মোহাম্মদ আরিফ হোসেন
আজকের দিনে ওয়াই-ফাই ব্যবহার করেন না আর রাউটার চিনেন না এমন মানুষ খুজে পাওয়া দুষ্কর। রাউটার হয়ে ওঠেছে আমাদের জীবনের অংশ। মোবাইলে ইন্টারনেট ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক রিসিভ করা, কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহার করা সহ ভার্চুয়াল জীবনকে সহজ করার জন্য আমরা ওয়াই-ফাই ইন্টারনেট রাউটার ব্যবহার করি। আমরা জানি স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল। ভাল থাকতে হলে আমাদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং সেই সাথে স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বিশ্বাস করে বাস্তবিক জীবনে প্রয়োগ করতে হবে। আজকের আলোচনার বিষয় এমনি এক প্রযুক্তি যা অতিব্যবহার, অপব্যবহারে আমাদের জীবনের জন্য ঝুঁকি রয়েছে অনেকাংশে, চলুন একটু বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়া যাক। আমরা উন্নয়নশীল দেশে বাস করি। আমাদের জীবন ব্যবস্থা তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই অস্বাস্থ্যকর এবং অপরিকল্পিত। তাছাড়া আমাদের দেশের প্রযুক্তি নিয়ম নীতি যথেষ্ট প্রশ্ন বিদ্ধ। তারপরও সব বাঁধা পেরিয়ে আমরা উন্নয়নের দিকে যেতে চাচ্ছি। ফলে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগছে আমাদের সবখানে। আর এখানেও আছে কিছু বিপত্তি,আমাদের অতি আবেগি চিন্তা বা অজ্ঞতা আমাদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলছে প্রতিনিয়ত। বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারের সহজ এবং কম খরচের প্রধান উৎস হলো ওয়াইফাই ব্যবহার। আর আমরা জানি এই ওয়াইফাই এর জনক বা আবিষ্কারক ডাচ কম্পিউটার বিজ্ঞানী ভিক্টর ভিক হেরেস । Wi-Fi এর পূর্ণরূপ হল Wireless Fidelity. রাউটার একটি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র, যা হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সমন্বয়ে তৈরি। এটি নেটওয়ার্ক তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়। রাউটার হচ্ছে একটি নেটওয়ার্কিং ডিভাইস যা বিভিন্ন নেটওয়ার্কের মধ্য দিয়ে ডাটা প্যাকেট তার গন্তব্যে কোন পথে যাবে তা নির্ধারণ করে। ডাটা প্যাকেট হচ্ছে ডাটার ব্লক বা ডাটার সমষ্টি। রাউটার ডাটা প্যাকেটগুলোকে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে কম দূরত্বের পাথ (path) ব্যবহার করে। রাউটার ইন্টারনেটে “ট্রাফিক ডিরেক্টিং” এর কাজ সম্পন্ন করে। সাধারণভাবে, একাধিক নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে গঠিত আন্তঃ নেটওয়ার্কের মধ্য দিয়ে একটি ডাটা প্যাকেটকে এক রাউটার থেকে অন্য রাউটারে পাঠানো হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না এটি গন্তব্য নোডে পৌঁছে। একটি রাউটার বিভিন্ন নেটওয়ার্কের দুই বা তার অধিক ডাটা লাইনের সাথে যুক্ত থাকে। (রাউটারের কাজ নেটওয়ার্ক সুইচের বিপরীত, সুইচ বিভিন্ন ডাটা লাইনকে একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যুক্ত করে)। যখন একটি ডাটা প্যাকেট এই লাইনগুলোর একটিতে পৌঁছে, তখন রাউটার এর চূড়ান্ত গন্তব্য