বাংলাদেশে টরেন্ট সাইট কি বৈধ না অবৈধ

প্রবন্ধ

0
1333

মোহাম্মদ আরিফ হোসেন

মনে করুন আপনি আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজারে কোন ওয়েব অ্যাড্রেস প্রবেশ করালেন। তখন সেই ওয়েবসাইটের সার্ভার থেকে তথ্য এসে আপনার ব্রাউজারে সাইটটি প্রদর্শিত হয়। এভাবেই আপনি যখন কোন ফাইল ডাউনলোড করেন তখন সেটি যে সার্ভারে সংরক্ষিত থাকে সেখান থেকে আপনার কম্পিউটার বা মোবাইলে চলে আসে। এটি ছিল একটি ইউজারের কথা। কিন্তু একসাথে যখন হাজার হাজার ইউজার ঐ ওয়েবসাইটটি বা কোন ফাইল একসাথে অ্যাক্সেস করার চেষ্টা করে তখন সেই ওয়েব সার্ভারকে অনেক শক্তিশালি হওয়ার প্রয়োজন পরে। এবং সাথেই ঐ সার্ভারকে অনেক বেশি গতির ইন্টারনেট সমর্থন করার প্রয়োজন পরে। তাছাড়া সকল ইউজার ঠিক মতো ওয়েবপেজ দেখতে পারবে না, বা সাইট লোড হতে অনেক বেশি সময় লাগবে। তো এই অবস্থায় আপনি যদি চান যে আপনার সাইট একসাথে হাজার হাজার ইউজার দেখতে পায় বা আপনার ফাইল একসাথে হাজার বার ডাউনলোড করা সম্ভব হয় তবে আপনাকে অনেক শক্তিশালী সার্ভার ব্যবহার করতে হবে।সাধারন ডাউনলোড প্রসেসে আপনি যদি কোন ফাইল ডাউনলোড করার জন্য শেয়ার করতে চান তবে সেটাকে আগে ইন্টারনেট সার্ভারে আপলোড করতে হয়। কিন্তু টরেন্ট এর জন্য নির্দিষ্ট কোন সার্ভার থাকে না। মনে করুন আমি যে ফাইলটি শেয়ার করতে চাই সেটি আমার ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে সেভ হয়ে আছে। এখন আমি কোন একটি টরেন্ট ওয়েবসাইটে যাব এবং ফাইলটির একটি টরেন্ট সেখানে তৈরি করে রাখবো। এখন আপনাদের মধ্যে কেউ যদি সেই টরেন্ট ডাউনলোড করে যেকোনো টরেন্ট ক্লাইন্টে অ্যাড করে নেন, তবে টরেন্ট ক্লাইন্ট আমার কাছ থেকে আপনার কাছে ফাইলটি ধীরে ধীরে পৌছাতে শুরু করে দেবে। যেটা আমার ইন্টারনেট স্পীড এবং যে স্পীডে ফাইল আপলোড হচ্ছে এবং যেটি আপনার ইন্টারনেট স্পীড সে অনুসারে আপনার কাছে ফাইলটি পৌঁছে যাবে।যদি আপনি সেই টরেন্টটি ডাউনলোড করতে করতে অন্য কেউ তা ডাউনলোড করতে শুরু করে তবে ঐ ইউজারটি দুই জায়গা থেকে ফাইলটি ডাউনলোড করার সুবিধা পাবে। এক তো আমার কাছে থেকে ডাউনলোড করতে পারবে কেননা আমি প্রথম থেকেই আপলোড করছি এবং দ্বিতীয়ত সে আপনার কাছ থেকেও ডাউনলোড করতে পারবে। ঠিক এমনভাবেই ঐ ইউজার যখন ডাউনলোড করা শুরু করে দেবে তখন সেও ঐ ফাইলের একটি নতুন সোর্স হিসেবে পরিনিত হবে। এবং ফাইলটির সোর্স হয়ে যাবে ৩ টি। এভাবেই যখন আরো কোন নতুন ইউজার প্রবেশ করবে তখন সে ৩ জায়গা থেকে ফাইলটি ডাউনলোড করতে পারবে। তো টরেন্ট এমন এক জাল তৈরি করে ওয়ান টু ওয়ান নেটওয়ার্কের, যার মাধ্যমে একই ফাইল একসাথে অনেক জায়গায় পৌঁছে যায় এবং অনেক সোর্স থেকে একসাথে ডাউনলোড হতে থাকে ও আপলোডও হতে থাকে।