রসগোল্লা

0
1316

রসিক আলী

আহমেদ ফরিদ

সমাস, শিখতে লাগে ন মাস। কিন্তু রসিক আলি ,ন’মাসে একটাও সমাস শিখতে পারল না। কোনটা ব্যাস বাক্য, কোনটা সমাস্যমান পদ আর কোনটা সমস্ত পদ এর কিছুইই মনে থাকে না।সে কোনটা বাগ আর কোনটা ধারা এ নিয়ে প্রায়ই তার গোলমাল লেগে যায়। ঐ তো সেদিনের কথা। বাবু অনুকূল চক্রবর্তী ক্লাসে ঢুকে জামার হাত গুটাতে গুটাতে রসিককে বলল, ‘রসিক বলতো দেখি রসগোল্লা কোন সমাস আর এর ব্যাস বাক্য কী হবে? 
স্যারের জামার হাতগুটানো দেখে রসিকের কলিজা শুকিয়ে তখন সাহারা মরুভূমি। সে উত্তর দেবে কী? আর ব্যাকরণের সবকিছুর মধ্যে সমাসটাকেই তার সবচেয়ে কঠিন মনে হয়। সে কঠিন প্রশ্নটাই কিনা স্যার রসিককে জিজ্ঞেস করে বসলেন। ক্লাসে এতো এতো বাঘা ছাত্র থাকতে তাকে কেনো স্যার এতো কঠিন একটা প্রশ্ন করবেন? তবে কি রসিক নিজের অজান্তে স্যারের সাথে কোন বেয়াদবি করেছে? জেনেশুনে স্যারের সাথে বেয়াদবি করবে এমন ছাত্র তখনও মায়ের পেটে। হঠাৎ রসিকের মনে হলো সেদিন স্যার যখন বারান্দা দিয়ে হাঁটছিলেন রসিক তখন সদ্য দেখা সিনেমার একটা গান ‘তোরে ছাড়া বাঁচে না পরান’ গুণগুণ করে গাইছিল। স্যার কি সেটা শুনে মাইন্ড করেছিলেন? এর জন্য রসগোল্লা সমাসের প্রশ্ন ? স্যার তো জানেন রসিক ছাত্র ক্যামন। তাকে প্রায়ই তিনি আদু ভাইয়ের সাথে তুলনা করেন।তাতে অবশ্য রসিক কিছুই মনে করে না। আদুভাইয়ের মতো পাকাপোক্ত ছাত্র হওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
সেদিন কী ঘটেছিল তা আর রসিক মনে করতে চায় না। তবে তার পরের তিনদিনের জ্বরের কথা রসিক কখনও ভুলবে না।
সেদিন রসিক প্রতিজ্ঞা করেছিল রসগোল্লা নামক জিনিসটা তার যত প্রিয়, যত মজাদারই হোক আর সে খাবে না। কিন্তু মানুষ বোধহয় প্রতিজ্ঞা করে প্রতিজ্ঞা ভাঙার জন্যই। নতুবা সেদিনই বা কেনো তাকে বাজারে যেতে হবে? আবার যেতেই যখন হলো তখন ঘোষ কাকার মিষ্টির দোকানের সামনে দিয়েই কেনো যেতে হল? না হয় ঘোষ কাকার মিষ্টির দোকানের সামনে দিয়ে গেল তাই বলে ঘোষ কাকার সামনেই তাকে পড়তে হবে!
