স্বাধীনতার ঈশ্বর

প্রবন্ধ

0
1019

“ধন্য সেই পুরুষ
নদীর সাঁতার পানি থেকে যে উঠে আসে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে
ধন্য সেই পুরুষ
নীল পাহাড়ের চূড়া থেকে যে নেমে আসে
প্রজাপতিময় সবুজ গালিচার মতো উপত্যকায় ফসলের স্বপ্ন দেখতে দেখতে
ধন্য সেই পুরুষ
যাঁর নামের ওপর পতাকার মতো দুলতে থাকে স্বাধীনতা।” 
কবি শামসুর রহমানের কবিতার মতো আজন্মকাল ধরে যতদিন আমার এ পূর্ণভূমি বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকবে ঠিক ততদিন আমার স্বাধীনতার ঈশ্বর জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর নামের উপর আমার বাঙালি জাতির বিজয়ের পতাকা দুলতে থাকবে, দুলতে থাকবে আমাদের চেতনাবোধ আর মনুষ্যত্বের জিয়নকাঠি। শুধু বাঙালি নয় সমগ্র মানবজাতির মুক্তির এক মহাসূত্রের নাম অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতিসত্তা পরিচয়ের চূড়ান্ত রুপকার ১৯২০ সালের ১৭ মার্চে গোলাপগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শেখ পরিবারে জন্ম নেওয়া সেই দেবতুল্য শিশুটি, পরবর্তীতে যিনি আমাদের গোটা বাঙালি জাতির অন্তরে আর চেতনায় স্থান করে নিয়েছিলেন, তিনি আর কেউ নন! তিনি আমাদের স্বাধীনতার ঈশ্বর জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা, প্রতিটি স্তরে যা অর্জিত হয়েছে সে পথ ছিল বন্ধুর। স্বাধীন বাংলাদেশ ও স্বাধীন জাতি পরিচয়ে আমাদের যে সংগ্রাম, সেই সংগ্রামের পথে লেখা হয়েছে শত-সহস্র মানুষের কষ্ট, ব্যথা-বেদনা, অশ্রু ও রক্ত ঝরা এক অবর্ণনীয় ইতিহাস। সেই ইতিহাসের হাত ধরে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীনতা, সে স্বাধীনতা নামক রথের সারথী ছিল জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। 
বাংলার মানুষের ভাগ্য সহ সমগ্র পৃথিবীর শোষিত বঞ্চিত মানুষের ভাগ্যকে শোষনের হাত থেকে মুক্তি দিতে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করতে চেয়েছিলেন, তাইতো তিনি বিশ্ববিবেকের কাছে বজ্রকন্ঠে বলেছিলেন বিশ্ব আজ দুভাগে বিভক্ত শোষক আর শোষিত, আমি শোষিতের দলে। বাংলা মানুষকে স্বাধীন করবার যে অটুট আত্মবিশ্বাস তার মধ্যে বারবার প্রতিফলিত হয়েছে তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল, এতো আত্মপ্রত্যয়ী ভবিষ্যত বানী পৃথিবীর আর কোন নেতার চিন্তা-চেতনা থেকে আসেনি, তাইতো আমৃত্যু বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য নিজের সকল সুখ বিসর্জন দিয়ে দিন-রাত্রি এক করে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, জীবনের বেশিরভাগ সময়ই কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্টে মৃত্যুর প্রহর গুনেছে বাংলা আর বাঙালির মুক্তির দূত। আইয়ুব-মোনায়েম স্বৈরাচারী সরকার একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে তার জীবন অতিষ্ট করে তুলেছে, তবুও তিনি হার মানেনি জালিম পাকিস্তানি নরপশুদের কাছে, এমনও অনেক সময় গেছে মামলায় সাজা হয়েছে, সে সাজা খাটা শেষ তবুও তিনি জেলে বন্দি, এমন আরোও অনেক সময় গেছে জেল থেকে মুক্তি পেয়েও তিনি তার আপনজনের কাছে ফিরতে পারেনি, জেল গেট থেকে পুনরায় তাকে গ্রেফতার করে আবার জেলে বন্দি রেখেছে জালিম পাকিস্তানি সরকার। এতো কিছুর পরও আমাদের জনক পাহাড়ের মতো মাথা উঁচু করে অটল বিশ্বাসে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রয়েছে আমাদের ভাগ্য আকাশে স্বাধীনতা নামক সোনালি সূর্যের আলো বিলাবে বলে, তিনি চেয়েছিলেন আমাদের হাতে একটি পতাকা আর একখন্ড স্বাধীন ভূ-খন্ড তুলে দিতে, যেখানে বাংলার মানুষের অধিকার থাকবে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে, থাকবে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মানুষে মানুষে ভালোবাসার মহামিলন, যেখানে থাকবে না আক্রোশ আর হানাহানি, থাকবে না ধর্মান্ধতার বিষবাষ্প। তিনি হয়তো জীবনদশায় ভেবেছিলেন তিনি সার্থক কিন্তু পিতার না থাকা জুড়ে আজ বাংলার আকাশ ভিন্ন বারতা নিয়ে প্রতিক্ষণে লড়াই করে চলেছে।
জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমগ্র কর্ম ও রাজনৈতিক জীবন গৌরব, সম্মান ও অসামান্য প্রাপ্তির। স্কুল জীবন থেকেই রাজনীতির নেশা তাকে চেপে ধরে, গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে পড়বার সময় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেবার কারণে শুরু হয় তার প্রথম কারাবরণ। ১৯৪০ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম ফেডারেশনে যোগদান করেন। ম্যাট্রিক পাশের পর কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ (বর্তমানে মাওলানা আজাদ কলেজ) পড়ার সময় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক এর মতো স্বনামধন্য রাজনীতিবিদের সান্নিধ্য পান। ১৯৪৬ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ঐ সময় থেকে তার নেতা হবার যাত্রা শুরু হয়। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর তিনি ঢাকায় ফেরেন এবং রাজনীতি নিয়ে শুরু করেন নতুন চিন্তা- ভাবনা, যার ফলশ্রুতিতে ১৯৪৮ সালে তিনি গঠন করেন ছাত্রলীগ, শুরু করেন মায়ের ভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার দাবীতে তুমুল আন্দোলন। এই আন্দোলনের কারণে ১১ মার্চ তিনি গ্রেফতার হন এবং ১৫ মার্চ মুক্তি পান। তখন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সারাদেশে সফর শুরু করে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার দাবীতে, জনমত গড়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্ঠা চালিয়ে যান, গড়ে তোলে প্রতি জেলায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। এই একই সালে ১১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন জালিম সরকার বঙ্গবন্ধুকে ফরিদপুরে গ্রেফতার করেন এবং নির্যাতন চালায়। ১৯৪৯ সালের ২১ জানুযারি মুক্তি পান, মুক্তি পেয়ে আবার জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশব্যাপী সফর করেন, এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থশ্রেণী কর্মচারীদের ন্যায্য দাবির প্রতি সমর্থন জানান এবং সে আন্দোলনে অংশ নেন। ১৯৪৯ সালের ১৯ এপ্রিল আবার গ্রেফতার হন, জেলে থাকা অবস্থায় ১৯৪৯ সালে ২৩ জুন তৎকালীন ক্ষমতাসীন মুসলিমলীগের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল ” আওয়ামী মুসলিমলীগ” গঠন হয় এবং তরুণ নেতা শেখ মুজিব দলটির যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন, ১৯ এপ্রিল গ্রেফতারের তিনমাস পর জুলাই মাসে মুক্তি পান, এইভাবে বারবার গ্রেফতার ও মুক্তির পর ১৯৪৯ সালের ১৪ অক্টোবর আর্মানিটোলা ময়দান জনসভা থেকে ভূখা মিছিল বের করেন, দরিদ্র মানুষের খাদ্যের দাবিতে ভূখা মিছিল করতে গেলে আওয়ামীলীগের সভাপতি মওলানা ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হন, এবং দীর্ঘ প্রায় দুবছর পাঁচ মাস জেলে আটক থাকেন এবং ১৯৫২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি মুক্তি লাভ করেন ফরিদপুর জেল থেকে। ১৯৫৩ সালে তিনি আওয়ামী মুসলিমলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালে ৩০ মে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুক্তফ্রন্ট সদস্য হিসাবে করাচি থেকে ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেই গ্রেফতার হন এবং ২৩ ডিসেম্বর মুক্তি লাভ করেন।
১৯৫৬ সালে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে “আওয়ামী মুসলিমলীগ” থেকে “মুসলিম” শব্দটি বাদ দিয়ে দলের নামকরণ করা হয় “আওয়ামীলীগ”। সেই থেকেই শত চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে পথচলা আজকের এই আওয়ামীলীগ।
১৯৫৮ সালের ১২অক্টোবর তৎকালিন সামরিক সরকার কর্তৃক বঙ্গবন্ধু আবার গ্রেফতার হন এবং চৌদ্দ মাস বন্দি থাকার পর তাকে মুক্তি দিয়েই পুনরায় জেল গেটে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৬০ সালের ৭ ডিসেম্বর রিট আবেদন করে হাইকোট থেকে মুক্তি লাভ করেন। ১৯৬২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী জননিরাপত্তা আইনে আবার গ্রেফতার হন এবং ১৮ জুন মুক্তি পান। ১৯৬৪ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ১৪ দিন আগে তিনি আবারও গ্রেফতার হন।
