদিক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here