মাহাবুব আলম
অঙ্কুরোদগামী বীজগুলো অঙ্কুরেই বিনষ্ট না করার আহবান
১.গোবরে পদ্ম ফুল ফোটা প্রবাদ টি সচরাচর গরীবের ঘরে মেধাবীর জন্মগ্রহণ করাকে ইঙ্গিত করে। পৃথিবীর অমায়িক এক নিয়ম প্রত্যেক বাবা মা ই চান তারা আমরণ কষ্ট করে গেলেও তার সন্তান যেন সে দুঃখ কষ্ট না করে।সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যত কে কল্পনা করেই সকল কষ্ট ক্লেশ হাসি মুখে মেনে নেন,তাই তো মধ্য যুগের কবি ভারত চন্দ্র রায় গুনকার এক মাঝি চরিত্রের মাধ্যমে সন্তানের সুখ শান্তিতে থাকার অভিপ্রায় কে তুলে ধরেছেন এভাবে ”আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে“। গোবরে পদ্মফুল ফোটার মতই গরীবের ঘরের পদ্ম ড.আতিউর রহমান স্যারের মত লোক জন্ম গ্রহণ করে যারা ধরাকে দারিদ্র্যের বাধন ছিঁড়ে উন্নয়ন তথা দারিদ্রকে জয় করার স্বপ্ন দেখেছেন।
হ্যা, কথা বলছি বর্তমানের পদ্মফুলদের নিয়ে।সমস্বরে বলতে ইচ্ছা করে শত পদ্মফুল ফুটতে দাও।অঙ্কুরে বিনষ্ট করে দিওনা এ শত পদ্মফুল কে।দারিদ্রতা কোন অপরাধ বা জগদ্বল পাথরের মত বাধা নয় বরং অনেকাংশে জীবনে বড় হওয়ায় স্পৃহা সৃষ্টির মূল চালিকাশক্তি।অন্তত কবি কাজি নজরুল সহ বিখ্যাত দরিদ্র মানুষগুলির উত্থান তেমনটিই প্রকাশ করে।প্রতিবছর ঢাবি,মেডিকেল,বুয়েটের ভর্তি পরিক্ষার ফল প্রকাশের পর থেকে ভর্তি কার্যক্রম শুরুর পূর্ব পর্যন্ত জাতীয় দৈনিকে একটি শিরোনাম প্রায় ই চোখে পড়ে।
“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েও মেধাবীদের ভর্তি অনিশ্চিত!, “ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন অধরাই রয়ে যাবে অধরার”, ”দারিদ্র্যের কষাঘাতে স্বপ্নের বুয়েট স্বপ্নই থেকে যাবে স্বপনের” হৃদয় কাড়া এ শিরোনাম গুলি যদি কোন সহৃদয়বান লোকের মনুষ্যত্বের দরজায় কড়া নাড়ে ঠিক তখনি হয়তো কেউ এগিয়ে আসেন আর তার বদান্যতায় স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানের পড়ার সুযোগ চূড়ান্ত ভাবে বাস্তবায়ন হয়। পত্রিকার অধিকাংশ শিরোনাম গুলি শিরোনাম ই থেকে যায়!পড়ার পর যদি একটু করুনার জন্ম নেয় হৃদয়ের মনি কোঠায়। হয়তো কোন পাঠক অভিমান করে বলেই বসেন গরীবের ঘরে এ মেধাবীর কেন আগমন ঘটলো!
