এ বসন্তে রাধা হবো

গদ্য কবিতা

0
789

কলকাতার শিলিগুড়ি থেকে

কবি সুলেখা সরকার


উপুড় শুয়ে আছি। সারা অঙ্গে জন্ম জন্মান্তরের পুষ্পগয়না। বুনো গন্ধে ভেসে আসছে যৌগিক আনন্দ। আমার জড়সত্তা জড়িয়ে এক জীবকূলের জন্ম হবে বলে সকল আনন্দ আমাকে জড়িয়ে কাঁদছে। এক সাদা আদি ঋষি চলেছেন বাতাসের স্তর ভেঙ্গে অন্য স্তরে। বর দিয়েছেন- আমার দেহের প্রতিটি সুগন্ধি উৎসব হয়ে, অঙ্গভূষণের প্রত্যেকটি ফুল রঙ হয়ে পৃথিবীর সত্তায় অস্তিত্ব খুঁজে নেবে। আমার নাভি থেকে জন্মাবে ঋতু ও চরিত্র। আমার ক্রোধে জন্মানো সূর্য এক বালকের মতো বাধ্য হবে। কচি দূর্বার মতো জন্ম নেবে জীবন। এক মহামন্ত্রের আদর্শ নিয়ে নদী বয়ে যাবে। নিঃস্ব হবো সম্পূর্ণতায়। আজ নদীর পাশে চতুর্ভুজ জনপদ। মাটি ভাগ করেছে সময়। সেই প্রাচীন আমি আবারও ধারণ করেছি শাশ্বত পরিবর্তন। ব্যস্ত করে তুলেছি মানবিকবোধ। ভারতের পূব দরজা খুলে ডেকে এনেছি আর্যদের। উৎসব দিয়েছি উপহারে। প্রায় আড়াইহাজার বছর আগে পাথর ভাস্কর্যে রেখে এসেছি বসন্ত উৎসবের নমুনা। বেদ আর পুরাণে লিপিবদ্ধ করেছি রঙিন অক্ষর। সেই কবে সাতশো বছর আগে হর্ষবর্ধন তার সংস্কৃত নাটকে আমার দেহের গুলাল দিয়ে চরিত্র রচনা করলো। আমি প্রেম হয়ে নাটকের রঙ-বন্ধনে আমোদ মাখলাম। সংস্কৃত বাক্যে উচ্চারিত হলো আমার ব্যাপ্তি। তারপর বছরের পর ক্ষুধার্ত আত্মার মতো পরিভ্রমনে মন্দির-চিত্রকর্মে বসন্ত এঁকেছি। রোমকে দিয়েছি ‘ল্যুপেরক্যালিয়া’, গ্রীক হয়ে ‘ব্যাকানালিয়া’র রঙ উড়িয়েছি হাওয়ায়। খোদিত আমি কেঁদেছি বসন্ত বিরহে। যে সাদা ঋষি এই জড়দেহে প্রকৃতি স্থাপন করেছিলো যৌবনে বাৎসায়নের ‘কামসূত্র’ খুলে শেখালো আবেদন। ফাগুনের প্রমোদ। আমি তাকে খুঁজি সাদা যে কালো হয়ে কৃষ্ণ হলো। বইয়ের প্রচ্ছদপটে বেণুবাদনরত তাঁর মুখশ্রী দেখি। পাশে ঐ যে নারী কাঁধে মাথা রেখে বিমোহিত আমি সেই মালতি-মাধব। মদনবাণে বশীভূত যার চৈতন্য ফেরেনি এ যুগেও।    হে কৃষ্ণ গজমোতির হার ফিরিয়ে দাও। অভিমন্যুকে মিথ্যে বলবে না বড়ায়ি আর। দেখো, আলো-অন্ধকারের সঙ্গম। পৃথিবীর খাঁজে খাঁজে থেমে থাকা রোদ্দুরের কৃষ্ণাঙ্গপ্রেম। এবারে দর্শনে মূর্ছা যাবো না। আজ এ বসন্তে কমলাপারের হলুদ শাড়ি জুড়ে দোলপূর্ণিমা। আবীর আখ্যান। ঐ যে বাঁশির বিরহ। সাদা ঋষির তপোলব্ধ তেজ। জন্ম আসছে। আমার গর্ভে প্রোথিত হবে ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’-এর ছিন্ন পৃষ্ঠা। গোপীনিরা এসো। সাজাও আমাকে। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here