চীনের ভ্যাকসিন বাংলাদেশে ট্রায়াল হবে

0
1004

ডি কে সৈকত: বাংলাদেশে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের অনুমোদন দিয়েছে চীনের তৈরি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ভ্যাকসিন বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (বিএমআরসি)। ফলে এই ভ্যাকসিনটির তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) এই পরীক্ষা চালাবে। এ সংস্থার পেশ করা প্রটোকলের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ জুলাই রবিবার এই অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাংলাদেশের সাতটি হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর এ টিকার পরীক্ষা চলবে। মোট ২ হাজার ১০০ জনের ওপর এই টিকা প্রয়োগ করা হবে। বিএমআরসির পরিচালক মাহমুদ উজ জাহান বলেন, ‘চীনের সিনোভেক রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড কোম্পানির তৈরি টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার জন্য আইসিডিডিআরবি আমাদের কাছে প্রটোকল জমা দিয়েছিলে। ন্যাশনাল রিসার্চ এথিকস কমিটি নৈতিক অনুমোদন দিয়েছে। কমিটি এর নৈতিক অনুমোদন দিয়েছে। এখন তারা যেসব প্রতিষ্ঠানে এই পরীক্ষা করবে, তাদের প্রশাসনিক অনুমোদন নেবে। এ বিষয়ে আইসিডিডিআর,বি-কে শিগগিরই তাদেরকে চিঠি দেয়া হবে। জানা গেছে, ইতোমধ্যে চীন উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। চলছে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার প্রস্তুতি। বড় আকারে তৃতীয় ধাপের ভ্যাকসিন পরীক্ষা চালাতে ইতোমধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুমোদন পেয়েছে চীনের সরকারি প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল বায়োটেক গ্রুপ (সিএনবিজি)। পাশাপাশি বাংলাদেশেও এর পরীক্ষা চালানোর আগ্রহ দেখায় দেশটি। চীনে নতুন করে করোনায় সংক্রমিত রোগী কমে যাওয়ায় এখন দেশের বাইরে সম্ভাব্য ভ্যাকসিন পরীক্ষার জন্য জায়গা খুঁজছে দেশটি। বর্তমানে করোনা সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বগতিতে থাকায় বাংলাদেশকে এর উপযুক্ত মনে করছে চীন। ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতা নিশ্চিতে চীনের ভ্যাকসিনের ট্রায়ালকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ। সারা বিশ্বে করোনার টিকা বানাতে এখন অন্তত ১৬০টি উদ্যোগ চালু আছে। এর মধ্যে মাত্র দুটি টিকার তৃতীয় ধাপে আছে। সিনোভেকের এ টিকার পাশে তৃতীয় ধাপে আছে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের টিকা। চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে করোনার সংক্রমণ শুরু হয়েছিল গত ডিসেম্বরে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্থানীয় কার্যালয় নতুন ভাইরাসের বিষয়ে ঘোষণা দেয় ৩১ ডিসেম্বর। ধারণা করা হয়, ভাইরাস প্রতিরোধে চীন শুরু থেকে যেসব উদ্যোগ নিয়েছিল, তার মধ্যে টিকা উদ্ভাবনের প্রচেষ্টাও ছিল। সিনোভেক বায়োটেক এ ক্ষেত্রে এগিয়ে। সিনোভেকের টিকার সম্ভাব্য নাম ‘করোনাভেক’। টিকা ও ওষুধ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষায় মানুষের জন্য টিকা কতটা নিরাপদ, তা দেখা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষায় টিকা নির্দিষ্ট জীবাণু প্রতিরোধে কতটা কার্যকর, তা দেখা হয়। তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষায় দেখা হয় টিকা কতটা নিরাপদ, কতটা কার্যকর। টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তবে এসব দেশের সব মানুষকে টিকা দেওয়ার মতো মজুত শিগগির গড়ে তুলতে পারবে না সংস্থাটি। প্রতিটি দেশের ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের অগ্রাধিকারের তালিকা তৈরি হচ্ছে। এই তালিকার শীর্ষে আছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। বাংলাদেশে টিকা ব্যবহারের হার অনেক বেশি। দেশে টিকাদান ব্যবস্থাপনাও অনেক উন্নত। বাংলাদেশের শিশুদের টিকাদান কর্মসূচির অনন্য সাফল্যের জন্য গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ সম্মাননায় ভূষিত করা হয়। জাতিসংঘ সদর দপ্তরে প্রধানমন্ত্রীকে এ সম্মাননা দেয় গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই বা গ্যাভি)। গত ৪ মে এই গ্যাভি অ্যালায়েন্স আয়োজিত ভার্চ্যুয়াল বৈশ্বিক টিকা সম্মেলনে বিশ্বনেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সেখানে মানবজাতিকে রক্ষার জন্য দ্রুত টিকা উদ্ভাবনের তাগিদ দেন। বাংলাদেশের এই সাফল্য ও সুনাম মানুষের জন্য টিকা সংগ্রহে কাজ লাগবে বলে মনে করেন সরকারি কর্মকর্তারা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here