সাইফুল ইসলাম তানভীর
আমাদের পরিবারে রয়েছে অনেক ট্রাজিডি। যা অনেকটা বড় কষ্টের। বাবা ঢাকা চট্টগ্রামে থাকলেও বিভিন্ন সময় আমাদের গ্রামে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ থাকতে হয়েছে। ১৯৯৬ সালে ঢাকার উত্তরার বাসায় বসে আমার মা এবং আমরা দুই ভাই প্লান করি গ্রামে গিয়ে একটা নতুন বাড়ী করব। প্লান অনুযায়ী সেটা করতে পেরেছি। কিন্তু তাতে আমাদের ভিলেজ পলিটিক্সের সাথে সাংঘাতিক লড়াই করতে হয়েছে। আমার ক্যারিয়ারে চরম ক্ষতি হয়েছে। গ্রামে আমরা ওয়ারিশ সূত্রে নানাবাড়ির একটা প্রজেক্টে উঠেছিলাম। কিন্তু মামারা শান্তি হারাম করে দিয়েছিল। বহু কষ্টে বৈধভাবে জমি তাদের থেকে রেজিস্ট্রি করি। নানা বাড়ী সেখান থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে। দাদার বাড়ি প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে। ১৯৯৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমরা সেই নতুন বাড়িতে উঠেছিলাম। আমাদের দুই ভাইয়ের খুব কম বয়স হলেও তখন পুরো দায়িত্বের ভার বহন করতে হয়েছে। অনেক শত্রুর মোকাবেলা করতে হয়েছে। অনেকেই মেনে নিতে পারেনি আমাদের মত ছোট মানুষ ওই বাড়ির মধ্য বাতি জ্বালাই। ওই বাড়ি নিয়ে ৪০ বছর মামলা ছিল। বিবাদী পার্টি ওখানে কেউ বসত করে থাকুক তা তারা চায়নি। ১৯৯৪ সালে বাবা সিলেট ছিলেন। তখনও গ্রামে আমরা দাদা বাড়িতে ছিলাম। আমার মা সাদা জিনিস পত্র পছন্দ করতেন। মা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করতেন। সাদা জিনিসের প্রতি মায়ের বিশেষ আকর্ষণ ছিল। মা শখ করে একবার সাদা বোরকা বানালেন। সেই সাদা বোরকাটা মা অনেক বছর ব্যবহার করেছেন। ১৯৯৪ সালে দাদা বাড়ি থাকাকালীন মা মাঝে মাঝে নানীর সাথে দেখা করতে যেতেন। মোবাইল টেলিফোনতো ছিলনা। অপেক্ষায় থাকতাম মা কখন আসবেন। বাড়ী থেকে বের হয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকতাম। মা কখন আসবেন। অনেক অপেক্ষার পর দূর থেকে সাদা বোরকার ছায়া দেখতাম। তখনই কলিজাটা বড় হয়ে যেত। মা আমার জন্য খাবারের বিভিন্ন কিছু সাথে নিয়ে আসতেন। ১৯৯৭ পরবর্তী সময়েও এমন একাধিকবার ঘটেছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় থাকতাম কখন সাদা বোরকার দেখা পাব। মা নানার কনিষ্ঠ কন্যা ছিলেন। বড় খালারা মাকে যথেষ্ট ভালোবাসতেন। আমি সবার ছোট থাকায় আমিও নানীর খালাদের যথেষ্ট ভালোবাসা পেয়েছি। মামারা কেউ মায়ের বড় ছিলেন। কেউ ছোট। ১০ ভাই বোন উনারা। মায়ের সাদা বোরকার কথা যতদিন বেঁচে আছি ভুলতে পারবনা। মায়ের মনটাও ছিল সাদা। আত্মীয় স্বজনকে ভালোভাবে খাওয়াতেন। দাদা দাদী মায়ের রান্না পছন্দ করতেন। মা তার জীবনে বহু কষ্ট করেছেন। মা খালারা নানার অনেক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। অন্যান্য যথাযথ হকও বঞ্চিত হয়েছেন। ওদিকে বাবাও মাকে চরম ঠকিয়েছেন। সীমাহীন কষ্ট নিয়ে মা পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর মা ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর পূর্বে একাধিকবার ব্রেইন স্ট্রোক করেন। ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে মাকে দাদা দাদির কবরের পাশে কবর দেয়া হয়। বাবা নিজেই জানাজার ইমামতি করেন। সেই সাদা ড্রেস পরা অবস্থায়ই মাকে পৃথিবীর জীবন থেকে বিদায় জানিয়েছি।