ভাতিজা যে আমারে না দেইখ্যাই যাইতেছগা। আও, আও ভিতরে আও। তোমার লাইগ্যা এই মাত্র রসগোল্লা বানাইছি। গরম গরম। এখনও কড়াইতে আছে। 
ঘোষ কাকার ডাক আসলে বলতে গেলে রসগোল্লার ডাক উপেক্ষা করা রসিকের পক্ষে সম্ভব হয় না। সুর সুর করে সে ঢুকে পড়ে দোকানে। ঘোষ কাকার দোকানটা বড়ই নোংরাা। মেঝেটা কালো, স্যাত স্যাতে। বেঞ্চগুলো কাঠের কিন্তু পায়াগুলো বাঁশ দিয়ে জোড়া লাগানো। বসলেই বেঞ্চ থেকে কড়কড়ে একটা আর্তনাদের মতো শব্দ বের হয়। ঘোষ কাকা ততক্ষণে ছোট্ট একটা টিনের পিরিচে করে দুটি রসগোল্লা নিয়ে হাজির। দোকানে আর কেউ নেই, তিন পা ওয়ালা একটা কুত্তা ছাড়া। কুত্তাটার কাজ হলো লেজ নেড়ে নেড়ে খরিদ্দারকে স্বাগত জানানো। তাও সে এমন লাটের ব্যাটা আলসে, যে উঠে দাঁড়িয়ে সম্ভাষণের কাজটি সে করবে না। আর একটি কাজ হয়তে সে গোপনে করে। মাঝে মাঝে মিষ্টির কড়াইতে মুখ দেয়া। আর করবেই না কেনো? দোকান পাহারা দেয়ার জন্য তো ঘোষ কাকা তাকে কোন বেতন দেন না। বিনি পয়সায় তো আর সে….। থাক সে কথা। রসগোল্লার গল্প ফাঁদতে গিয়ে কুত্তার গল্প বলা শোভনীয় নয়। সে গল্প না হয় আর এক দিন।
ছোট্ট পিরিচে ছোট্ট দুটি রসগোল্লা গলা পরিমান রসে ডুবে আছে। ছাল উঠা চামচ দিয়ে নিমেষের মধ্যেই গোল্লা দুটি গলার ভিতরে রসিক চালান করে দিয়ে কিছুক্ষণ ধরে রাখে। তারপর কুত করে গিলে ফেলে। এরপর চামচ দিয়ে রসিয়ে রসিয়ে সবটুকু রস পান করে নেয়। ঘোষ কাকা মাঝে এসে আরো দুচামচ রস ঢেলে দিয়ে যান। ঘোষ কাকাকে রসিকের তখন ঘোষ কাকা মনে হয় না, মনে হয় স্বর্গীয় কোন দূত। চামচে যখন রস আর উঠানো সম্ভব হয় না, রসিক তখন হাত লাগায়। হাত দিয়ে চেটে পুটে সর্বশেষ বিন্দুটুকু পর্যন্ত খেয়ে নেয়। মাঝে আড়চোখে মিষ্টির কড়াইয়ের দিকে রসিক বার দুয়েক তাকিয়েছিল। ঘোষ কাকা সেটি দেখেও না দেখার ভান করে। ঘোষ কাকা অতি চালাক লোক। তিনি জানেন রসিকের পকেটে দুটি রসগোল্লার দামের চেয়ে বেশি পয়সা নেই। 
সেই বাল্যকাল থেকেই রসিককে রসগোল্লা ছাড়ছে না কিংবা বলা যায় রসিক রসগোল্লাকে ছাড়ছে না। সুযোগ পেলেই সে রসগোল্লা খাবে। অথচ তার রয়েছে মধুমেহ রোগ।
বিশ্বে কী এক ভাইরাস এলো তার নাম নাকী করোনা। সারা বিশ্বকে কোনঠাসা করে সে এখন বাংলাদেশে এসে হাজির। প্রথমে কেউ একে পাত্তা না দিলেও এখন এর ভয়ে অনেকেই বিশেষ করে রসিকের মতো শহুরে সাহেবরা দরজায় খিল এঁটে ঘরে বসে আছেন। ভয়ে তারা ঘরের চৌকাঠটি পর্যন্তটি মারান না। অফিস আদালত সবকিছু সরকার বন্ধ করে দিয়েছে। গৃহ সহকারীকে স্ববেতনে ছুটি দেয়া হয়েছে পাছে তারা করোনা নিয়ে আসে। হাটবাজার আপাতত সুপার মার্কেট থেকে অনলাইনে না হয় বাসার দারোয়ানকে দিয়েই করানো হচ্ছে। সেটি সব নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি।
রসিকের কাজ হচ্ছে খাওয়া আর শোওয়া। না,ঠিক বলা হলো না! গৃহের সহকারীর মূল ভূমিকা তাকেই পালন করতে হচ্ছে। রসিকের বউ গুলবদনের অভিমত হচ্ছে করোনার কারণে গৃহ সহকর্মীকে বিদায় দিতে হয়েছে সুতারাং গৃহসহকর্মীর দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে। করোনার জন্য যেনো রসিকই দায়ী। রসিক আর কী করে। বউয়ের ফাইফরমাস খেটেই তার দিন চালাতে হয়। ফাইফরমাস বললে হয়তো ভুল বলা হবে। ঘরমোছা থেকে শুরু করে কাপড় ধোয়া,বাসন মাজা,ফার্নিচার মোছা……হেন কাজ নেই তাকে