এখন আপনি হয়তো ভাবছেন যে আমার কাছে কেবল ফাইল পৌঁছালো মাত্র ২ শতাংশ, তো আমি কোনটা আপলোড করছি আর কোনটা ডাউনলোড করছি? টরেন্ট সবসময় আপনার ফাইল অনেকগুলো টুকরো আকারে ডাউনলোড করে থাকে। টরেন্ট যেখান থেকে যে ফাইলের যে টুকরো টুকু পায় সেটিই ডাউনলোড করতে এবং সাথে আপলোড করতেও শুরু করে। এবং শেষে সব সোর্স থেকে সব টুকরো একত্রিত করে আপনাকে একটি পরিপূর্ণ ফাইল দিয়ে থাকে। টরেন্ট কাজ করে থাকে মূলত দুটি প্রধান টার্মের উপর, সীডার্স এবং লীচার্স।সীডার্স (Seeders) এবং লীচার্স (Leechers) দেখুন টরেন্টে সীডার্স হলো সে সমস্ত ইউজার যারা টরেন্টটি ডাউনলোড করার সাথে সাথে আপলোডও করছে। যখনই আপনি কোন টরেন্ট ডাউনলোড করেন তখন আপনাকে দেখানো হয় যে সেখানে কতগুলো সীডার্স রয়েছে। এবং সীডার্স বেশি থাকলে অর্থাৎ একসাথে ফাইলটি অনেকে আপলোড করে থাকলে সেটি একটি হেলদি টরেন্ট হয়ে থাকে।তারপরে আসে লীচার্স এর কথা। লীচার্সকে পীরস (Peers) ও বলা হয়ে থাকে। লীচার্স বা পীরস ঐ সমস্ত ইউজারদের বলা হয়ে থাকে যারা ঐ মুহূর্তে টরেন্টটি ডাউনলোড করছে। মনে করুন আপনি একটি টরেন্ট ডাউনলোড করতে চাচ্ছেন যার সীডার্স দশ হাজার এবং লীচার্স বারো হাজার। মানে ঐ ফাইলটি দশ হাজার ইউজার আপলোড করছে এবং বারো হাজার ইউজার ডাউনলোড করছে। এই অবস্থায় আপনি যদি ফাইলটি ডাউনলোড করতে শুরু করে দেন তবে আপনি খুব ভালো ডাউনলোড স্পীড পাবেন। কারন একসাথে অনেক আপলোড হওয়ার কারণে আপনি অনেকগুলো সোর্স থেকে ফাইলটি ডাউনলোড করতে পারবেন। আবার মনে করুন একটি টরেন্টের সীডার্স মাত্র ২ জন এবং লীচার্স ২,০০০ জন। এই অবস্থায় আপনি যদি ফাইলটি ডাউনলোড করতে লাগিয়ে দেন তবে খুব কম ডাউনলোড স্পীড পাবেন। কেনোনা ফাইলটি মাত্র দুজন ইউজার আপলোড করছে এবং সেটি ২,০০০ ইউজারের কাছে ছড়িয়ে পড়ছে।এরপর আরেকটি বিষয় থাকে তাকে বলা হয়ে থাকে অ্যাক্টিভ সীডার্স (Active Seeders)। অ্যাক্টিভ সীডার্স সে সমস্ত ইউজাররা হয়ে থাকে যারা ফাইলটি একবারতো ডাউনলোড করে নেয় ক্লাইন্ট এর সাহায্যে কিন্তু ডাউনলোড সম্পূর্ণ হওয়ার পরেও টরেন্ট ক্লাইন্টে ফাইলটি রেখে দেয়। ফলে সে হয়তো ফাইলটি এখনো ডাউনলোড করছে না, কিন্তু সে তার আপলোড স্পীড অনুসারে ফাইলটিকে লাগাতার আপলোড করেই চলেছে। এবং সে বাকি সকল ইউজারদের ডাউনলোড স্পীড বাড়াতে সাহায্য করছে।