দুখু মিয়া

কবিতা

0
1192

কবি মাহাবুবা লাকি

আসানসোলের দুখুমিয়া
বাংলার নজরুল 
কবি বলে বুকে তুলে নিয়ে 
বাঙালি করেনি ভুল।

অভাবে -স্বভাবে লেখায় ছিলেন 
দিনরাত মশগুল
প্রেমের দেবতা,প্রেমের পূজারী
বাহারী কোঁকড়া চুল।

বঙ্গবন্ধু বুকে দিলেন ঠাঁই 
এলেন বাংলাদেশে
বিদ্রোহী কবি ঘুমিয়ে আছেন 
মসজীদ আছে পাশে।

তোমার গানের ছন্দ-বাণীতে
বিশ্ব অবাক হয়
জাতীয় কবি তো–নজরুল তুমি 
বঙ্গ করেছ জয়।

তোমার রচনা, চিন্তা -চেতনা 
আমাদের করে ধন্য
তোমার তুলনা তুমি নজরুল 
পৃথিবীতে অনন্য!


সম্মান ও গৌরবে বিদ্রোহী কবি আমাদের চিরকালীন সত্তা। মানবের জন্য তিনি যে সাম্যের গান গেয়ে গেছেন আমরা সেই আলোর দিশারি আজ ও।

রামমোহন-ডিরোজিও-বিদ্যাসাগর এই দেশে যে নব জাগরণের সূচনা করে গিয়েছিলেন, তার দুই যোগ্য উত্তরসূরি রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল।তাঁরা উভয়েই ব্রিটিশ শাসিত বঙ্গে এমন এক সময়ে জন্মেছিলেন,যখন সারা দেশে স্বাধীনতা আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ছে।আর ধুরন্ধর শাসকেরা তাদের বিপথে চালিত করার জন্য যে বিভেদ নীতি শুরু করেছিল,জনমনে ও জাতীয় নেতৃত্বের মধ্যে তার বেশ প্রভাব পড়া শুরু হয়েছিল।
রবীন্দ্রনাথ জন্মেছিলেন কলকাতার জোড়াসাঁকোতে এক জমিদার বাড়িতে।আর নজরুল জন্মেছিলেন বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার অখ্যাত গ্রাম চুরুলিয়াতে,এক গরিব কাজী পরিবারে। তিনি ছিলেন যথার্থই ‘দুখু মিঞা’। ৯ বছর বয়স পূর্ণ হবার আগেই পিতৃহারা হয়ে দুখু কাজ করেছেন মসজিদের মোয়াজ্জিন ও কবরের সেবক, মক্তবের শিক্ষক, রেলের গার্ডের খানসামা,রুটির দোকানের সহকারী,লেটোর দলের গায়ক,৪৯ নম্বর বেঙ্গল রেজিমেন্টের হাবিলদার হিসাবে।পরে তিনি হয়েছেন সংবাদপত্রের সম্পাদক, রেডিওতে সঙ্গীত পরিচালক এবং খ্যাতিমান কবি ও সাহিত্যিক।
রবীন্দ্রনাথের জন্মের ৩৮ বছর পরে (১১জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬) নজরুলের জন্ম।উভয়ের জন্ম মে মাসে এবং মৃত্যু আগষ্টে। নজরুল যখন সাহিত্য জগতে সবে পা ফেলছেন, তখন এশিয়ার মধ্যে সাহিত্যে প্রথম নোবেল পুরস্কার পেয়ে খ্যাতির চূড়ায় আছেন বিশ্বকবি। সাহিত্য ও সঙ্গীত জগত আলো করে আছেন সত্যেন্দ্রনাথ,শরৎচন্দ্র, দ্বিজেন্দ্রলাল, অতুলপ্রসাদ ‌প্রমুখ দিকপালেরা।
এর মধ্যে ধূমকেতুর মতো আবির্ভূত হয়ে অজস্র ধারায় কাব্য, সঙ্গীত সৃষ্টি করে নজরুল সকলকে অভিভূত করলেন। নজরুল ও রবীন্দ্রনাথ ছাড়া জীবিতকালে এত খ্যাতি কাব্য ও সঙ্গীত জগতে আর কেউ পাননি।

জীবনের নিয়মে জীবন চলে এই ধারাবাহিকতায়।
বিদ্রোহী কবির ২২বছর বয়সে বিয়ে হয় কুমিল্লার দৌলতপুরের রূপবতী, বিত্তশালিনী সৈয়দা খাতুন বা নার্গিস আসার খানকের সঙ্গে। কিন্তু নজরুল বিয়ের শর্ত হিসাবে ঘরজামাই থাকতে অস্বীকার করেন অতঃপর বাসর সম্পন্ন হবার আগেই সেখান থেকে চলে যান।এরপর প্রায় ২৫ বছর বয়সে তাঁর পুনরায় বিয়ে হয় কুমিল্লার আশালতা সেনগুপ্ত বা প্রমীলার সাথে। প্রমীলার ডাক নাম ছিল দোলন। প্রেমে বিভোর হয়ে নজরুল লিখলেন কাব্যগ্রন্থ ‘দোলন চাঁপা’।
কবিকে পারিবারিক জীবনে বহু শোক সহ্য করতে হয়েছে। 
 কবি বলতেন..”ধর্মের বা শাস্ত্রের মাপকাঠি দিয়ে কবিতাকে মাপতে গেলে ভীষণ হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। ধর্মের কড়াকড়ির মধ্যে কবি বা কবিতা বাঁচেও না, জন্মলাভও করতে পারে না।তার প্রমাণ আরব দেশ। ইসলাম ধর্মের কড়াকড়ির পর থেকে আর সেদেশে কবি জন্মাল না।”
নজরুলের চার ছেলের নামের মধ্যেও মৌলবাদীদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে আছে সম্প্রীতির পরিচয়। তাঁর প্রথম ছেলের নাম কৃষ্ণ মহম্মদ (শৈশবে মৃত), দ্বিতীয় ছেলের নাম অরিন্দম খালেদ ওরফে বুলবুল (চার বছর বয়সে বসন্ত রোগে মৃত), তৃতীয়জনের নাম কাজী সব্যসাচী, চতুর্থজন কাজী অনিরুদ্ধ।
আমাদের চেতনায় বেঁচে থাকুক নজরুল, আমরা সাম্যের গানে হই সবাই আগুয়ান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here