কলকাতা থেকে
দিলীপ রায়
পূজা প্যান্ডেলে হুলস্থল । একে অপরের প্রতি চাওয়া চাওয়ি । বাড়ি ভর্তি মানুষের মধ্যে গুঞ্জন । ঠাসা ভিড় । গ্রামের প্রতিটা বাড়িতে বটকৃষ্ণ সমাজদার জোড়হাতে তাঁদের বাড়ির মা মনসা পূজো দেখার আমন্ত্রণ জানিয়ে এসেছেন । যার জন্য সপরিবারে গ্রামের অধিকাংশ মানুষের ঢল । আয়োজনের চাকচিক্য অতুলনীয় । যেমনি জাঁকজমক প্যান্ডেল, তেমনি বিজলী বাতির রোশনাই ।
দুপুরবেলা পূজো শেষ । তখন অতটা সমস্যা হয় নি । ব্রাম্মন পুরোহিত বিদগ্ধ মানুষ, তাই তিনি পূজোটা কোনোরকমে ঢাকের বাজনা ছাড়া সেরেছেন । কিন্তু এখন সন্ধ্যা আরতির সময় । সুতরাং ঢাক বাজানো অবশ্যাম্ভাবী । তাই তিনি বেঁকে বসেছেন । তাঁর সঙ্গে লম্ফঝম্ফ করছেন তপার মা ও তার ভাগলপুরের মাসী । তপোজিত আবার বটকৃষ্ণ বাবুর একমাত্র পুত্র এবং তার ডাক নাম তপা । মাসীর তেজি গলা, “পয়সা দিয়ে অগ্রিম বায়না করা । অথচ বায়েন পাড়ার ঢাকীর এতটা সাহস কী করে হয় পূজোর নির্দিষ্ট সময়ে ঢাক বাজাতে না আসার” !
তপার স্কুল জীবনের বন্ধু ঘনা অর্থাৎ ঘনশ্যাম । ঘনার বিজ্ঞানে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি । গবেষনার জন্য তার প্রস্তুতি । তপা সবে এম-বি-বি-এস শেষ করলো । ঘনার নিবাস পাশের গ্রাম ইঞ্জিনপুরে । দুজনেরই গ্রাম বেথুয়াডহরী শহরের কাছাকাছি । তপাদের আবার বেথুয়াডহরীর সাহা পাড়ার বনেদী পরিবার । জাতিতে কায়স্থ । কিন্তু ঘনারা আবার ব্রাম্মন । দুজনের মধ্যে গাঢ় বন্ধুত্ব দীর্ঘদিনের । দুজনের খুব মিল । শান্তিনিকেতন থেকে ঘনার বাড়ি পৌঁছাতে দুপুর গড়িয়ে যাওয়ায় সন্ধ্যার একটু আগেই সে তপাদের বাড়ি পৌঁছেছে । তারপর তার সম্মুখে এই হুলস্থুল কান্ডকারখানা ।
অবাক বিস্ময়ে ঘনা তপার কাছে জানতে চাইলো, সমস্যাটা কী ?
ঢাকী আসে নি, যার জন্য মা-মাসীর তুমুল হইচই ।
হইচই কেন ?
পুরোহিত ঠাকুর মহাশয় ঢাকী ছাড়া সন্ধ্যা আরতি করতে নারাজ । মা-মাসী সেকেলের মানুষ । তাঁরাও উঠে পড়ে লেগেছেন ঢাকীর বাজনার জন্যে । তাঁদের বক্তব্য, বায়না নেওয়া সত্বেও ঢাকী কেন এলেন না ?
দুই বন্ধুর কথোপকথনের সময় হঠাৎ তপার বাবা হন্তদন্ত হয়ে উপস্থিত । কিছুটা হাঁপানো অবস্থায় তপার বাবা তপাকে উদ্দেশ্যে করে বললেন, তুই শিগ্গির ঢাকীর খোঁজ নে ?