দিয়ে গুলবদন করিয়ে নিচ্ছে না। তাও একবার নয়,গুলবদনের মনোপূত না হওয়ায় একেক কাজ একাধিকবার করতে হচ্ছে। কাহাতক আর সহ্য করা যায়। একেক বার মনে হয় গুলবদনের চেয়ে করোনার সাথে বসবাস করা অনেক ভালো। অবশ্য কয়েকজন বিজ্ঞানী ইতিমধ্যে বলে দিয়েছেন দুনিয়াবাসীকে অনেক দিন করোনার সাথেই বসবাস করতে হবে। রসিকের একবন্ধু আবু মোকাররিমের মতে বিবাহিত পুরুষ মানেই হলো তারা করোনার সাথে বসবাস করে আসছে। সে বউয়ের মোবাইল নাম্বারটা করোনা নামে সেইভ করে রেখে দিয়েছিল। বউ তা টের পেয়ে কী করেছিল তা সংবাদ পত্রের পাতায় লিখা হয়ে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পাওয়ার মতো অবস্থা।
এরই মধ্যে দেখতে দেখতে চলে আসল রমজান মাস। পাড়ার দোকানের ছোলা-মুলা, হালিম,জিলাপি না হলে ইফতার কী আর জমে। অথচ দোকানদারদের টিকিটিরও কোন দেখা নেই। তারা করোনা আর পুলিশের ভয়ে লাপাত্তা। মনের দুঃখে রসিক যা পায় তা দিয়েই ইফতার সারে।
এদিকে সরকার কিছুদিন পরে জিলাপির দোকান সব খুলে দেয়। করোনায় প্রান গেলে যাক তবে সেটা জিলাপি খেয়ে গেলে কোন আফসোস আর থাকবে না। তাতে অনেক জিলাপি প্রেমির লাভ হলেও রসিকের কোন লাভ হয় না। কারণ ঘরের চৌকাঠ মাড়িয়ে পুরানো ঢাকার জিলাপির দোকানে যাবে সে সাহস হয়না রসিকের। জিলাপি খাওয়ার চেয়েও প্রাণ বড় এমন লোকেরও অভাব নেই ঢাকা শহরে। বউদেরকে ফুসলিয়ে তাদেরকে দিয়ে জিলাপি বানানো শুরু করে দিল তারা। 
তাদের দেখাদেখা রসিকের বই গুলবদনও একদিন জিলাপি বানিয়ে ফেলল। রসিক আবার তা ফেসবুকে আপলোড করে দিল। বউকে তো উৎসাহ দিতে হবে। একেক জনের মন্তব্য দেখে তো রসিক হতভম্ব। কেউ একজন লিখল এটা কি জিলাপি না বাকুড়ার পাকুড়া ? মনে হয় চিংড়ি ভাজা একজন মন্তব্য করল। কারও কারও মতে এটি আদা। একজন লিখল এটি জিলাপি নয় করোনা জিলাপি। শেষের জনের মন্তব্যটাই রসিকের ভালো লাগল। করোনার কালে জিলাপিটা করোনার মতই হবে এটাই স্বাভাবিক। গুলবদনকে কারো মন্তব্যে দমে না গিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে বলল রসিক। ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ তত্তে বিশ্বাস করলে সামনে এগুনো যাবে না।
রসগোল্লা খাওয়ার জন্য এই রোজা রমজানের দিনেও রসিকের জিহ্বায় রস থই থই করতে থাকে। মিষ্টির দোকানীরা তাঁদের দোকান তালা দিয়ে যে কোথায় পালিয়েছে রসিক তত্ত তালাশি করেও এর কোন হদিস খুজে পাচ্ছে না। শেষে অনলাইন ওযালাদের শরনাপন্ন হলো রসিক। না, তারাও রসগোল্লার কোন হদিস দিতে পারল না। রসগোল্লা বাদে আর সবই তাদের কাছে আছে। পেঁয়াজ,আদা.রসুন,কাচকি মাছ,মুরগী,মুগির ডিম এমন কী ডিমওয়ালা মুরগী পর্যন্ত । তারা রসিকের কাছে মাফি মাঙ্গে। তবে প্রতিশ্রুতি দেয় করোনার প্রকোপ কমার সাথে সাথে তাকে রসগোল্লা খাওয়াবে।
রসিক হতাশ। তাহলে কি করোনাকালে তার ভাগ্যে রসগোল্লা নেই? আচ্ছা গ্রামের বাড়িতে চলে গেলে কেমন হয়! গ্রামের বাজারে নিশ্চয়ই রসগোল্লা পাওয়া যাবে। গ্রামের বাজারের ময়রারা নিশ্চয়ই এতোটা নির্দয় নয়। যে মিষ্টি প্রেমিদের কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে নিজের জান বাঁচানোর জন্য দোকানে তালা লাগিয়ে চলে যাবে। অবশ্য তাদের আর যাবার জায়গাটাই বা কোথায়? বিপদে পড়লে শহরের লোক না হয় গ্রামে যায় কিন্তু গ্রামের লোক কোথায় যাবে?
