কবি মোঃ আবুল বাশার হাওলাদার
রক্তিম সূর্যোদয় আগের মতোই ছিল,
আকাশ নীল ছিল,
মৃদু বাতাস বইছিল,
খণ্ড খণ্ড সাদা মেঘ আকাশে ভাসছিল,
পাখিরা নিজ ঠিকানা ছেড়ে আগের মতোই উড়ছিল,
প্রখর রোদে তপ্ত পৃথিবী আগের মতোই ছিল,
কৃষ্ণচূড়ার পত্রপল্লবে আগুনলাল ফুলের সমারোহ ছিল,
গাছের সবুজ পাতাগুলো সূর্যরশ্মির স্পর্শে ঝলমল করছিল,
সবকিছু এমনভাবে বিন্যস্ত ছিল যেন প্রকৃতি আগের মতোই ছিল।
পঞ্জিকার সন গণনায় দিনটি পহেলা বৈশাখ ছিল,
তবে ছিল না বৈশাখের প্রকৃত রূপ,
শহরে-গ্রামে-গঞ্জে মানুষের ঢল দেখা যায়নি
ঢোল বাজেনি, কেউ গান গায়নি,কেউ নৃত্য করেনি,
কোথাও মেলা বসেনি, কোথাও হালখাতা মহরত হয়নি,
রমনা বটমূল-চারুকলা ইনস্টিটিউট ছিল জনশূন্য,
বৈশাখী পোশাকে সজ্জিত কোনো নর-নারীর পদচারণা ছিল না কোথাও।
কোলাহলমুক্ত পার্ক, দর্শনীয় স্থান, রাজপথ শুধু শূন্যতায় ঘেরা বিষাদময় অন্য এক বাংলার ছবি,
প্রাণের উত্তাপ কোথাও ছিল না,
মানুষ সব ঘরবন্দি,
দরজা বন্ধ করে লোকালয় থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে সবাই,
শুধু প্রাণে বেঁচে থাকার কৌশল অবলম্বন।
আকাশ ভারী ভারী মনে হচ্ছিল,
মানব জাতির মহাসংকটময় অবস্থা বিরাজ করছিল,
অসংখ্য মানুষ কোথাও কোথাও খাদ্যান্বেষণে জড়ো হয়েছিল ত্রাণের আশায়;
তারা ভুলে গিয়েছিল সেদিন পহেলা বৈশাখ।
তারপরও মানুষ ঘরে বসে নববর্ষ উদযাপন করেছে,
মোবাইল ফোনে মেসেজ দিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় ,
আর অনলাইনে গত বছরের অনুষ্ঠান জোড়াতালি দিয়ে উপস্থাপন;
ভোজনে কোনো রসিকতা ছিল না,
অতিথি আপ্যায়ন প্রয়োজন ছিল না,
কারণ, যে যার মতো নিজের ঘরে অবস্থান করছিল,
অদ্ভূত এক অভিজ্ঞতা,
মানুষ দেখেনি কখনো এমন পরিস্থিতি;
সবকিছু ওলোট-পালোট করে দিয়েছে এক অদৃশ্য শক্তি।
বৈশাখ অতীতে হাজার বার এসেছিল,
মানুষ মেতেছিল আনন্দের বন্যায়,
ভবিষ্যতেও হাজার হাজার বার আসবে,
হয়তো বা আবার মানুষ হাসবে, মানুষ আনন্দে ভাসবে;
কিন্তু এ বৈশাখে কী দেখলাম !
এ কেমন পহেলা বৈশাখ!
এ কেমন নববর্ষ!
এ এক অচেনা বৈশাখ।
মোঃ আবুল বাশার হাওলাদার
সভাপতি
বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়ন
এক অচেনা বৈশাখ
কবিতা