আমি তাঁদের বাড়ি চিনি না ।
সেই সময় ঘনা তপার বাবার উদ্দেশ্যে বললো, টেলিফোন নম্বর থাকলে টেলিফোনে ঢাকীকে সত্বর ডেকে পাঠান ।
টেলিফোনে তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে না । তাই বাধ্য হয়ে তপাকে আবার বললেন, “তুই ঢাকীদের বাড়ি গিয়ে ঢাকীকে ডেকে নিয়ে আয় । নতুবা গাঁয়ের মানুষের সামনে বেইজ্জতির চূড়ান্ত । সঙ্গে ঘনশ্যামও যাক্ ।
তখন পশ্চিমাকাশে সূর্য ডোবার মুখে । চারিদিকে গাছপালায় পাখীদের কলতান । তাদের ঘরে ফেরার পালা । রাখালেরা খোলা মাঠে গরু চরিয়ে ঘরে ফিরছে । বাছুরের হাম্বা – হাম্বা রব, সম্ভবতঃ গাই গরুর দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য বাছুরগুলির ছটফটানি । গাঁয়ের গৃহ বধূদের তুলসী তলায় সন্ধ্যাবাতি জ্বালানোর প্রস্তুতির তৎপরতা । চাষী হাল কাধে বলদ গরু নিয়ে বাড়ির দিকে । সূর্য ডুবু ডুবু । ঐদিকে মা-মাসীর অবিরাম অস্থিরতা । পুরোহিত মহাশয় ঠাকুরের সামনে বসে ভীষণ বিরক্ত । উপস্থিত বাড়ি ভর্তি গাঁয়ের মানুষের ফিসফিসানি ।
ঢাকীকে ডেকে আনার জন্য তপাকে তার বাবার পুনরায় তাগাদা । ঠিক সেই মুহূর্তে ……!
ঠিক সেই মুহূর্তে ঢাক কাঁধে কমলতার আবির্ভাব ।
“ঐ তো ঢাকী”, চিৎকার করে উঠলো ঘনা ।
সকলের দৃষ্টি ঢাকীর উপর । শান্ত স্নিগ্ধ স্লিম চেহারার মিষ্টি একটি মেয়ে ।
কমলতা সোজা তপার বাবার সম্মুখে গিয়ে বললো, আমাকে ক্ষমা করবেন কাকাবাবু । বাবার ভীষণ জ্বর । বাবা সকালবেলায় আসবেন ঠিকঠাক ছিলো । কিন্তু ঘুম থেকে উঠার পর মা লক্ষ্য করলেন, “বাবার গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে । সঙ্গে সঙ্গে আমি বাবাকে নিয়ে হাসপাতালের আউটডোরে ডাক্তার দেখালাম । ডাক্তারবাবু ঔষধ দিয়ে বললেন বাবাকে অন্তত পাঁচদিন বিশ্রামে থাকতে । জ্বরের গতি মোটেই ভাল না । ডাক্তারবাবুর অনুমান, বাবার টাইফয়েড হয়েছে । তাই বাবা ঢাক নিয়ে আসতে পারলেন না, বরং আমাকে পাঠালেন । ডাক্তার দেখাতে গিয়ে আমার দেরী হওয়ার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী” ।
তাহলে সন্ধ্যা আরতির বাজনার কী হবে ?
“কেন কাকাবাবু, আমি ঢাক বাজাবো” । তাৎক্ষণিক উত্তর কমলতার ।
তবে চলো পুরোহিত ঠাকুরের কাছে ।
তপার ভাগলপুরের মাসী মহিলা ঢাকীকে দেখে নাক সিটকালেন, “ছ্যা, ছ্যা । দেশে কী ঢাকীর আকাল পড়েছে, যার জন্য মেয়ে ঢাকীকে ঢাক বাজাতে হবে !”
