হিষ্টোরিয়ার কয়েদি গারদ

0
720

এস বি এ নিলয়

হিষ্টোরিয়া হলো এমন একটি নগর বা উপশহরের নাম যে উপশহরের ব্যাপারে লোকজন তেমন জানে না। জানবেই বা কীভাবে ? যে জানবে সে সেটা অন্যকে বলার আগেই  মারা যাবে মানে তাকে মেরে ফেলা হয়। হিষ্টোরিয়া শহরের বাসিন্দারা ছিল খুব শান্তি  প্রিয়। এখানে অফিস আদালত থানা দোকান পাট শপিং মল  অন্যান্য প্রয়োজনীয় সবকিছু রয়েছে। ছোট্ট এই শহরটিতে প্রায় তিন শহস্রাধিক মানুষের বসবাস। এই ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর আদি অস্তিত্ব বলতে ছিলো একটি পাগলা গারদ। যা কয়েকশো বছরে পূর্বে নির্মাণ করা হয়েছিলো। সাধারণত এ ধরণের পাগলা গারদ জনাকীর্ণ এলাকায় স্থাপন করা হয়না তাই তৎকালীন মেইন শহর থেকে দূরে এই জায়গায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো সেই সাথে তার খুব নিকটে এই হিষ্টোরিয়া নামক ছোট উপশহর টি স্থাপন করা হয়। লক্ষ্য ছিলো উল্লেখিত পাগলা গারদে কর্মরত চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মী ও অন্যান্য স্টাফরা এখানে রাতে বসবাস করতে পারেন।

দীর্ঘ বছর পর বছর দুয়েক আগে থেকে আর মানসিক রোগী এখানে আর আনা হয়না। এখানে এখন মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত কয়েদিদের সাময়িক রাখার জন্য করা হয়েছে। তবে এখানে যে ধরণের কয়েদিদের আনা হতো তারা ছিলো দেশের সবচেয়ে উচ্চ ভয়ংকর ও দুরন্ত দাগী মানুষ। এখানে থেকে তাদের নিয়ে জঘন্য অপরাধ ও কার্যক্রম এর ফলে তাদের উপর ভিন্নধর্মী গবেষণা করা হতো। এ জন্য দেশের সবচেয়ে দামি দামি ও সাহসী মনোবিজ্ঞানী ও চিকিৎসকদের সম্বনয়ে গঠিত টিমের মাধ্যমে তা পরিচালনা করা হতো। তাদের মধ্যে একজন হলেন ডা:চার্লস তাকে অনেকে ডক্টর ডেথ ( Dr. Death ) বলেও ডাকতেন। একসময় তাকে এই ডিপার্টমেন্ট এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। ঐ সময়ে দেশের অন্যান্য চিকিৎসক ও সহকর্মীরা তার ভয়ে থাকতো কারন তিনি আসামিদের পাশাপাশি অন্যান্য চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর উপরও পরীক্ষা করতেন । তিনি কোন অনুুসূচনা ছাড়াই মাঝে মাঝে তাদের উপর মানসিক নির্যাতন করতেন।‌ ড.চার্লসের সময়ে এমন কোন দিন নেই যে ঐ পাগলা গারদ থেকে কয়েদিদের চিৎকার শুনা যেত না। কিছুক্ষণ পর সেই কান্নার আওয়াজ থেকে গেলেও ব্যাথার যন্ত্রনা থাকতো অনেক সময় ।

একসময় তার এই অমানবিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে কয়েদিরা তাকে অনুরোধ করতো। কিন্তু তিনি তার সিদ্ধান্তে অনড় কারো কথা কর্ণপাত করেনি। এমনকি তার সাথে যারা নিবিড় ভাবে কাজ করতো তারাও কিছু বলার সাহস করতো না। এমনকি সেখান থেকে বের হয়ে ও কেউ তার ব্যপারে মুখ খোলতো না । তবে একদিন একটু ভিন্ন রকমের ঘটনা ঘটলো। কে বা কারা বাইরে ছড়িয়ে দিলো যে ড.চার্লস বন্দীদের উপর অবৈধ পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তা বাইরের লোকের জন্য রটনা হলেও ঘটনা ছিলো সত্য। তেমন একদিন এক কয়েদি কে মাত্রাতিরিক্ত শক্তিশালী ঔষধ সেবন করিয়েছেন যে সে একমাস পর্যন্ত ঘুমাতে পারেনি এমনকি শরীরের বিভিন্ন স্থানে ও যন্ত্রনা দায়ক পরীক্ষা আরোপ করা হতো তাতে সে না ঘুমাতে পারে। এমতাবস্থায় একদিন এক কয়েদি স‌ইতে না পেরে সেখান থেকে পালাতে গিয়ে দূর্ভাগ্যবশ ধরা পড়ে যায়। ড.চার্লস তার সেই অপরাধে ঐ কয়েদি কে জিহ্বা কেটে বনে রেখে এসেছিলো । তিনি কখনো জঘন্য কয়েদিদের  মানুষ হিসেবে ধরতেন না সে মনে করতো তারা হলো ঐ পরীক্ষাগারের ব্যবহারযোগ্য জীব।

