১৯৭৫ থেকে ২০১৯
ডি কে সৈকত
গতকাল কেউ একজন আমায় প্রশ্ন করেছে
যে স্বদেশকে ভালোবাসতে নিজের মায়ের মতো
হঠাৎ বলছো
“এ মৃত্যু উপত্যকা তোমার দেশ নয়”
আমি নিশ্চুপ থেকেছি
খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে
অঝোর ধারায় কেঁেদছি গতকাল
আঁচল বাড়িয়ে দিয়েছিল কেউ একজন
আমি প্রত্যাখ্যান করেছি বিশ্বাসঘাতক বলে।
আমার অস্তিত্বের শেষ আশ্রয়টুকু
গতরাতে আমি চুপিসারে গিয়ে ভাসিয়ে দিয়ে এসেছি
নীল সাগরের জলে
যেখানে অপেক্ষায় ছিল আমার মৃত্যুক‚প!
এ মহাকালকে সাক্ষী রেখে আমি তোমাদের বলে যাই
আমার এ অনড় পাথর দেহখানি
আমার পূর্ব-পুরুষের রেখে যওয়া কুঁড়ে ঘরে যেন
অগ্নিদগ্ধ হয়ে না মরে!
তোমাদের ঈশ্বর মিথ্যে করে যতবার পদদলিত হয়েছে
ততবার তোমরা ফুঁসে উঠেছো
কলঙ্কিত করেছো এ মাটিকে!
আর আমার ঈশ্বর পদদলিত হলে
আমাকে নিঃশব্দে কাঙালের মতো
ভস্মীভূত হয়ে নিজের ভেতর!
আমার আঁকড়ে ধরা শেষে শিকড়ও তোমরা উপড়ে ফেলো
ভিরু কাপুরুষের মতো হাসিমুখে আমাকেই তা মেনে নিতে হয়
আমি তখন বুঝি এখানে আমার কিচ্ছু নেই
ঘর নেই, মাটি নেই, পরগাছা আমি!
অথচ দেশপ্রেমিক আমিই
আজ আমার চোখে ভাসে
পঁচাত্তরে পিতৃহারা হয়ে
কেন রাতে আঁধারে বেছে নিয়েছিল বড়বাবা বিমল-অনন্ত?
চোখের জলে স্নান সেরে
কেন বিদেশ-বিভুঁইয়ে অজানায় পাড়ি জমিয়েছিল
পাশের বাড়ির রঞ্জন কাকা
আজ আমার কেন দেশান্তরি হতে মন চায়
কি এমন ইতিহাস লিখলে তোমরা? যাতে
আমার বিশ্বাস, আমার চেতনা, আমার সত্তার
অপমৃত্যুর ঘণ্টা বেজে উঠলো সারা পৃথিবীময়।
কত দুঃসহ জ্বালায় সব হারানোর বেদনায়
নিজের নিঃস্বাসকে অবরুদ্ধ করে
অন্যের নিঃশ্বাসে বাঁচার বৃথা চেষ্টায়
চোরাকাঁটায় জড়িয়েছি পা।
একবার দেখে এসো শেকড় হারানোর কত বেদনায়
তাদের আকাশ ভারী হয়ে আছে!
যদি মানুষ হও
তোমাদের চোখেও নামবে জল
এখনো তারে ভালোবাসে
রূপসার ঘোলা জল
গ্রাম-বাংলার পায়ে হাঁটা মেঠোপথ
ভালোবাসে মগরাহাট
ভালোবাসে ঘোড়াদীঘির বৈশাখি মেলা
আজও চেনতায় তাদের লাল-সবুজের পতাকা
বুকে তাদের ছাপান্ন হাজার বর্গমাইল।
তবুও ঠাঁই নাই এই বাংলায়
শত্রæ বলে চিহ্নিত তারা।
এ মাটির গন্ধ তারা আজও মেখে আছে গায়
যদি কোনদিন সেই অধিকারে ফুঁসে ওঠে প্রাণ
তবে অনাসৃষ্টি হবে সারা বিশ্বময়!
লিখে রাখবে মহাকাল
তোমাদের ভুলে তোমরাই হলে পর।
পৃথিবীর কোন প্রান্তে সেদিন পাবে নাকো ঠাঁই!
অস্বীকৃতির দেয়াল জুড়ে
বাতাসে এখন মৃত্যুর গন্ধ
নদীতে কান্নার কল্লোল।
অনন্ত-অস্থির সারা পৃথিবীর চোখে
পরিত্যক্ত মন্দিরের ছায়ার মতো
আমার ব্যর্থতার ভাগ্যলিপি
সেদিনও কেঁদেকেটে অস্থির
ফিরবো না জেনে!