সাইফুল ইসলাম তানভীর
চট্টগ্রাম শহরকে অনেকে ফুলের শহরও বলেন। কেউ কেউ বলতে পারেন চট্টগ্রামতো বাণিজ্যিক শহর। সামুদ্রিক শহর। দেশের দ্বিতীয় রাজধানীও বলা যায়, কিন্তু সেটা ফুলের শহর হল কিভাবে ? ! হ্যা। চট্টগ্রামটা ফুলেরও একটা শহর ছিল ! ছিল বলার কারন এখন সেই ফুলের ঘ্রাণ মাখা শহর আছে কিনা তা জানি না ! যারা অতীতে চট্টগ্রাম শহর ভ্রমণ করেছেন। ফুলকে ভালোবাসেন। তারা বিষয়টি ভালো জানেন। আমার কাছে চট্টগ্রাম শহরটা যেন স্বপ্নের ফুলেল একটা শহর ! কেউ কেউ বলতে পারেন লোহা লক্করের চিটাগং শহরটাকে সে আবার স্বপ্নের ফুলেল শহর বানালো কীভাবে ? ! জি। এরকটিই হয়। ফেলে আসা শৈশবের জায়গার মূল্য অনেকের ন্যায় আমার কাছেও অনেক। আবেগ অনুভূতির ব্যাপার। তাছাড়া চট্টগ্রাম শহরটা বাস্তবেই ফুলের শহর ছিল। শহরের চারদিকে ফুলের ঘ্রাণ ভেসে বেড়াত। সেটা নিখুঁত অর্গানিক ছিল। এখনকার যশোরের গদখালীর ফুলের বাগানের ন্যায় ছিল না। এখন চট্টগ্রামের কি হাল হয়েছে তা জানি না। নব্বই দশকের প্রথম কয়েকটি বছর আমার শৈশব সেখানে কেটেছে। পুরো সময়টা আমার মা আমাদের সাথে সেখানে ছিলেন না। বাসায় সৎ মা ছিলেন। বাসায় অনেক অশান্তি পোহালেও। চট্টগামের অনেক মানুষের নিখুঁত ভালোবাসা পেয়েছি। পাশাপাশি শহরের ফুল পাহাড় আমাকে বেশ আনন্দ দিয়েছে। মনে অসহ্য যন্ত্রনার মাঝেও মন শান্ত রাখতাম। অবশ্যই বড় ভাই সে সময় অশান্ত ছিলেন। এ জীবনে ফুলের কাছে কম যাচ্ছিনা। তার পরও চট্টগ্রামের সেই ফুল গুলোর ঘ্রাণটা যেন এখনও পেয়েই যাচ্ছি। চট্টগ্রাম শহরের কয়েকটা জায়গায় আমাদের বাসা ছিল। কয়েকটা স্কুলে পড়েছি। চারটি স্কুলেই পড়তে হয়েছে। একটা স্কুলে স্বল্পকালীন সময়ের জন্য পড়েছি। স্কুলটার নাম মনে করতে পারছিনা। অবশ্যই বাকি তিনটি স্কুলের নাম মনে আছে। ওই স্কুলটার তিন তলায় জানালার পাশে ক্লাসে বসতাম। স্কুলের পাশেই একটা বড় বাড়ী ছিল। দেয়ালে ঘেরাও করা। ওই বাড়িটায় ফুলের বাগানও ছিল। বৃষ্টির সময় ছিল। ওই বাগানের সাদা কয়েকটা গোলাপকে বৃষ্টিতে দুলতে দেখেছি। বৃষ্টিতে ম্যাডামের টিচিং এ মনোযোগ না দিয়ে সাদা গোলাপ গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতাম কি যে অপরূপ দৃশ্য। সেটা কোন ভাষায় যে বুঝাবো সেটা বুঝতে পারছি না ! অথচ ঢাকা শহরে এত ফুল দেখছি। তারপরও সেই বৃষ্টিতে ভেজা গোলাপের কথা ভুলতে পারছি না। শাহবাগে এত ফুল দেখি। কিন্তু আকর্ষন আসেনা ! শৈশবে ফুল গাছ লাগাতাম। ফুলে গাছের যত্নও করতাম। এখনও সময়ে সময়ে করি। সেই ১৯৯৪ সালের প্রথম দিকে চট্টগ্রাম শহর থেকে এসেছি। দীর্ঘ সময়ের মাঝে মাত্র একবার প্রায় ২৩ বছর পর ২০১৬ সালের আগস্টে চট্টগ্রাম শহরে গিয়েছি। তাও সরাসরি যাই নি। ঢাকা থেকে বিমানে স্ত্রীসহ কক্সবাজার গেলাম। সেখান থেকে সড়ক পথে চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশ করেছিলাম। স্মৃতির স্থান সমূহ পরিদর্শন করেছি। পলগ্রাউন্ডের কাছে টাইগারপাস নিকটবর্তী জায়গায় একটা নার্সারি ছিল। সেখানে গোলাপসহ নানান প্রজাতির ফুল গাছ ছিল। সেখানের সেই ফুলগুলোর ঘ্রাণ যেন এখনও পাচ্ছি ! শৈশবে প্রাই সেই ফুল দেখতে যাইতাম !
লেখক: গল্পকার