জানার জন্য প্যাকেটের তথ্য পড়ে। এরপর এর রাউটিং টেবিল বা রাউটিং পলিসিতে থাকা তথ্যের সাহায্যে প্যাকেটটিকে তার গন্তব্যের পরবর্তী নেটওয়ার্কে পাঠিয়ে দেয়। এর ফলে আন্তঃনেটওয়ার্কের একটি আস্তরণ তৈরি হয়। সবচেয়ে পরিচিত রাউটারগুলো বাসা-বাড়ি এবং ছোট অফিসে ব্যবহৃত হয়। এগুলো শুধু ডাটা পাস করতে পারে, যেমন-ওয়েব পৃষ্ঠা, ই-মেইল, আইএম এবং হোম কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের মধ্যকার ভিডিও। রাউটারের একটি উদাহরণ হতে পারে স্বত্বাধিকারী ক্যাবল বা ডিএসএল রাউটার যেটি একটি আইএসপি এর মাধ্যমে ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত করে। আরও জটিল রাউটার আছে , যেমন এন্টারপ্রাইজ রাউটার, বড় ব্যবসা বা আইএসপি নেটওয়ার্ককে শক্তিশালী কেন্দ্রীয় রাউটারের সাথে সংযুক্ত করে এমন। এই কেন্দ্রীয় রাউটার ডাটাকে অপটিক্যাল ফাইবার লাইনের মধ্য দিয়ে দ্রুতগতিতে ইন্টারনেটে প্রেরণ করে। যদিও রাউটার সাধারণত একটি হার্ডওয়্যার ভিত্তিক ডিভাইস, তবুও দেখা যাচ্ছে সফটওয়্যার ভিত্তিক রাউটারের ব্যবহারও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যখন আমরা Wi-Fi অন করি তখন তা ইলেক্ট্রোম্যাগ্নেটিভ রেডিয়েশন ছাড়তে থাকে ওয়াইফাই রাউটার ।
তরঙ্গ চলাচল –> ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক ফিল্ড–> ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক রেডিয়েশন । সারাদিনই থেকে যাওয়া এই চলমান ওয়াইফাই রেডিয়েশন আমাদের জীবনে শাররিক ও মানসিক কি কি ভয়ংকর ক্ষতি করতে পারে তা আমরা ভাবতে পারি না। তারই একটা ছোট্র তালিকা আপনাদের সামনে দেয়া হলো :-
★ অনিয়মিত হৃদস্পন্দন।
★ মাথা ঘোরা ও ব্যথা করা।
★ অমনোযোগিতা।
★ খাবার হজমে সমস্যা।
★ উদ্বেগ বা বিষণ্নতা।
★ অত্যধিক ক্লান্তি।
★ পুরুষের ক্ষেত্রে শুক্রাণু প্রতিহত করে পুরুষত্ব বিলীন করে।
★ মস্তিষ্কের কাজে বাধা দেয়।
★ ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করে।
★ কোষের বৃদ্ধিতে বাধা দেয়।
★ চোখের দৃষ্টি ঘোলা।
★ স্কিন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
★ হৃদরোগের হাড় বাড়ায়।
এই বিষয়ে সম্প্রতি ডেনমার্কে একটি গবেষণা হয়েছে। ড্যানিশ ছাত্র ৪০০টা বীজ নিয়ে পরীক্ষা করে এবং দুই কক্ষের মধ্যে বীজ গুলো বিভক্ত করে রাখেন। এক কক্ষে ২০০ টি এবং অন্য কক্ষে ২০০ টি বীজ রাখা হয়। প্রথম কক্ষে একটি ভাল ইন্টারনেট যুক্ত ওয়াইফাই স্থাপন করে হয় আর অন্য কক্ষটি স্বাভাবিক রাখা হয় । কিন্তু কিছু দিন পর দেখা গেলো, ইন্টারনেট যুক্ত ওয়াইফাই কক্ষের বীজগুলা অঙ্কুরোদগম হয়নি, অপর পক্ষে ২য় রুমের বীজগুলা স্বাভাবিক ভাবে অঙ্কুরোদগম হয়েছিলো। আর এতেই প্রমানিত হল যে আমাদের এই নিত্য ব্যবহারিক ওয়াইফাই আমাদের যতটা না উপকার সাধিত করছে তারচেয়ে বেশি ক্ষতি ফেরত দিচ্ছে। আর তাই অপ্রয়োজনীয় কারণে রাউটার ও ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক থেকে আমাদের যতটা সম্ভব দূরে থাকতে হবে এবং ছোট বাচ্চাদেরকেও দূরে রাখতে হবে, তবেই আমরা এর মারাত্নক ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে পারি।