নাজনীন তৌহিদ
আমার জামা-কুর্তিগুলা দেইখা ভাবতাছেন যে পাকিস্তান থেইকা কামরান খান আমার জন্য পাকিস্তানি লন পাঠায়েছেন কিমবা বোম্বাই থেইকা সোয়েফ আলি খান কারিমা কালেকশন পাঠাইছেন(হিঃ হিঃ হিঃ)! কারিমা খাতুনের লাখান জিরো ফিগার নাহয় নাই, হইলাম নাহয় আশি কেজি ওজনের একজন তাই বইলা কি মোর শখ আহ্লাদ থাকতে পারে না, কন? খাড়ান !খাড়ান! ভাইজানরা।আমার কতা অহনও শ্যাস হয়নাই এর মদ্দেই উশটা খাইয়া প্যাডে খিল ধরাইয়েন না !আবার বুনডিরা ভ্রু কোঁচকাইয়া ঠোঁট উল্ডাইয়া কইয়েন না যে আমি এত্তগুলা জামার ফুটু তুইলা ফুটানি করতেছি!
তয় যাক, বলতেয়াছি এই ক্রান্তিকালে আমাগো কত কিনা করতে হইতাছে! ফেসবোক খোল্লেই দেহি আমনেগো চুলকাডার ছবি পোস্টো করা। ক্যামনে আলুর খোসা, পেইজের খোসা, পডলের খোসা হেলান লাগে হেয়াও পোজ দিয়া দেহান আর রুডির মদ্দে গোস্ত ভইরগা সেন্ডুজ ,ফিজা বানাইয়া খাইতে আছেন হেইয়াও দেহি। আবার ধরেন আডু ভাঙ্গা দিয়া বইয়া ক্যামনে ঘর মোছেন আরও কত্তকি হরেন..। এইসব দেইখা মনে মনে কই, ওরে মোর খোদা ! মুই তো আগেও যে আম্বিয়ার মা আছেলাম এহনও হেই আম্বিয়ার মা-ই রইয়া গেলাম!আম্বিয়ার মায়ের গপ্প জানেন তো ?থাউগগা মোর ধারে হোনেন, আম্বিয়ার মায় একদিন এক হুজুররে জিগাইলো যে ,মোর সয়ামী বেহেস্তে গেলে হুরপরি পাইবে তয় মুই বেহস্তে গেলে কারে পামু? হুজুর কইলেন, তুমি তোমার স্বামীরেই পাইবা । এই কথা হুইনগা আম্বিয়ার মায় কয় , কি কন হুজুর! এই কালেও আম্বিয়ার বাপ আর ওই কালেও আম্বিয়ার বাপ !
তো তেমনি ভাবে আমি আম্বিয়ার মা আগেও যা আছিলাম অহনও তাই ! বিয়ার পর থেইক্কা আমার ঘরের আম্বিয়ার বাপে পক দিয়া কইত তোমার হাতের রান্দা খুবই ভালা ,তুমি দ্যাকতেও সুন্দার তোমার হাতের কামকাইজও সুন্দার।ব্যাস! জামাইর মুখের কতা হুইন্না আনন্দে গদো গদো হইছি! কিন্তু হেই বেডা যে কি সেয়ানা হেইয়া আগে বুজি নাই জাউগগা এহন আসল কতায় আশি।ঘরের রান্দাবাড়া করতে করতে মনে হইল খুবই কামেল হইয়া গেছি! তাই টেলিভিশনে যাইয়া রান্দা শিখাই, রান্দার বই বাইর করি, শ্যাসে বাসায়ও রান্দার ইস্কুল খুইল্লা শেখানো শুরু করলাম কিন্তু ওরে মোর ধম্মো একি মোর কম্মো ! কয়দিন না যাইতেই হাতে ব্যতা, কোমরে ব্যতা,গতরে ব্যতা ,ঠ্যাংগে ব্যতা, ব্যাস কাম সারছে!।বোজলাম এই তেলেচমাতি কারবার আমার লাইগগা না।তয় ঘরের কাজের অপসারে এই এটটু আটটু গপ্প টপ্প লেখি ।ওমা জামাই কয় পিঠা করো ,মিঠা করো এই করো সেই করো …। এইসব কইরা কইরা আমার লেখা লেখির জীবন যেন তামাতামা !হয়ত একটা উপন্যাসের ক্লাইমেক্স নিয়া নিজের মাতার চুল ছিঁড়তেয়াছি ওমনি উনি কাঁচি একখান লইয়া হাজির ! না না, আমার জন্য না ! তার জন্য ।কি আর করমু !কলম আর কাগজের লগে দিয়া আড়ি ছাটি তার চুল,মোচ ,দাড়ি!