হায়রে এ জগতে যার টাকা আছে তার সন্তানের হয়তো কাঙ্খিত মেধা নেই যার টাকা নেই তার ঘরে মেধাবী অঙ্কুরেই বিনষ্ট হওয়ার আতঙ্কে ভোগে!! এ বছর যদিও বুয়েট, মেডিকেল, ঢাবিসহ অন্যান্য ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়নি, হয়তো অল্পদিনের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে আর ফল প্রকাশের পরপরই পত্রিকায় অনেক মেধাবীর অর্থাভাবে ভর্তি হতে না পারার বিষয়টি চোখে পড়বে বৈকি! যেমনটি অন্যান্য বছর ভর্তি পরিক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর নিয়মিত প্রায় সব কটি জাতীয় দৈনিকে তাদের অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে শিরোনাম হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ একটু উল্লেখ করছি;(০৩-১০-১৮)ইত্তেফাক পত্রিকার শিরোনাম। ”ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়ে ও মেধাবীদের ভর্তি অনিশ্চিত“ এ রকম হেডলাইন দেখলে আঁতকে উঠতে হয়।সত্যি ই যদি তারা টাকা জোগাড় করতে না পারেন তবে কি তাদের শৈশবের লালিত স্বপ্ন শতাব্দী ছুঁই ছুঁই শতাব্দীর সেরা যুবতী স্বপ্নের বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অধরাই থেকে যাবে!! চান্স না পাওয়া এক দুঃখ আর চান্স পেয়ে অর্থাভাবে ভর্তি হতে না পারার দুঃখ কখনোই এক নিক্তিতে পরিমেয় নয়।
এ যেন এক চক্র বৃদ্ধি দুঃখ! যে দুঃখের শুরু আছে শেষ নাই। লালমনিরহাটের আদিতমারীর মেধাবী ছাত্র বিষ্ণু মোহন,বগুড়ার ধনুটের রবিউলইসলাম, রাজবাড়ী গোয়ালন্দের স্বপন বেপারির মতো অজানা অনেকেই হয়তো চোখে ঝাপসা স্বপ্ন দেখছে,হয়তো কেউ দরিদ্রঘরে জন্ম নেয়াকেই বড় অপরাধ হিসেবেদেখছেন।যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি বা পড়া শেষ করে বেরিয়ে গিয়েছি সনদ নিয়ে তারা বুঝি একটা ছেলেকে একটা সিট ম্যানেজ করতে কতোটা পরিশ্রম,রাত জাগা ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের যুদ্ধ করতে হয়।
“মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন”, “স্বপ্ন সেটা নয় যা তুমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখ,স্বপ্ন সেটা যা পুরনের প্রত্যাশা তোমাকে ঘুমাতে দেয়না” এ অমর বাণী গুলি ই হয়তো তখন তাদের এতোটা পরিশ্রমর পিছনে ফুয়েল তথা জ্বালানির কাজ করে।নিজের স্বপ্ন, পরিবারের স্বপ্ন, প্রতিষ্ঠানের স্বপ্ন। স্বপ্ন পূরনের প্রত্যাশা যেন মানুষটিকে রোবট বানিয়ে ফেলেছিল। এরপরেও সকলে ঢাবি, বুয়েটে, মেডিকেলে আসন সঙ্কটের কারণে সুযোগ পায়না।না পাওয়া টাও নিতান্ত সাভাবিক।এজন্যই হয়তো ভর্তি পরিক্ষা না বলে ভর্তি যুদ্ধ বলা হয়।যুদ্ধে জয়ী বিজেতা গন যখন অর্থের কাছে হেরে যায় তখন বীরদর্পে চলা এ বিজেতাগন অনাহরে থাকা সিংহ শাবকের ন্যায় চুপসে যায়, হতাশা, দীনতা,পেয়ে বসে।যদিও তার মধ্যে সিংহের পূর্ণ বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।পত্রিকায় আসা(৩০-১০-২০১৮,ইত্তেফাক) ছাত্রের মধ্যে রবিউল ছেলেটি কে দেখলাম ১৮তম মেধা স্থান করা। হয়তো তার স্বপ্ন ল ফ্যাকাল্টিতে ভর্তি হয়ে ভবিষ্যত বিচারপতি হওয়া।
