সার্জেন্ট জহুরুল হক

জীবনী

0
1301

সার্জেন্ট জহুরুল হক বাংলাদেশের অতি সুপরিচিত নাম। তাঁর জন্ম ১৯৩৫ সালে নোয়াখালী জেলার সদর উপজেলার সোনাপুর গ্রামে। তাঁর পিতা মরহুম মজিবল হক।
তিনি ১৯৫৩ সালে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ছাত্রাবস্থাতেই তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগদান করেছিলেন। যে বীর বাঙ্গালীদের মহান আত্মত্যাগের ফলে ঊনসত্তরের গণআন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে এবং যা শেষ পর্যন্ত মহান মুক্তিযুদ্ধের রূপ নেয় তাদের মধ্যে সার্জেন্ট জহুরুল হক অন্যতম।
সার্জেন্ট জহুরুল হক বাঙ্গালীর স্বাধীনতার প্রতীক, বীরত্বের প্রতীক, মহান ত্যাগের প্রতীক।
পাকিস্তানী শাসকচক্র এ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার চিরতরে নস্যাৎ করার জন্য বাঙ্গালীর নিজস্ব সত্তাকে ধ্বংস করার জন্য কতিপয় নেতৃস্থানীয় বাঙ্গালীর বিরুদ্ধে এনেছিল একটি ষড়যন্ত্র মামলা। ইতিহাসে তা কুখ্যাত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে ৬ দফা এবং ১১ দফা আদায়ের মাধ্যমে বাংলার বুকে শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত প্রতিটি বাঙ্গালী যখন ঐক্যবদ্ধ হচ্ছিল এবং প্রস্তুতি নিচ্ছিল ঠিক তখনই জাতীয় নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে আনা হয় এ মামলা। এ মামলা ছিল তখন বাঙ্গালী জাতি সত্তার প্রতি এক বিরাট চ্যালেঞ্জ স্বরূপ। এই ষড়যন্ত্র মামলা যদি পাকিস্তানীদের অনুক‚লে যেত তাহলে আজ বাঙ্গালী জাতির জীবন প্রবাহ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হতো। বিশ্বের মানচিত্রে হয়তো বাংলাদেশ নামের কোন দেশের অস্তিত্ব থাকতো না।
কিন্তু বাংলার মানুষ সেটি হতে দেয়নি। পাকিস্তানী কারাগারে আটক থেকেও সার্জেন্ট জহুরুল হক মাথা নত করেননি, বরং পাক বাহিনীর রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে বুক পেতে বুলেট বরণ করেছেন। ১৯৬৯ সালের ১৫ই ফেব্র“য়ারী ঢাকা সেনানিবাসের পাকিস্তানী সৈন্যের গুলিতে শহীদ হওয়ার গৌরব অর্জন করেন সার্জেন্ট জহুরুল হক।
তিনি ছিলেন একজন কৃতী ক্রীড়াবিদ ও চিত্র শিল্পী। তাঁর অঙ্কিত অনেক শিল্প কর্ম ঢাকাতে অবস্থিত সাহাবাগ জাতীয় যাদুঘরে মর্যাদার সহিত সংরক্ষিত আছে। দেশ স্বাধীন হবার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ইকবাল হল ছাত্রাবাসের নাম “সার্জেন্ট জহুরুল হক হল” রাখা হয়েছে।

তথ্যসুত্র : আলোকিত নোয়াখালী, লেখক এ এস এম ইউনুছ, প্রকাশকাল ২০০৫

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here