নাজনীন তৌহিদ
ভারি মিষ্টি একটি মেয়ের নাম খুকু। ওরা গাছপালা ঘেরা সুন্দর একটি বাংলোতে বাস করত। ওদের বাংলোটার সামনে সবুজ ঘাসের কার্পেট বিছানো ছোট একটি লন ছিল আর তার চারিপাশ জুড়ে ছিল নানা রং এর ফুল গাছ।
সেখানে একটি দোলনা ছিল। তার পাশে ছিল বড় একটি আমগাছ। সে গাছে যখন আমধরত তখন কত যে টিয়ে পাখি আম খেতে আসত তা যদি তোমরা দেখতে তবে খুকুদের বাড়িতেই থেকে যেতে।
ঝড়ের দিনে যখন টুপটাপ করে আম পড়ত খুকু তা কুড়িয়ে নিত। একদিন হল কী, খুকুর সাথে ভাব জমাতে পাশের বাড়ির একটি বেড়াল এল। খুকু তাকে খেতে দিল, আদর করল। এ ভাবে বেড়ালটার সাথে ওর খুব ভাব হয়ে গেল।
খুকু যখন স্কুলে যায় ও তখন লনে চুপচাপ কাত হয়ে শুয়ে খুকুর জন্য অপেক্ষা করে। বেড়ালটা বেশি দৌড়াতে পারেনা। কেন জানো ? তোমাকে তো বলাই হয়নি কেমন করে যেন ওর একটি পা ভেঙে গিয়ে ছিল। ও খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটত বলে পাশের বাড়ির কেউ ওকে আদর করতনা। কিন্তু খুকু ওকে অনেক আদর করত। একদিন ডাক্তার আঙ্কেলকেও ওর পাটা ভাল করার জন্য বলে ছিল। কিন্তিু ডাক্তার বলেছিলেন ওটা ভাল হবেনা। কি আর করার তবু সেই বেড়াল মানে মিনিকে নিয়ে খুকুর মজার দিন কাটছিল।
একদিন খুকু স্কুল থেকে এসে দেখল বড় বড় ট্রাকে করে বাড়ির মালপত্র তোলা হচ্ছে। ওর বাবা বলল, ওরা নাকি এর চেয়েও সুন্দুর একটি জায়গায় যাচ্ছে। সেখানে ওর বাবার পোষ্টিং হয়েছে, যেতে তো হবেই, বাবাযে সরকারি চাকরি করেন। এ বাড়িটির আগেও ওরা অন্য একটি বাড়িতে ছিল। কিন্তু এ জন্য খুকুর যে মন খারাপ হচ্ছে না তা নয়। এই আমগাছ, টিয়েপাখি, দোলনা, ফুলগাছ ছেড়ে যেতে ওর মন খারাপ হচ্ছে ঠিকই তবে সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগছে মিনির জন্য। ও তো মিনির জন্য কেঁদেই দিল। ীভষণ
মিনি চুপচাপ ওর পায়ের কাছে এসে বসে আছে। বাবার উপর খুকুর ভীষণ রাগ হল, বাবা কেন মিনিকে একটুও ভালবাসেননা, কেন ওকে সাথে নিতে চাইছেননা ? খুকু তখন ভীষণ কাঁদতে লাগল।
মা বললেন, ওরা এখন অনেক দূরে যাবে, সেখানে বাংলো থাকবেনা ওখানে ফ্ল্যাট বাড়ি। সেই উচুঁ ফ্ল্যাটে মিনির একটুও মনটিকবেনা। কেননা মিনিতো ছেলেবেলা থেকে এই খোলা গাছপালা আর বাড়ি দেখেছে।
খুকু তবু চিৎকার করে বাবাকে বলল, মিনি আমার সাথেই ফ্ল্যাট থাকবে, ঘুমাবে, ওকে আমি চাই-ই চাই। ওতো বেশি দৌড়াতে পারেনা। ও চলে গেলে দুষ্ট ছেলেদের কেউ যদি মিনিকে মারে ! বাবা শেষে গাড়ি ষ্টার্ট দেবার সময় মিনিকে কোলে নিয়ে গাড়িতে তুলে দিলেন।
ওমা ! মিনিতো গাড়ি দেখে ভয় পেয়েছে। মা তো ঠিকই বলেছেন, মিনি কিছুতেই যাবেনা । কী হাউমাউ করে কান্না ! তারপর গাড়ি থেকে লাফিয়ে নেমে গেল।
কী আর করার, খুকু কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল। মা আদর করে বললেন, আমরা কিছু দিন পর পর এসে মিনিকে দেখে যাব।
কিন্তু এরপর খুকু যখন এল মিনির আর দেখা পেলনা। কেননা খুকু চলে যাবার পর মিনি ওই দোলনার নিচে বসে বসে খুকুর জন্য অপেক্ষা করতে করতে একদিন মরেই গেল।
তোমাদেরও নিশ্চয়ই মিনির জন্য কান্না পাচ্ছে। তবে কোন পশুপাখিকে কষ্ট দেবেনা আদর করবে কেমন !
লেখক : উপ সম্পাদক, বিজয় প্রতিদিন