টরেন্ট ব্যবহারের সুবিধা যদি কোন টরেন্ট ফাইল থেমে যায় তবে তা রেগুলার ফাইলের মত ওপেন করা যায় না, কারণ ঐ মুহুর্তে ফাইলটিতে প্রয়োজনীয় সব ডাটা নাও থাকতে পারে । তবে টরেন্ট ডাউনলোডের সুবিধা হল-১. এটি যেকোন সময় রিজিউম করা যায় অর্থাৎ যে জায়গায় থেমে গিয়েছিল সেখান থেকেই আবার শুরু করা যায় ।২. এই ডাউনলোডটি বিট টরেন্ট ক্লায়েন্ট ব্যবহার করে যেকোন চালু সার্ভার থেকে করা যায় । টরেন্ট ডাউনলোড একই সাথে একাধিক সার্ভার ব্যবহার করতে পারে ।৩. বিট টরেন্ট প্রটোকল একটি সিংগেল ফাইল পাঠানোর জন্য একাধিক কম্পিউটার ব্যবহার করে থাকে । ওই ফাইলের বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন কম্পিউটার হতে ডাউনলোড হতে থাকে ।৪. ফলে একই সার্ভারের উপর চাপ কমে এবং ব্যান্ডউইথও কম ব্যবহৃত হয় । ফলে ট্রান্সফার স্পিডও থাকে ভালো ।হাই স্পীড টরেন্ট ডাউনলোড করতে কি করবেন? যদি আপনার কখনো কোন টরেন্ট ডাউনলোড করার প্রয়োজন পরে তবে প্রথমে খেয়াল রাখতে হবে টরেন্টির সীডার্স কতগুলো তার উপর। সীডার্স যতো বেশি হবে ততো বেশি ভালো হবে। সীডার্স এবং লীচার্স এর অনুপাতও ঠিকঠাক হওয়ার প্রয়োজন পরে। কেননা মনে করুন একটি টরেন্টের সীডার্স ১০ হাজার কিন্তু লীচার্স ১ লক্ষ্য। তবে টরেন্টটি অবশ্যই হেলদি হবে না, এবং আপনি ডাউনলোডে তেমন ভালো স্পীড পাবেন না। তাই সীডার্স এবং লীচার্স এর অনুপাত ঠিকঠাক থাকা প্রয়োজনীয়।বন্ধুরা, টরেন্টকে নিয়ে অনেক কথা বার্তা রয়েছে। অনেকে বলে থাকেন টরেন্ট পাইরেসি করার জন্য ব্যবহার করা হয় এবং এটি অবৈধ। হা টরেন্ট পাইরেসি করার জন্যও ব্যবহার করা হয় কিন্তু টরেন্ট দিয়ে শুধু পাইরেসি করা হয় না। আপনি যেকোনো ফাইলস শেয়ার করার জন্য টরেন্ট ব্যবহার করতে পারেন। এমনকি বড় বড় সফটওয়্যার কোম্পানি তাদের সফটওয়্যার আপডেট প্রদান করতে টরেন্টের সাহায্য নিয়ে থাকেন। তারপরেও যদি আপনার মনে একটি জেকে বসে থাকে যে টরেন্ট বৈধ না অবৈধ তবে আমি আপনাকে এখন সে বিষয়ে বিস্তারিত বলতে চলেছি।বৈধ আবার অবৈধ!!