জীবনে হইতে চেয়েছিলাম ডাক্তার তা বাদ দিয়ে হইলাম যাও রাইটার কিন্তু এই করোনায় হইলাম এখন বারবার, সুইপার,ক্লিনার শেষ পর্যন্ত টেইলার !
এই কয়মাস ঘরে বুয়াগিরি করতে করতে অবস্থা খারাপ ! এহে তো টাকশালের কড়কড়া টাকার নোটের লাখান কড়কড়া রোইদ তার উপার আম কাঁডাল পাহা ত্যাতানো গরমের টপাটপ ঘামে জুব জুবা হইয়া আমার ঘরে পরা গতরের জামা যেন নেতানো গামছা ।তার উপার রসুই ঘরের হলদি মরিচ আর ত্যাল ছিটা লাইগা লাইগা এমন ত্যাল চিটচিটা পিরিন্ট ! আর থালাবাসুন মাজা ধোয়ার পানি ছিটা পইড়া পইড়া বেতাল অবস্তা !হেইয়ার মাঝে আবার হাত মোছার কামডাও সারতে হয় বইলা জামার দুই কোমরের ধারে আর প্যাটের ধারে তিলা পড়তে পড়তে এত্ত সুন্দার বিউটি স্পট হইছে যে তা আর কি কই! সেই কালা মাইয়ার মুখে, থুক্কু কালা জামায় পাউডার , স্নো -কিরিম আর ব্লিচিং দিয়া ঘষাঘষির চোডে তার গায়ের চামড়া এমনেই একপাল্লা শ্যাস । এদিক আবার ঘামে ভেজা মজা গন্ধে পিঁপড়াদের সানন্দে বসানো আদরে জামার গালে ও বুকে বসন্তের দাগ দগ দগ করতেছেলো ঠিক সেই মুহূর্তে অন লাইনে দেখি বাহারি জামা বেচার ঢেউ ।
বর আমার করোনাকে উপলক্ষ কইরা এমন কুঁইড়ার কুঁইড়া আর হাড়কিপ্টা হইছে যে কিছু চাইলেই বলে হাতে টাকা নাই । আবার কিনা হাই কোর্ট দেখাইয়া বলে বাইরে যাওয়া সরকারি নিষেধ !শেষ মেস কানের কাছে ঘ্যানর ঘ্যানর করতে করতে ১৫০০ টাকা যোগাড় কইরা হোম ডেলিভারিতে জামার কাপড় পাইলাম । মাত্র ৫০০ টাকায় থ্রিপিছ! ১৫০০ টাকায় তিনখানা! দামেই বোঝা গেছে কত্ত সুন্দার জামা হইবে ! একেতো এখন টেইলার নাই তার উপর এত্ত দামি বাহারি জামার পিছনে টেইলারের খরচা যোগানো বিড়ম্বনা তাই চোকির নিচে ধুলার আস্তরণে পইড়া থাকা সেই নব্বই সালে বাচ্চাদের বাবার কাছে বায়না কইরা কইরা কেনা সেলাই মেশিনখানা আইজ কামে আসলো । তিনখানা আনস্টিচ থ্রিপিছ থেইকা ছয়খানা জামা হইলো! যদিও সেলাই করার পর জামার গলা গেছে ভারতের দিক আর হাতা গেছে চায়নার দিক । পাকা খেলোয়াড় আমি, না মানে টেইলার আমি খারাপ না! কিন্তু অলরেডি জামা বালতির পানিতে চুবাইতেই দেখি মাশাআল্লাহ বালতির পানি এক্কারে কাঁচা রং গোলানো টকটইক্কা রাঙাপানি ! সব্বনাশের মাতায় বাড়ি! তয় কি আর করার? এখন একখানা জামা গড়ে দুইমাস কইরা পরলে ছয়খানা জামায় যাইবে বারো মাস, মানে এক বছর! ১৫০০টাকার জামা এক বছর গেলে তাও কম কিসে?মনে মনে কইলাম, অন লাইনের চটকদারি, বিজ্ঞাপনের বাটপাড়ি, তয় কম কিসে মোর কারবারি?
৮৬ সালে ক্লাস নাইনে স্কুলে সাইন্স নিছিলাম কিন্তু স্কুলও বাটপাড়িতে কম ছেলে না !সাইন্সের মাস্টরের অভাবে স্কুল সাইন্সের মইদ্দে কমার্সের সাবজেক্ট হান্দাইলো । সাবজেক্টার নাম মনে কয় ‘বুক কিপিং’ ছেলে,তয় আমার দুক্কের অন্ত ছেলে না তবু খাতায় ঘষাঘোষি করতে করতে ডেভিট ক্রেডিট মিলাইতাম তয় এই তিন যুগ পর আইসকা মনে হইল হিসাবটা মন্দ শিখি নাই, কি কন আমনেরা ?
লেখক : উপ সম্পাদক, বিজয় প্রতিদিন