পটের গাঁও

ছোটগল্প

0
960

ওবায়দুল মুন্সী

সেই ব্রিটিশ প্রিয়ডের কথা।সুনামগঞ্জের একটি গ্রামের মাঠে উড়োজাহাজ থেকে একটি পট(টিনের কৌটা) পড়ে যায়,পাশের গাঁয়ের আরেকটি ছেলের সামনে। কিন্তু- যে গ্রামের মাঠে সেটি পড়েছে,তারা ছেলেটিকে নিষেধ করে পটটি না তুলার জন্য। ছেলেটি জবাব দিলো, বারে- আমার সামনে ওটা পড়েছে! যুক্তিসম্মত সেটা আমার! আরেক জোয়ান এসে বললো, শোন মিয়া, যুক্তিটুক্তি এখানে চলেনা! আমাদের গাঁয়ের মাঠে যখন পড়েছে তখন সেটা আমাদেরই। এই নিয়ে তর্কাতর্কি চলতেই,দুই গাঁয়ের লোকজন জড়ো হয়ে সেখানে বিশাল লংকাকান্ড ঘটিয়ে ফেলে।লাঠিসোটা নিয়ে তারা একে অন্যের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এতে অনেকলোক মারাত্মক আহত হয়। দু’গাঁয়ের শান্তি ফিরিয়ে আনতে একপর্যায়ে সালিশ ডাকা হয়। দশ গাঁ থেকে,উভয় গাঁয়ের লোকজন বাঘা-বাঘা মোড়লদের নিমন্ত্রণ করে। গরু-খাশি জবাই করে প্রায় হাজার লোকদের খাওয়ার ব্যবস্থা করে। খাওয়া শেষে, মোড়লদের সামনে মূল ঘটনাদি পেশ করা হয়। সবশুনে,নছিব মোড়ল বললেন- আচ্ছা বুঝেছি, এই সমাচার!সামান্য ব্যাপার নিয়ে আপনারা যে নজির সৃষ্টি করলেন, তা- ইতিহাস থেকে কোনদিনই মুছতে পারবেনা! কী বোকার রাজ্যে আমরা বসবাস করছি। উড়োজাহাজ থেকে কেউ ইচ্ছা করে তার মুল্যবান সম্পদ ফেলে দিতে পারেনা?  যা ফেলবে তা-ময়লা, বর্জ্য ছাড়া কিছুই নয়!যাই হোক,যে জিনিস নিয়ে আপনারা আদিম খেলায় মেতে উঠেছেন সেই জিনিসটি জনসমক্ষে এনে এখোনি খোলা হোক,তাহলে-বিচারের রায় দিয়ে দেবো! আর সেই রায় কি আপনারা মানতে রাজি?উভয় গাঁয়ের লোকজন এক বাক্যে সায় দিলো। মোড়লদের সামনে পটটি খোলতেই উপস্থিত সকলেই হাত দিয়ে মুখ ঢাকলেন। রাজা মোড়ল কী মিয়ারা! হাত দিয়ে মুখ ঢাকলেন যে! পটের ভিতর কি দেখলেন। নিশ্চয় পায়খানা! সকলকে উদ্দেশ্য করে বললেন- এবার আমাদের ‘রায় শুনোন’ আজ থেকে এই দুই গাঁয়ের নাম হচ্ছে,পটের গাঁও! সেই থেকে দুই গাঁয়ের নাম পটের গাঁও-ই, রয়ে গেলো!এই নামে এখনো নাকি লোকেরা লজ্জাবোধ করে। এমনকি এই নাম যে বলে, তাকে মারধরও খেতে হয়! কিন্তু- সেই নামটি ইতিহাস হয়ে থেকে যায়,প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে…।

লেখক : কবি ও গল্পকার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here