বিপদ দেখা দিল অন্য জায়গায়। রসিকসহ গুলবদন সেল্ফ কোয়ারেন্টাইনে আছে দীর্ঘ দিন ধরে। প্রায় দুই মাসের মধ্য তারা একদিনও চৌকাঠ পর্যন্ত মাড়ায়নি। গুলবদের সাফ কথা রসিক একবার চৌকাঠ মাড়ালে আর তাকে সে ঘরে তুলবে না। অন্তত করোনা না যাওয়া পর্যন্ত।
গুলবদনের কড়া হুশিয়ারি শুনে গুলবদন ফুটো বেলুনের মতো চুপসে যায়।
গ্রামে গিয়ে রসগোল্লা খাওয়ার পরিকল্পনা আপাতত বাদ দেয়। হঠাৎ তার মনে পড়ে যায় হক বেকারির কথা। রাস্তার ওপারোই হক বেকারি। হক বেকারি বেকারি হলেও এতে মিষ্টিমন্ডাও পাওয়া যায় এমন কী হলদি রামের শন পাপড়ি, রসগোল্লা আরো কত কি!।এরা আবার চাল ডালও রাখে। লকডাউনের নিয়ম অনুযায়ী এদেরকে মুদীর দোকানের কাতারেও ফেলা যায়। রসিক ফোন করল। ফোন ধরল ম্যনেজার শ্যাম লাল। শ্যাম লাল রসিকের খুবই পরিচিত। শ্যাম লাল জানালো তাদের দোকান অনেক আগে থেকেই বন্ধ। মালিকের ইচ্ছা ছিল দোকান খোলা রাখার। কিন্তু করোনা উৎপাতের শুরুতেই দোকানের সকল কর্মচারী পালিয়ে দেশের বাড়িতে চলে গেছে। তাদের দোকানে হলদি রামের কয়েক কৌটা রসগোল্লা ছিল। তবে এতোদিনে তা ইঁদুরের পেটে চলে গিয়েছে কিনা তা তিনি জানেন না। আর থাকলেও তার পক্ষে এখন দোকান খুলে রসগোল্লা দেযা সম্ভব নয়। কারণ তিনি এখন আছেন তার নিজ বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।
রসিকের একবার ইচ্ছা হলো হক বেকারির তালা ভেঙে হলদি রামের রসগোল্লার কৌটা গুলি বগল দাবা করে নিয়ে আসে। কিন্তু ঐ ইচ্ছে পর্যন্তই।
কাল রাতে তুমি রসগোল্লা রসগোল্লা করে চিল্লাইয়া উঠছিলে কেনো? রসগোল্লা কি কোন মেয়ের নাম, কোড নেইম? বলো, উত্তর দাও। বোবা সেজে আছো কেনো? গুলবদন রেগে মেগে রসিককে জেরা শুরু করে।
রসিক হতভম্ব। কখন সে রসগোল্লা রসগোল্লা বলে চিৎকার করে উঠছিলো তা সে বুঝতে পারল না। সেটি কি ঘুমের মধ্যে? হতেও পারে। ঘুমের মধ্যে মানুষ কতকিছু করে,কত কিছু বলে! সেগুলি কি ধর্তব্যের মধ্যে আনা যায়,আনা উচিৎ? গুলবদন নিজে কি ঘুমের মধ্যে হাত পা ছুড়া ছুড়ি করে না, বিড়বিড় করে কত কিছু বলে না?