তপার মা তাঁর গলা আর একটু চড়িয়ে দিয়ে বললেন, “তোমরা কোথাও কোনো পূজা অনুষ্ঠানে মেয়েছেলেকে ঢাক বাজাতে দেখেছো ? এযে ঘোর অনাচার ।“
কমলতা বিনীত সুরে বললো, “কাকীমা আমি ভাল ঢাক বাজাই । সব ধরনের ঢাকের বোল আমি জানি । আপনি চিন্তা করবেন না । আমার ঢাক বাজনা শুনুন, তারপর মন্তব্য করবেন “।
“এই যে মেয়ে, বেশী ফড়ফড় করো না । তোমরা সেদিনকার মেয়ে । ঠাকুর পূজার কী বোঝো ? মা মনসার মতো জাগ্রত ঠাকুরের পূজো । নীচু জাতের মেয়ে, তার উপর লেখাপড়ায় অষ্টরম্ভা । তার আবার বড় বড় কথা !” ঝাঁঝালো ভাষায় তপার মাসীমা কমলতাকে উল্টোপাল্টা কথা শোনালেন ।
ততক্ষণে কমলতা ঢাক কাঁধে নিয়ে ঢাক বাজাতে শুরু করে দিয়েছে । নেচে নেচে ঢাক বাজিয়ে বোল তুলছে ঃ –
“দাদা বাবু নমস্কার” ।
“দাদা বাবু নমস্কার”
যেমন মিষ্টি বাজনা, তেমনি তার বাজাবার ধরন । উপস্থিত সকল অতিথি অবাক বিস্ময়ে ঢাকের বাজনা শুনছেন । কিছু উৎসাহী গাঁয়ের শিক্ষিত ছেলে-মেয়ে তাদের মোবাইলে ঢাকের বাজনা ভিডিও করছে । তারপর হঠাৎ কমলতা ঢাক বাজনা বন্ধ করে তপার মাসীমার দিকে তাকিয়ে বললো, “মাসীমা আমি বাংলায় এম-এ পাঠরতা । কারও সম্পর্কে কোনোরকম খোঁজখবর না নিয়ে হুটপাট জাত তুলে কথা বলাটা অশোভনীয় । এতে সমাজের কাছে বিরুপ প্রতিক্রিয়া যায় । আমরা বায়েন সম্প্রদায়ের, এটা ঠিক । কিন্তু সমাজের চোখে আর দশটা মানুষের মতো আমরাও মানুষ ।“
কমলতার কথা সহ্য করতে না পেরে মাসীমা সোজাসুজি তপার বাবাকে বললেন, “মেয়েছেলে ঢাকীকে ঠাকুর পূজায় ঢাক বাজাতে দেওয়া চলবে না । সত্বর বিকল্প ঢাকীর ব্যবস্থা করতে হবে ।“
তপার মা সেই মুহূর্তে মাসীর সঙ্গে গলা মিলিয়ে একই কথা বলছেন ।
বটকৃষ্ণ সমাজপতি মহাশয় পড়ে গেলেন মহা ফাঁপরে !
ইত্যবসরে কমলতা ঢাক নামিয়ে চটজলদি টয়লেটে গেল । ঐ বাড়ির কাজের মাসী তখন টয়লেটে । কাজের মাসী টয়লেট থেকে বের হওয়ার পর কমলতা টয়লেটে ঢুকলো । অন্যদিকে কমলতা টয়লেট থেকে বের হওয়া পর্য্যন্ত কাজের মাসী ঐখানে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো । বের হওয়া মাত্রই কাজের মাসী ছুটে কমলতার আগে পূজার স্থানে পৌঁছে গিয়ে তপার মাসীকে কানে কানে কিযেনো বললো । সেটা শোনার পর তপার মাসীমার তড়পানো চূড়ান্ত পর্যায়ে ।
পুরোহিত ঠাকুর মহাশয় আধুনিক ধ্যান ধারনার মানুষ । তাঁর দৃষ্টিভঙ্গী স্বচ্ছ ও আধুনিক । তিনি স্পষ্টতঃ বললেন, “মহিলা ঢাকী ঢাক বাজালে তাঁর সন্ধ্যা আরতিতে কোনও আপত্তি নেই” ।
কিন্তু কে শোনে কার কথা ! মাসীর তখনও উঁচু গলায় চিৎকার, “ঢাক বাজানো মহিলার ক্ষেত্রে শুচি-অশুচি, পবিত্র-অপবিত্র বলে একটা কথা আছে । মেয়েটা এই মুহূর্তে অসুস্থ । তার পক্ষে পরম আরাধ্য দেবতার পূজার সন্ধ্যা আরতিতে ঢাক বাজানো অশুভ ।“
গাঁয়ের জনার্দন মোড়ল এতক্ষণ চেয়ারে বসেছিলেন । তিনি উঠে দাঁড়ালেন । তপার বাবাকে ডেকে বললেন, “মেয়েছেলে ঢাকীকে দিয়ে ঢাক বাজানো অশাস্ত্রীয় কাজ । তাছাড়া মেয়েটা অসুস্থ । তাকে দিয়ে পবিত্র মা মনসার পূজাস্থলে ঢাক বাজানো নৈব নৈব চ । আর তুমি যদি আমাদের কথা না মানো তাহলে গ্রামের মানুষ তোমাদের এই পূজার অনুষ্ঠানে কেউ থাকবে না । এবার তুমি সিদ্ধান্ত নাও তুমি কী করবে !”
