মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর সেনানী নোয়াখালীর আলোকিত সন্তান শহীদ বীর শ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিন (নং-৬২০৬৬ ইঞ্জিন রুম আর্টিরিশার ক্লাশ-১) ১৯৩৪ সালে নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ীর অন্তর্গত বাগপাঁচরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মোহাম্মদ আযহার মিঞা এবং মাতা মোসাম্মৎ জুলেখা খাতুন। তিনি ১৯৪৯ সালে সোনাইমুড়ি হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন।
বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিন ১৯৫১ সালে তৎকালীন পাকিস্তান নৌ-বাহিনীতে একজন নাবিক হিসেবে যোগদান করেন এবং কৃতিত্বের সাথে তাঁর দায়িত্ব পালন করেন। পাকিস্তান নৌ-বাহিনীর জাহাজ পি.এন. এস বাবর, পি.এন. এস খাইবার এবং পি.এন.এস তুঘকিল-এ দক্ষতা ও কৃতিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করায় সরকারিভাবে শুভেচ্ছা সফরে বৃটেন, ফ্রান্স, জার্মানী, অষ্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ সফর করার সুযোগ লাভ করেন।
১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় তিনি চট্টগ্রাম নৌ-ঘাঁটির অধীন পি, এন, এস কুমিলা গান বোর্টেই, আর-এ ১ হিসেবে ইঞ্জিনিয়ার অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন।
২৫ মার্চের বর্বরোচিত হামলার পর তিনি কর্মস্থল ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম. এ. জি ওসমানির নির্দেশে ভারত থেকে প্রাপ্ত নৌ জাহাজ বি. এন. এস পলাশে যোগদেন। পরবর্তীতে বি. এন. এস পদ্মা নৌ জাহাজের স্কোয়ড্রেন ইঞ্জিনিয়ার এর দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। এ জাহাজেই দায়িত্বকালীন সময়ে ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর বিমান হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হয়ে শাহাদাৎবরণ করেন।
তাঁর অসম সাহসিকতা, দক্ষতা, সর্বোপরি স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ইতিহাসে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত হন। কারণ তাঁর অবদানে আজ বৃহত্তর নোয়াখালী জেলাবাসীও গৌরবান্বিত। এ মহৎ ব্যক্তির অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ তাঁর স্মৃতিকে স্মরণ রাখার জন্য ১৬/১২/৭৮ তারিখে ৫০ পয়সা মূল্যের (বীরশ্রেষ্ঠ ৭ খানা স্মারক ডাকটিকিটের একটি) স্মারক ডাকটিকিট এবং জীবনীগ্রন্থ এবং চট্রগ্রামে শহীদ বীরশেষ্ট রুহুল আমিন ষ্টেডিয়াম নামকরণ), চৌমুহনী চৌরাস্তা নামক স্থানে তোরণ এবং বাগপাঁচরা গ্রামে মিউজিয়ামসহ বাংলাদেশ সরকার তাঁর জীবন স্মৃতি স্বরণীয় করে রাখতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
তথ্যসুত্র : আলোকিত নোয়াখালী, লেখক এ এস এম ইউনুছ, প্রকাশকাল ২০০৫