হতে পারে আমরা সম্ভবনাময় একজন ভবিষ্যত বিচারপতি কে হারাচ্ছি যদি না সে ভর্তি হতেপারে।এ দায় কার,?আমার, আপনার, রাষ্ট্রের। কারণ আমি,আপনি মিলেই রাষ্ট্র।রাষ্ট্র মানেই আমরা। সেই সময়ের রবিউলরা পরবর্তীতে আদৌও ভর্তী হতে সক্ষম হয়েছিলেন কিনা অর্থের কাছে হার মানতে হয়েছে তা আর জানা সম্ভব হয়নি। দুবছর আগের ঘটনাবলি শ্রেফ দৃষ্টান্তমূলক বাস্তব ঘটনা হিসেবে উপস্থাপন করা যা প্রতিবছরের কমন ফিচার। সর্বশেষ একটা প্রশ্ন থেকেই যায়, যারা নিতান্তই অসহায় তারা কেন বিনাঅর্থায়নে (ভর্তিসংক্রান্ত যত টাকা লাগে, ১৫০০০-২০০০০) ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবে না?? প্রতিষ্ঠানের উচিত, হয় তাদের সম্পুর্ণ বিনা খরচে ভর্তি নেয়া নচেৎ দরিদ্রদের জন্য ভর্তি ফান্ড গঠন করা যার থেকে অসহায় মেধাবীদের অর্থযোগান দেয়া হবে।
শেষে বলবো দেশের স্বার্থে দশের স্বার্থে এ পদ্মফুল গুলিকে কলিতেই ঝরে যেতে দিবেননা।এরা অঙ্কুরোদগামী বীজ যা সম্ভাবনার জন্ম দিবে পরবর্তী প্রজন্মের ।
২.তর্কের খাতিরে ধরে নেই উপরের উল্লেখিত মেধাবী জীবন যোদ্ধারা কারো সহযোগিতায় কাঙ্ক্ষিত প্রতিষ্ঠানে ভর্তী হতে পেরেছেন। এ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তী মানে আলাদীনের চেরাগ হাতে পেয়ে রাতারাতি তার অর্থনৈতিক অবস্থান চেঞ্জ করে ফেলেছে বিষয়টা যে এমন নয় তা আমরা শিক্ষিত সচেতন মাত্রই বুঝি । অর্থাৎ এখনো সে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রের আবর্তে রয়েছেন যতো দিন না সে একটা মানসম্মত চাকুরির ব্যবস্থা করতে পারছেন। অন্নদামঙ্গল কাব্যের বিখ্যাত পঙতি ” হাভতে যদ্যপি চায় সাগর শুকায়ে যায়” এ কথাটিতে লুকিয়ে রয়েছে সদ্য পাশ করা সেই হাভাতে দরিদ্র ছেলেটির হাহাকারের ইঙ্গিত। যে ছেলে টাকার অভাবে ভার্সিটিতে ভর্তীই হতে পারেনি অপরের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ছাড়া সেই ছেলেটিই কি করে প্রতি সপ্তাহে জব সার্কুলারে মোটা অঙ্কের ফি দিয়ে নিয়মিত চাকুরিতে আবেদন করবে? আবেদন ফার্স্ট ক্লাস জব সার্কুলারে আবেদন ফি ৫০০-১৫০০ টাকা হয়ে থাকে যা যথারীতি ছাত্রদের প্রতি জুলুমের শামিল।। ভর্তির সময় অপরে কাছ থেকে যে সহযোগিতা পেয়েছে চাকুরি জীবনে প্রবেশের সহযোগিতা সরকারে কাছ থেকে পাওয়া প্রতিটি ছাত্রের নাগরিক অধিকার। সরকারি সমস্ত চাকুরির আবেদন ফি সম্পূর্ণ ফ্রী করে অঙ্কুরোরোদগামী বীজগুলো অঙ্কুরোদগমের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা সরকারের দায়িত্ব। নিদেনপক্ষে আবেদন ফি কমিয়ে সর্ব্চ্চ ১৫০ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে সকলের আবেদনের সুযোগের সমতা তৈরি করা চাই যেন হারতে বসা বালকটিই সরকারের এ সহায়তায় সে নিজেকে দেশে সেবায় নিয়োগের সুযোগ পায় । দরিদ্রতা অপরাধ নয় দরিদ্রের দুষ্টচক্রে আবদ্ধকরে রাখাটা অপারাধ।
শিক্ষার্থী: স্নাতকোত্তর
লোক প্রশাসন বিভাগ, ঢাবি।
মোবাইল:০১৯২৪০৫৫৯২০
Gmail:mahabubpublicad.du10@gmail.com