আমি মনে হয় ঘুমের মধ্যেই রসগোল্লা,রসগোল্লা বলে চিৎকার করছিলাম। তুমি তো জানো রসগোল্লা আমার কত প্রিয় মিষ্টি। আর রসগোল্লা কোন মেয়ের নাম হয় না। শুনেছ আজ পর্যন্ত কোন মেয়ের নাম রসগোল্লা রাখতে? রসিক আলী গুলবদনকে বলল।
গুলবদন চেষ্টা করল কিন্তু মনে করতে পারল না কস্মিনকালে কেউ কোন মেয়ের নাম রসগোল্লা রেখেছিল কিনা।
বরং ফলের নামে মেয়েদের নাম হয় যেমন ধর আঙ্গুর, বেদানা ইত্যাদি। কিন্তু কখনো কোন মেযের নাম জিলাপি,চমচম,রসমালাই,বালুসাই হয়,বল? রসিক বলল।
গুলবদন আমতা আমতা করতে থাকে। তার মন থেকে তবু কচকচানি যায় না। রোজিনার কোড নাম যে রসগোল্লা নয় তা কে হলফ করে বলতে পারে?
তবে এটা ঠিক লোকটা রসগোল্লাকে যে কোন কিছুর ছেয়ে বেশি ভালোবাসে। এমন কি হয় তো গুলবদনের চেয়েও। গুলবদন মনে মনে ভাবে। বিষযটা নিয়ে গুলবদন এগুতে চায় না।
করোনার কারণে রসিকের ঘুমের কোন মা-বাপ নেই। অফিস আদালত নেই বলে সকালে উঠার কোন তাগিদ নেই। রসিকের ঘুম কুম্ভকর্ণের ঘুমকেও হার মানায়। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায় তবু প্রায়ই রসিকের ঘুম ভাঙে না।
সেদিন দুপুর বারোটায় গুলবদনের চেঁচামেচিতে রসিকের ঘুম ভাঙে। 
কই শুনছ, এদিকে এসো। গুলবদন রান্না ঘর থেকে রসিককে ডাকছে।
রসিক হুড়মুড় করে ঘুম থেকে উঠে বসে। চোখ কচলিয়ে রান্না ঘরের দিক রওয়ানা দেয়। 
উঠাও। গুলবদন রসিককে আদেশ করে। 
রসিক ভ্য্যাবাচেখা খেয়ে যায়। কী উঠাবে সে বুঝতে পারছে না। রসিক এদিক ওদিক অসহায়ের মতো তাকায়।
আরে উঠাও না। ঢাকনাটা ওটাও। 
ঢাকনা! রসিক দেখল চুলোর উপরে একটা সিলভারের হাড়ি। তারই ঢাকনা উঠাতে বলছে গুলবদন। রসিক মনে ভয় পেয়ে যায়। পাতিলের ভিতরে কোন গোখরা টোকরা নেইতো! ঢাকনা উঠালেই ফোঁস। গুলবদন কোন প্রতিশোধ নেয়ার মতলব আঁটছে নাতো। সেদিনকার প্রতিশোধ,রসগোল্লা,রসগোল্লা বলে চিৎকারের প্রতিশোধ।
নাহ! এতোটা নিষ্টুর হবে না গুলবদন। রসিক আল্লাহর নাম নিয়ে ঢাকনা উঠায়। ইয়া আল্লাহ বলে সে চিৎকার দিয়ে উঠে। পাতিলের ভিতরে ডুবে আছে সাদা সাদা অনেকগুলি রসগোল্লা। ময়রা ঘোষ কাকার দোকানের রসগোল্লা নয়। সে অন্যরকমের এক রসগোল্লা। সে রসগোল্লা খেকে অন্য একরকম দ্যুতি আর খুশবু বের হয়ে আসছে যা রসিককে পাগল করে দেয়। রসিক কী স্বপ্ন দেখছে? না,স্বপ্নে তো কোন গন্ধ পাওযা যায় না। অথচ হাড়ির রসগোল্লা হতে চমৎকার একটা হালকা গন্ধ বের হয়ে আসছে। রসিক এখন কী করবে? রসগোল্লার হাড়িতে থাবা বসাবে, গুলবদনকে জড়িয়ে ধরবে, নাকী সে পাগল হয়ে যাবে?

লেখক : গল্পকার ও যুগ্মসচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here