ততক্ষণে কমলতার ঢাক বাজানোর ভিডিওটা সোসাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেছে । গ্রামের অবশিষ্ট আমন্ত্রিত মানুষ মহিলা ঢাকীর ঢাক বাজানোর কথা জানতে পেরে ঔৎসুক্য হয়ে তপাদের বাড়ির পূজোতে ভিড় করছেন ।
কমলতা উপস্থিত গ্রামবাসীর ঔৎসুক্য আন্দাজ করে পুনরায় ঢাক কাঁধে নিয়ে বাজাতে যাবে এমন সময় তপার ভাগলপুরের মাসী ধমক দিয়ে বললেন, “তোমার আস্পর্ধা তো কম নয় ! গাঁয়ের মোড়লের নিষেধাজ্ঞাকেও অমান্য করা ! আমরা কোন্ দেশে বাস করছি । একটা বায়েনের মেয়ের বলিহারি তেজ !”
বাড়ি ভরতি তখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে গ্রামের মানুষের জটলা । একে অপরের মধ্যে কথোপকথনের খুনসুটি । জনার্দন মোড়ল তাঁর বক্তব্যের সমর্থনে কিছু গ্রামের মানুষকে উস্কাচ্ছেন ।
বুদ্ধিমান ঘনশ্যাম আর ঠিক থাকতে না পেরে কমলতার সমর্থনে গর্জে উঠলো । প্রথমেই ঘনশ্যাম পুরোহিত ঠাকুর মহাশয়কে বললো, “মহিলা ঢাকীতে আপত্তি না থাকলে আপনি আরতি পুজা শুরু করছেন না কেন” ?
পুরোহিত মহাশয় কমলতার উদ্দ্যেশে বললেন, তুমি ঢাক বাজাও । আর তিনি জ্বালিয়ে রাখা পঞ্চ প্রদীপ হাতে নিয়ে মা মনসার মূর্তির মুখের সামনে গিয়ে নাচের ভঙ্গিমায় ঘোরাতে লাগলেন ।
কমলতার ঢাকীর বোল তখন বাজছে ঃ “কুররর কুর” ।
জনার্দন মোড়ল তখন চিৎকার করে উঠলেন, “ঢাক বাজানো বন্ধ করো” ।
ঘনশ্যাম মোড়লকে সোজাসুজি বললো, নিয়মকানুন মেনে একটা শিক্ষিত মেয়ে ঢাক বাজাচ্ছে । ঢাকের বোলগুলি শ্রূতিমধুর । পুরোহিত মহাশয় তাকে ঢাক বাজাতে অনুমতি দিয়েছেন । প্রাকৃতিক কারণে মেয়েটি অসুস্থ । তাই বলে সে অশুচি । তাছাড়া কমলতা ঠাকুরের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে ঢাক বাজিয়ে যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিচ্ছে । ‘মহিলা ঢাকীকে মা মনসার পূজার সন্ধ্যা আরতির সময় ঢাক বাজাতে দেওয়া হবে না’ এই ধ্যানধ্যারনা আপনাদের নিজস্ব তৈরী । এর কোনও শাস্ত্রীয় ব্যাখা নেই । আপনারা ইচ্ছা করে বায়েন সম্প্রদায়কে অসম্মান করছেন । আরও শুনুন, আজ যে পুরোহিতকে দেখছেন ঘটনাচক্রে তিনি ব্রাম্মন । আগামীদিনে অব্রাম্মন মানুষেরাও পুরোহিত হিসাবে আপনাদের পূজা অর্চ্চনা করবেন । যদিও অনেক জায়গায় অব্রাম্মন পুরোহিত দিয়ে পূজা অর্চ্চনা শুরু হয়ে গেছে । সুতরাং