নিজস্ব প্রতিবেদক: চলে গেলেন স্বাধীনতার অন্যতম সংগঠক বরেন্য রাজনৈতিক শাহজাহান সিরাজ (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মঙ্গলবার মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটায় রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে মারা যান। তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।
বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান গণমাধ্যমকে বলেন, শাহজাহান সিরাজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটায় রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন ক্যানসারে ভুগছিলেন। সোমবার শরীর খারাপ হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শাহজাহান সিরাজ বিএনপি ক্ষমতা থাকা অবস্থায় মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেছিলেন। এ ছাড়া দলের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেছেন।
১৯৭১ সালের ১ মার্চ তিনি সিরাজুল আলম খান, শেখ ফজলুল হক, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, আবদুল কুদ্দুস মাখন, নূরে আলম সিদ্দিকী, আ স ম আবদুর রব প্রভৃতি ছাত্রনেতাদের পাশাপাশি স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন।
১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন আ স ম আবদুর রব। সেখান থেকেই পরবর্তী দিনে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠের পরিকল্পনা করা হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩ মার্চ ১৯৭১ পল্টন ময়দানে বিশাল এক ছাত্র জনসভায় বঙ্গবন্ধুর সামনে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেছিলেন শাজাহান সিরাজ।
এরপর যুদ্ধ শুরু হলে তিনি সশস্ত্র যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ‘বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স’ (বিএলএফ) বা মুজিব বাহিনীর কমান্ডার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান সিরাজের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
শাহজাহান সিরাজের মৃত্যুতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শোক জানিয়েছেন। গণফোরামের সভাপতি কামাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন।
শাহজাহান সিরাজের জন্ম ১৯৪৩ সালের ১ মার্চ টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে, তার বাবার নাম আব্দুল গণি মিয়া ও মারহিমা বেগম।
ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় শাহজাহান সিরাজের। ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত টাঙ্গাইলের করটিয়া সাদত কলেজ ছাত্র সংসদের দুই বার ভিপি ছিলেন তিনি।
ঊনসত্তরের গণআন্দোলনের পর উত্তাল সময়ে ছাত্রলীগের নেতৃপর্যায়ে চলে আসেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের আগে ১৯৭০ সালে তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
তখন ছাত্র আন্দোলনের পুরোধা হিসেবে ছাত্রলীগের যে চারজনকে ‘চার খলিফা’ বলা হত, তাদের একজন হলেন শাহজাহান সিরাজ। স্বাধীনতার পরে ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ প্রতিষ্ঠা হলে তিনি সংগঠনটির কেন্দ্রিয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে আশির দশকে জাসদ ভেঙে গেলে তিনি একাংশের সভাপতি নির্বাচিত হন।