সাল ১৯৬৬! তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারী! এই দিনে লাহোরে অনুষ্ঠিত সকল বিরোধী দলসমূহের জাতীয় সম্মেলনে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলার মানুষের বাঁচার দাবী হিসাবে প্রস্তাব দেন সেই ঐতিহাসিক ৬ দফা। এ দাবীর অন্তর্নিহিত একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বাংলার জনগণের মুক্তি।
 পাকিস্তানের স্বৈরশাসক জেনারেল আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধুকে ১ নং আসামী করে নেতৃস্থানীয় মোট ৩৫ জন বাঙালি সেনা ও সিএমপি অফিসারের বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করবার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসাবে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করেন, পরবর্তিতে জনগণের অব্যহত প্রবল চাপের মুখে ১৯৬৯ সালে ২২ ফেব্রুয়ারী কেন্দ্রীয় সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে বঙ্গবন্ধু সহ সকল আসামীদের মুক্তিদানে বাধ্য হয়, কেননা সেই সময় পূর্ববাংলার জনগণের সর্বাত্মক আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজপথ এবং বিশাল গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরসামরিক শাসক আইয়ুব খানের পতন ঘটে এবং শেখ মুজিবুর রহমান হয়ে ওঠেন বাংলার জনগণের ভরসা আর মুক্তির দেবতা। এই দেবতাকে সেদিন সমগ্র বাঙালি তাদের হ্নদয়ের ভালোবাসায় ভাসিয়ে “বঙ্গবন্ধু” উপাধিতে ভূষিত করেন এবং অন্তরে ধারণ করেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্বাধীনতার ইতিহাসের মাহেন্দ্রক্ষণে জনগণের অবিসংবাদিত নেতৃত্বের ভূমিকার স্থিত করার লক্ষ্যে এই প্রয়াস।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফার পক্ষে একতরফা সমর্থন জানায় পুরো দেশ এবং বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ বিপুল জয়লাভের মধ্য দিয়ে মেজরিটি পায়, কিন্তু পাকিস্তানি জালিম সামরিক শাসক বঙ্গবন্ধুকে সরকার গঠন করতে দেয় না, এরপর স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনকে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে প্রথমে স্বাধিকার আন্দোলন এবং চূড়ান্ত পর্বে স্বাধীনতা আন্দোলনের রুপ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু নজিরবিহীন অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন এবং বাংলার জনগণ তা মেনে নেন, তার নির্দেশেই এদেশ পরিচালিত হতে থাকে। এবার স্বাধীনতার সূর্য বাংলার আকাশে উঠবে বলে বাংলার জনগণের সন্মূখে ধীর পায়ে এসে দাঁড়ালো ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, এই দিনে রেসকোর্স ময়দানে বাংলার লক্ষ লক্ষ জনতার মহাসমুদ্রে তিনি ১৮ মিনিটের এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন, তার বজ্রকন্ঠে ধ্বনিত হয়- 
“এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, 
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” 
এ ভাষণে সেদিন বাংলার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মানসিকভাবে স্বাধীনতা অর্জন ও গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান ও দিকনির্দেশনা দেন। কিছুদিন পর ২৫ মার্চ  একাত্তরের এই দিনে বাঙালির ভাগ্যকাশে নেমে এসেছিল এক অবর্ণনীয় নিষ্ঠুর ইতিহাসের কালরাত্রি। এই কালরাতে নিরস্ত্র নিরীহ বাঙালির উপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সশস্ত্র আক্রমণ চালায় এবং গণহত্যা শুরু করে, বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্নকে অবরুদ্ধ করবার লক্ষ্যে এ জগন্য অমানবিক হত্যাকান্ড। মার্চ ২৬! প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার মন্দির ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডের বাসভবন থেকে ওয়্যারলেসে মহান স্বাধীনতার ঘোষনা দেন এবং যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। এই ঘোষনার সাথে সাথে জালিম পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ধানমন্ডি ৩২ নং বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করেন এবং কারাগারে বন্দি রাখেন। শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধ।