টরেন্ট প্রসেস একটি বৈধ সিস্টেম। টরেন্টের পেছনে যে বিজ্ঞান যে প্রযুক্তি কাজ করে, আপনি টরেন্ট ডাউনলোড করতে যে ক্লাইন্ট ব্যবহার করেন সেটা বিট-টরেন্ট হোক আর ইউ-টরেন্ট হোক এরা প্রত্যেকেই বৈধ। কিন্তু এক বিশাল অংশ ইউজার যে কাজের জন্য টরেন্ট ব্যবহার করেন তা হলো অবৈধ। যেমন পাইরেটেড মুভি, সফটওয়্যার, গান ইত্যাদি ডাউনলোড করাতে টরেন্ট ব্যবহার করা। যেহেতু পাইরেসিং করা অবৈধ তাই এই কাজে ব্যবহার করা টরেন্ট প্রসেসিংও অবৈধ। চলুন সম্পূর্ণ বিষয়টি একটি সাধারন উদাহরণ এর মাধ্যমে পরিষ্কার করা যাক।মনে করুন আমি একটি বই লিখলাম বা কোন গান তৈরি করলাম এবং এই বই বা গানের আসল প্রস্তুতকারক আমি নিজেই বা আমি যদি কারো কাছ থেকে নকলও করি তবে আমি একটি উপযুক্ত স্বাক্ষরের মাধ্যমে নকল করেছি। এই অবস্থায় আমি যদি চাই যে আমার বইটি গোটা পৃথিবীর সাথে ফ্রী শেয়ার করতে বা দ্রুত সবার কাছে পোঁছে দিতে তবে আমি টরেন্ট ব্যবহার করে তা করলাম। এই ক্ষেত্রে যেহেতু আসল প্রস্তুত কারক ফাইলটি শেয়ার করেছে ফলে অবশ্যই এই সম্পূর্ণ টরেন্ট প্রসেসটি লিগ্যাল। কিন্তু বেশিরভাগ ইউজার পাইরেটেড অনলাইন মুভি, মিউজিক, টিভি সিরিয়ালস, সফটওয়্যারস ইত্যাদি ডাউনলোড করতে টরেন্ট ব্যবহার করে থাকে। এবং এগুলো সমস্ত কিন্তু কপিরাইট কনটেন্ট। এবং যে এটি আপলোড করেছিলো যে কপিরাইট লঙ্ঘন করে আপলোড করেছে, এবং সেই ফাইলটি ডাউনলোড করার মাধ্যমে আপনিও পাইরেসিং এর একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এবং যেহেতু পাইরেসিং সম্পূর্ণ অবৈধ তাই আপনার ব্যবহার করা টরেন্টিং প্রসেসও সম্পূর্ণ অবৈধ। আসল বিষয় বস্তুটি হচ্ছে টরেন্ট প্রসেস একদমই অবৈধ নয় কিন্তু এটি আপনার ব্যবহারের উপর নির্ভর করে যে সেই প্রসেসিংটি বৈধ না অবৈধ।পাইরেসিং আইন অনেক শক্ত। মনে করুন আপনার ফোনে একটি গান আছে যেটি পাইরেটেড। আপনি হয়তো সেটি ডাউনলোড করেছেন কোন ওয়েব সাইট থেকে এবং নিশ্চয় হয়তো আপনি ফাইলটি আপলোড করেননি। কিন্তু ঐ গানটির কপিরাইট হোল্ডার যদি আপনার উপর মামলা করতে চায় তবে আপনি তো শেষ। যদিও আপনি ফাইলটি আপলোড করেননি তবুও আপনার কাছে ফাইলটি থাকাতে আপনিও সেই পাইরেসিং এর সমান ভাগীদার। এবং একাজে টরেন্ট ব্যবহার করলে আপনার সম্পূর্ণ টরেন্ট প্রসেসটিও অবৈধ হয়ে যায়।আশা করছি এতক্ষণে টরেন্টের পেছনের সকল কার্যকলাপ আপনি বুঝতে সক্ষম হয়েছেন। এখন আপনি জানলেন যে টরেন্টিং প্রসেস বৈধ না অবৈধ। (তথ্যসূত্র ইন্টারনেট সংগৃহিত) arifpatoarybd@gmail.com

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here