তিনি প্রচুর পরিমাণে গবেষণা করতেন এবং ঔষধ ও আবিষ্কার করতেন। তার এই অভিনব পরীক্ষা নিরীক্ষা কাজে আরোপিত কয়েদিরা বেশির ভাগ মারা যেত আর যারা জীবিত থাকতো তাদের তিনি তার আবিষ্কৃত ঔষধের ট্রফি হিসেবে কয়েদি গারদের এক পাশে আলাদা কক্ষে রাখতেন। কিন্তু একদিন সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। কয়েদি গারদের জন্য রাত্রিকালীন সময়ে দায়িত্ব পালন করার জন্য সিকিউরিটি নিয়োগ দেয়া হয়। সিকিউরিটি এখানকার ভেতরকার কার্যক্রম সম্পর্কে কিছু জানাতে না। ঐ রাত্রে পাহারা দেবার সময় একজন চতুর কয়েদি তাকে কাছে ডেকে নিয়ে চাবি খানা নিয়ে নেন। কক্ষের ভেতর চাবিটি কৌশলে মাটিতে রেখে সিকিউরিটি কে বলে যে তার চাবি পরে গেছে। সিকিউরিটি তখন বসে ভেতরে হাত দিয়ে চাবিটি উঠাতে গেলে চতুর কয়েদি তার উপর ক্ষুধার্ত সিংহের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে সিকিউরিটি কে মেরে ফেলে একে একে সকল কয়েদি কে মুক্ত করে দেয়। এমনকি তারা কয়েকজন মিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক ও সহকর্মীদের মেরে ফেলে। কিন্তু ড.চার্লস থাকা সত্ত্বেও তাকে না মেরে গোপনে অমানবিক ভাবে সপ্তাহ খানেক নির্যাতন করা হয়। এক পর্যায়ে তাকে দিয়ে জোর করে ঐ কয়েদি গারদে আরও কয়েদিদের আনা হয়েছে।

এভাবে কয়েক সপ্তাহ কেটে গেছে হিষ্টোরিয়ার লোকজন ও তাদের পরিবার চিন্তিত হয়ে পড়েন যে যারা কাজে তারা কেন ফিরে আসছে না। এমনকি যে সকল পুলিশ ভ্যান ও ঔষধের গাড়ি ভেতরে ঢুকতো তা আর বেরতে দিত না কারন তাদের ও মেরে ফেলতো । তারপর এক রাতে ঘটলো এক ভয়ংকর ঘটনা ।
ঐদিন রাতে প্রচণ্ড শীত থাকা সত্ত্বেও সব কয়েদি গারদ থেকে বেরিয়ে আসলো। এবং সেখানে থাকা ১০০ কয়েদি ও অতিরিক্ত আসা কয়েদি সহ সবাই হিষ্টোরিয়ার দিকে র‌ওয়ানা হলো । সেখানে গিয়ে একে একে সকল বাসিন্দাদের মেরে সব লাশ গুলো একত্রে এনে জড়ো করে এনে আগুন ধরিয়ে দেয়। সেই রাতে এখানকার কেউ এ ভয়াবহ থাবায় বাঁচেনি। কয়েদিদের মধ্যে সবাই ওখানে দোকান পাট থেকে শুরু করে শপিং মল অফিসে কার্যক্রম শুরু করে। বাহির থেকে কেউ এখানে এলে তাকে আর বাহিরে যেতে দেয়া হতো না । কেউ বুঝানোর পরেও বেরোতে চাইলে তাদের ও মেরে ফেলা হতো। তারা কখনো চাইতো না যে তাদের এই গোপন মিশন নতুন ভাবে বাঁচার জন্য পথচলা বাইরের কেউ জেনে যাক। তাই অত্যন্ত গোপনে এগিয়ে যেতে লাগলো এই পথ চলা । 

এস বি এ নিলয়
শিক্ষার্থী ৮ম শ্রেণি
মতলব উত্তর, চাঁদপুর।
৩০, এপ্রিল ২০২০

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here