হানাদার বাহিনীর দমন-পীড়ন, পোড়ামাটি নীতি এবং গণহত্যা উপেক্ষা করে বাঙালি তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে এগিয়ে যায়। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মদান এবং ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে বীর বাঙালি ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতা।
ডিসেম্বর ১৬! অর্জিত হলো সেই কাঙ্খিত স্বাধীনতা। বাংলার আকাশে বাতাসে বিজয়ের উল্লাস। বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটলো স্বাধীন-সার্বভৌম অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশের। 
এবার বাংলাদেশ দ্বিতীয় বিজয়ের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে! যে ঈশ্বরের হাত ধরে এই স্বাধীনতা তাকে সমগ্র বাংলার মানুষ খুঁজছে, যে নামটি পবিত্র ধর্মগ্রন্থের মতো মানুষের অন্তরে গেঁথে গিয়েছিল তাকে কাছে পেতে বাঙালির অন্তর কেঁদেকেটে অস্থির, অবশেষে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানী হায়েনার কবল থেকে মুক্তির মধ্য দিয়ে বাংলার মানুষ কাছে পেল তাদের স্বাধীনতার ঈশ্বরকে। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে তার প্রিয় স্বদেশে ফিরে এসে সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন কাজে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন। এই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালে জাতির অর্থনৈতিক মুক্তির প্রয়াসে জাতীয় কর্মসূচী ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু, এই ঘোষণা যেন বঙ্গবন্ধুর জন্য কাল হলো, এই বাংলা সোনার বাংলায় পরিণত হোক তা ওরা চাইনি, গোপন নীলনকশার আশ্রয় নিলো।  কিছুদিনের মধ্যেই ১৫ আগষ্টের কালরাতে সেই ঐতিহাসিক ধানমন্ডি ৩২ নং নিজ বাসভবনে ক্ষমতালোভী, বিপথগামী বাঙালি কিছু নরপশুর হাতে সপরিবারে ১৮ জন সদস্য শহীদ হন। বাংলার স্বাধীনতার আকাশ থেকে ঝরে গেল মহানায়ক স্বাধীনতার ঈশ্বর জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেদিন চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠেছিল বাংলার আকাশ-বাতাস, কেঁদে উঠেছিল ৩২ নম্বর,  কেঁদে উঠেছিল বাঙালির চেতনা আর পিতার শোষিত, নিরীহ মানুষগুলো, কেঁদে উঠেছিল এদেশের সূর্যসন্তান মুক্তিযোদ্ধারা, কেঁদে উঠেছিল সম্ভ্রম হারানো নারীরা, কেঁদে উঠেছিল শহীদ পরিবার আর বিশ্ববিবেক, শুধু কাঁদেনি ওরা যারা আজও বাংলার পতাকাকে খুবলে খাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর জীবনাবসান হলেও স্বাধীনতার ঈশ্বর বেঁচে রয়েছে আমাদের চেতনা আর উপলব্ধিতে। এই নির্লোভ মানুষটি আজন্মকাল ধরে বাঙালি সহ সমগ্র পৃথিবীর মানুষেরর জন্য কেঁদে গিয়েছেন। স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সাম্য ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অবিস্মরনীয় ভূমিকার জন্য সারা বিশ্বময় সমাদৃত হয়েছিল আমাদের জনক। এসব ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য “জুলিও কুরি” পদকে ভূষিত হন আমাদের জনক বঙ্গবন্ধু। এছাড়া বিবিসির এক জরিপে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হন জাতিরজনক। বঙ্গবন্ধু ছিল তার সৃষ্টিতে অবিচল, অনড়। তাইতো বাংলার আকাশে স্বাধীনতার সোনালি সূর্যটা আলো বিলিয়ে ছিল সহজাত স্বভাবে। সত্য আর ন্যার্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় সেদিন বাঙালির সাথে হাত মিলিয়েছিল স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা। 
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।


সূত্রঃ কারাগারের রোজনামচা, বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী, আমি বিজয় দেখেছি, দৈনিক কালেরকন্ঠ, দৈনিক সমকাল, ১৯৭০ থেকে ১৯৯০, আমাদের সময়, বাংলাদেশ প্রতিদিন।


লেখকঃ ডি কে সৈকত

লেখকঃ কবি, সাহিত্যিক ও নির্বাহী সম্পাদক, বিজয় প্রতিদিন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here