কমলতা তার বাবার কাছে ঢাক বাজানো শিখে ঢাক বাজাচ্ছে এবং বাবা অসুস্থ থাকায় বাবার জায়গায় বাবার দায়িত্ব পালনের তাগিদে ঢাক বাজাতে এসেছে । এতে আপনাদের আপত্তি থাকার কথা নয় । বড় বড় গায়ক-গায়িকাদের গানের জলসায় ঢাক বাজানো এখন একটা গুরুত্বপূর্ণ বাজনার অঙ্গ । সেখানে ঢাক বাজনা শুধুমাত্র বায়েনদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, সকল শ্রেনীর মানুষ এমনকি ব্রাম্মনেরাও গানের তালে তালে ঢাক-ঢুলি বাজাচ্ছেন । তাই কমলতাকে তার ঢাক বাজানোর অধিকার কেড়ে নিলে গোটা মহিলা সমাজকে আপনারা অস্মমান করবেন এবং এর ফল হবে সুদূরপ্রসারী । এরজন্য দেশের গোটা মহিলা সমাজের কাছে আপনারা যোগ্য মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হবেন ।
ঢাক বাজানো শুরু করলো কমলতা । ঢাকের বোল তুললো, “হরে হরে দুর্গা । হরে হরে দুর্গা ।“
মোড়ল মহাশয় জনা দশেক লোক নিয়ে স্থান ত্যাগ করলেন । বাবাকে পুনরায় মোড়ল মহাশয়কে পূজার সন্ধ্যা আরতি দেখার জন্য ডাকতে যেতে দেখে তপা বাবাকে বাধা দিয়ে বললো, “তাঁকে যেতে দিন্ বাবা । পুরোহিত মহাশয়কে সন্ধ্যা আরতি শেষ করতে দিন্ ।“
ইতিমধ্যে থানার পুলিশ এসে হাজির । কেউ দুরভিসন্ধি করে পুলিশকে খবর দেওয়ার জন্য পুলিশের আগমন । পুলিশ আধিকারিক তপার বাবাকে বললেন, পূজোয় কোনও সমস্যা ?
“না স্যার । প্রসাদ খেয়ে ফিরবেন”, তপার বাবা পুলিশ আধিকারিককে অনুরোধ করলেন ।
ঢাক কাঁধে নিয়ে কমলতা ঘুরে ঘুরে ঢাক বাজাতে থাকলো, আর কাসি বাজানোতে সঙ্গ দিচ্ছে তপা নিজে । চারিদিকে উলুধবনি । শঙ্খ ধবনি । দর্শকদের হাততালি ! পুরো ঠাকুরের প্যান্ডেল জমজমাট । অন্যদিকে কমলতার মিষ্টি ঢাকের বাজনার সাথে সাথে পুরোহিত মহাশয় খুব মনোযোগ সহকারে নেচে নেচে আরতির পূজা সারছেন । অন্যদিকে গাঁয়ের ছেলে-মেয়েরা ঢাকের বাজনার তালে তালে কোমর দোলানোতে মত্ত । একসময় কমলতা ঘনশ্যামের হাত ধরে টানার ফলে, ঢাকের বাজনার তালে তালে ঠাকুরের সামনে ঘনশ্যামের নাচ দেখার জন্য উপস্থিত প্রত্যেকের সোৎসাহ রোমহর্ষজনক !
তারপর ………।
তারপর পারিশ্রমিক দিতে গেলে কমলতা হাত জোড় করে বললো, আমাকে ক্ষমা করবেন কাকাবাবু । দেরীতে আসার জন্য আমি পারিশ্রমিক নিতে পারবো না । তবে আপনারা আমার ঢাক বাজানো শিল্পকে যেভাবে মর্যাদা দিলেন তাতেই আমি কৃতজ্ঞ ।